হজ্ব ব্যবস্থাপনা এককভাবে সৌদি আরবের নিয়ন্ত্রণে এবং তা প্রায় গত শত বছর থেকে। হজ্বযাত্রীদের কল্যাণে সৌদি সরকার যে খুবই আন্তরিক তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু সা¤প্রতিককালে হজ্ব ব্যবস্থাপনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত হজ্বযাত্রীদের মাঝে অসন্তুষ্টির ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ অসন্তুষ্টি জেদ্দা হজ্ব টার্মিনাল এবং পবিত্র মক্কা ও পবিত্র মদিনা কেন্দ্রিক হজ্বের যাবতীয় কার্যক্রম নিয়েই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত হজ্বযাত্রীরা কতটুকু প্রতিক‚লতার সম্মুখীন হচ্ছেন তা মনে হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভালোভাবে জানা নেই। এর পরিপ্রেক্ষিতে অসন্তুষ্টি তিনদফা প্রস্তাব যোগ করছি।
(১) হজ্বযাত্রীদের কাছ থেকে ট্যাক্স নেয়াও ফেরত দেয়া: গত ২০১৫ ও ১৬ খ্রিস্টাব্দে যারা হজ্ব করেছেন ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে ঐ হজ্বযাত্রীদের থেকে জনপ্রতি দুই হাজার রিয়াল করে ট্যাক্স নেয়া হয়। এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ রিয়াল ফেরৎ দেয়া উচিত, যেহেতু হজ্ব কার্যক্রমে কোটা নির্ধারিত করা আছে। কোটার অভ্যন্তরে থেকে হজ্বযাত্রী গমন করলে তা স্ব-স্ব দেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এখানে ট্যাক্স আদায় করা অমানবিক। এ রিয়াল ফেরৎ দিতে বিনীত নিবেদন রাখছি।
(২) জেদ্দা হজ্ব টার্মিনাল জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করা: জেদ্দা হজ্ব টার্মিনাল লক্ষ লক্ষ হজ্বযাত্রীর জন্য চরম প্রতিক‚ল অবস্থার সৃষ্টি করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হজ্বযাত্রীরা দ্বিতল বিশিষ্ট টার্মিনাল ভবনে ঢুকে কড়া এসিতে কনকনে ঠান্ডার মধ্যে পড়ে। এখানে টয়লেট ব্যবস্থা অপ্রতুল। তেমনি অপ্রতুল যাত্রী অনুপাতে চেয়ার সংখ্যাও। বিদেশ থেকে আগত হাজীদের টয়লেটে গিয়ে লাইন ধরতে হয়। ইমিগ্রেশনের পর হাজীরা যখন মূল ভবন থেকে বাইরের চত্বরে আসেন তখন ৩৭/৩৮ ডিগ্রি থেকে ৪৪/৪৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় দগ্ধ হতে থাকেন। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত লক্ষ লক্ষ হাজী চরম প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখীন হন। এখানে একাধিক ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হয় বাসে উঠার জন্য। হজ্ব টার্মিনালে বিশাল চত্বরে বসার ব্যবস্থা অপ্রতুল, যা আছে তাও মানসম্পন্ন নয়।
হজ্বের পর দেশে ফিরতে ৭/৮ ঘণ্টা আগে হজ্ব টার্মিনালে রিপোর্ট করতে পরিশ্রান্ত হাজীরা আবারও বাস থেকে নেমে প্রচন্ড গরমের মধ্যে প্রতিক‚ল অবস্থায় পড়ে। বাংলাদেশসহ অনেক দেশের হাজীরা অনভ্যস্থ বিধায় গরমে ছটফট করতে থাকেন। অবস্থাভেদে অনেক দূরত্বে ইমিগ্রেশনের দিকে যেতে ট্রলি পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে।
ইমিগ্রেশনের দূরত্ব অধিক হওয়ায় বিশ্বের বড় বড় বিমান বন্দরের মানসম্পন্ন টার্মিনাল না থাকা, দেশে ফিরবার সময়ও যাত্রী অনুপাতে বসার ব্যবস্থা না থাকা, টয়লেট স্বল্পতা তথা নানান দুর্ভোগ পেরিয়ে হজ্বযাত্রীগণকে বিমানে উঠতে হয়।
(৩) মসজিদুল হারাম দ্রুত স¤প্রসারণ করা: হজ্বে ও রমজানে পবিত্র মক্কায় মসজিদুল হারমে নামাজ পড়তে গিয়ে গত ক’বছর থেকে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। এর মূলে মসজিদুল হারাম পরিকল্পিতভাবে স¤প্রসারণ না হওয়া। মূল মসজিদে হারাম পুনঃ নির্মাণ কাজ সমাপ্তির পথে। গত প্রায় দু’বছর থেকে পূর্ণাঙ্গ সমাপ্তির অবশিষ্ট কাজ বন্ধ রয়েছে। জানি না, তার কারণ কী হতে পারে। পশ্চিম দিকে স¤প্রসারণ মানানসই, গ্রহণযোগ্য। উত্তর দিকে স¤প্রসারণ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল মসজিদুল হারামের চতুর্দিকে স¤প্রসারণে মহা পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ শুরু করা। কিন্তু তা হয়নি। আমাদের বিনীত নিবেদন থাকবে, মসজিদুল হারামের চতুর্দিকের স¤প্রসারণের কাজ সম্পন্ন করা হোক। মসজিদুল হারামের মাত্র ১০০/১৫০ মিটারের মধ্যে জমজম টাওয়ার, হিলটন টাওয়ার, দার আল তৌহিদ হোটেল কোন মতেই গ্রহণযোগ্য নয়। মাত্র কয়েক হাজার লোকের আরামের জন্য মসজিদুল হারামের একদম গায়ের উপর এ তিনটি হোটেল থাকতে পারে না। সাফা পাহাড় সংলগ্ন জবলে আবু কুবাইসের উপর ৫/৭টি রাজ প্রাসাদ গ্রহণযোগ্য নয়। রাজ প্রাসাদ থাক, কিন্তু তা আরও দক্ষিণে সরিয়ে নেয়া উচিৎ।
স¤প্রসারিত বাদশাহ ফাহাদ হেরেমের অনুসরণে চতুর্দিকে মসজিদুল হারাম স¤প্রসারণ করা অত্যন্ত জরুরি। এরপর থাকবে পবিত্র মদিনায় মসজিদে নববীর মত উপরে ছাতা দিয়ে সুন্দর চত্বর। এরপর হজ্ব ও ওমরাকারীদের জন্য হোটেলাদি। দুঃখের বিষয়, পবিত্র মকায় মসজিদুল হারামে যা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ অপরিকল্পিত।
লেখক: সভাপতি, হজ্বযাত্রী কল্যাণ পরিষদ, চট্টগ্রাম
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন