শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাস্থ্য

শিশু-কিশোরদের ডায়াবেটিস

| প্রকাশের সময় : ১২ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

শৈশবে যেসব অসুস্থতা শিশুর মানসিক ও শারীরিক বৃদ্ধিকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে ডায়াবেটিস মেলাইটাস তার মধ্যে অন্যতম। শরীরের কোষগুলোকে বেঁচে থাকতে ও জৈবনিক বিক্রিয়াগুলো পরিচালিত করতে শক্তি দরকার হয়; যা কোষগুলো গøুকোজ থেকে পায়। অগ্নাশয় থেকে নিঃসৃত হরমোন ইনসুলিন রক্তে গøুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং কোষের ভেতরে গøুকোজের প্রবেশ ও কোষে এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে। ইনসুলিন ছাড়া বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। যদি কোন কারণে দেহে ইনসুলিনের পরিমাণ কমে যায় বা ইনসুলিন ঠিকমতো কাজ করতে না পারে তবে গøুকোজ দেহকোষের বাইরে জমা হয় এবং একটা সময় পর এই গøুকোজ প্রসাবের সঙ্গে বের হয়ে আসতে থাকে। অধিকাংশ শিশুর ডায়াবেটিস হয় অগ্নাশয়ের প্রয়োজনীয় পরিমাণ ইনসুলিন তৈরি করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে (টাইপ-১)। এক্ষেত্রে অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষগুলো অটোইমিউন প্রতিক্রিয়ার কারণে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। এছাড়া ইনসুলিন যথেষ্ট পরিমাণে নিঃসৃত হওয়ার পরও যদি তার মাধ্যমে কাজ করতে না পারে তাহলে ডায়াবেটিস (টাইপ-২) হয়। এসব রোগীর দেহে ইনসুলিনের বিপক্ষে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। আবার কিছু শিশু-কিশোর টাইপ-১ ও টাইপ-২ উভয় প্রকার ডায়াবেটিসেই একসঙ্গে আক্রান্ত হয়। এছাড়াও জিনগত কিছু ত্রæটির কারণে কম বয়সি শিশু-কিশোরদের ডায়াবেটিস হয়। জীবনঘাতী জটিলতা এড়ানোর জন্য রোগের শুরুতেই চিকিৎসা শুরু করে দিতে হবে। আমাদের দেশে যেসব শিশু-কিশোর ডায়াবেটিসে ভোগে, তাদের বেশিরভাগই ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা নিয়েই প্রথমবার চিকিৎসকের কাছে যায়Ñ এর ফল যথেষ্ট ভাল হয় না।
সঠিক চিকিৎসা ও সুশৃঙ্খল জীবনযাপন ও পরিমিত পুষ্টি নিশ্চিত করতে পারলে ডায়াবেটিস আক্রান্ত শিশু-কিশোররাও প্রায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। তাই এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন থাকা জরুরি।
লক্ষণসমূহ: ঘন ঘন প্র¯্রাব হওয়া এবং এর পরেই পানি পিপাসা পাওয়া, ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া তা সত্বেও ওজন বৃদ্ধি না হওয়া বা কমে যাওয়া, সাম্প্রতিক সময়ে রাত্রে প্র¯্রাবের জন্য উঠা বা বিছানায় প্র¯্রাব করা। যৌনাঙ্গের আশে-পাশে ফাঙ্গাল ইনফেকশন হওয়া, ঘন ঘন ত্বকে জীবাণুর সংক্রমন হওয়া, দূর্বল লাগা, খেলা-ধুলায় অনাগ্রহ ইত্যাদি প্রধানতম লক্ষণ হতে পারে। টাইপ-১ ডায়াবেটিসে লক্ষণগুলো সাধারণত: বেশ দ্রæত দেখা দেয়। অনেক সময় এতটাই দ্রæততরভাবে রোগ বিস্তার লাভ করে যে, চিকিৎসা শুরুর আগেই ডায়াবেটিস কিটোঅ্যাসিডোসিস নিয়ে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দরকার হতে পারে। আর যাদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস বা অন্য কোন ধরণের ডায়াবেটিস হয় তাদের উপরিউক্ত লক্ষণগুলোর কোন তীব্রতা নাও থাকতে পারে বা অনুপস্থিত থাকতে পারে।
রোগ নির্ণয়: সারা পৃথিবীব্যাপী ডায়াবেটিস শনাক্তকরণের জন্য যে ক্রাইটেরিয়া বা মানদন্ড ব্যবহার করা হয়, তাহলো আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের ডায়াবেটিস নির্ণয় ক্রাইটেরিয়া। ক্রাইটেরিয়া নি¤œরূপ:-
টেবিল-অউঅ:
ডায়াবেটিস স্ক্রিনিং
টাইপ-১: যে সমস্ত ছেলে-মেয়ের রক্তের গøুকোজ বৃদ্ধি পেয়েছে বা ডায়াবেটিসের সুনির্দিষ্ট লক্ষণ আছে, তাদেরকে গøুকোজ খেয়ে ডায়াবেটিসের পরীক্ষা (ঙএঞঞ) করে ডায়াবেটিস আছে কিনা শনাক্ত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ঐনঅ১ঈ কোন সহায়ক পরীক্ষা নয়।
টাইপ-২: প্রি-ডায়াবেটিস ও টাইপ-২ ডায়াবেটিস শনাক্তকরণের জন্য ঐনঅ১ঈ একটি সহজসাধ্য পরীক্ষা। তবে টেবিল-অউঅ-এর যে কোন একটি পরীক্ষায় ব্যবহার করা যেতে পারে। শিশু-কিশোরদের ডায়াবেটিস স্ক্রিনিং এর আওতায় আনার ক্ষেত্রে নি¤œলিখিত বিষয়গুলো বিবেচ্য। ১। যাদের দৈহিক স্থ‚লতা আছে (বিএমআই ৮৫ শতাংশের বেশি, বয়স ও লিঙ্গ বিবেচনায়; অথবা ১২০ শতাংশের বেশি) এর সাথে নি¤œলিখিত যে কোন দুইটি বিষয় উপস্থিত থাকতে হবে। ক) বাবা-মা, ভাই-বোন কারো যদি টাইপ-২ ডায়াবেটিস থাকে। খ) অতিরিক্ত ডায়াবেটিসের ঝুঁকিময় জনগোষ্ঠী (দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার, ভ‚মধ্য সাগরীয় ও আফ্রিকা)। গ) ইনসুলিন অকার্যকারীতার শারীরিক লক্ষণ থাকলে (ঘাড়ে-গলায় কালোদাগ, উচ্চ রক্তচাপ, পলিসিস্টিক ওভারী সিনড্রোম, রক্তের লিপিডের অস্বাভাবিকতা ও ছোট আকৃতি নিয়ে জন্ম গ্রহন করা। ঘ) মায়ের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস থাকলে। ১০ বছর বয়স থেকে শিশু-কিশোরদের এর আওতায় আনতে হবে। যাদের পরীক্ষার ফলাফল স্বাভাবিক হবে, তাদেরকে প্রতি তিন বছরে একবার করে পরীক্ষাটি করতে হবে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের পরীক্ষা (ঐনঅ১ঈ) : ডায়াবেটিস নির্ণয়ের প্রচলিত পরীক্ষাগুলো সর্ম্পকে আমাদের মোটামুটি জানা হয়েছে। চিকিৎসকগণ প্রয়োজন মত সকালে নাস্তার আগে, নাস্তার দু’ঘন্টা পর বা দিনের যে কোন সময় এবং বিশেষ বিশেষ প্রয়োজনে ৭৫ গ্রাম গøুকোজ ২০০-৩০০ মিলিলিটার পর্যন্ত পানিতে মিশিয়ে পান করানো এবং এর আগে ও ২ ঘন্টা পরে রক্ত নিয়ে তাতে গুকোজ (শর্করা) এর পরিমান দেখে কোন লোকের ডায়াবেটিস আছে কিনা তা দেখেন। একই সাথে প্রস্রাবে গøুকোজ যায় কিনা তাও দেখা হয়। এক সময় প্রস্রাবে গøুকোজ যাচ্ছে কি না তা দেখেই সিদ্ধান্ত নেয়া হত । আজ তা গুরুত্ব হারিয়েছে। এসব পরীক্ষা করে কোন লোকের ডায়াবেটিস ঐ বিশেষ সময়টা তে আছে কি না তা জানা যায়। কিন্তু নিকট অতীতে তার রক্তের গøুকোজ সঠিক মাত্রায় ছিল কিনা বা ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ছিল কিনা তা জানা যায় না। সা¤প্রতিক কালে নূতন একটি পরীক্ষা পদ্ধতি প্রচলিত হয়েছে যার মাধ্যমে সর্বোচ্চ গত চার মাসের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের হিসাব পাওয়া যাবে। এ টেস্টটির নাম হল গøাইকোসিলেটেড হিমো-গেøাবিন বা হিমোগেøাবিন এ১সি। চিকিৎসা ক্ষেত্রে এ পরীক্ষাটি ব্যাপক ভাবে সমাদৃত হচ্ছে। আমাদের দেশের অনেক ল্যাবরেটরীতে এ পরীক্ষাটি অহরহই হচ্ছে। ২০১১ সনের শুরু থেকে এই পরীক্ষাটি ডায়াবেটিস নিরুপনের একটি গুরুত্বপূর্ন পরীক্ষা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
গøাইকোসিলেটেড হিমোগেøাবিন (ঐনঅ১ঈ) কী? : মানুষের রক্তের লোহিত কনিকা বা জইঈ- র অন্যতম গাঠনিক উপাদান হল হিমোগেøাবিন। এ হিমোগেøাবিনের জন্য রক্ত লাল এবং এটি দেহের ভিতরে অক্সিজেন পরিবহনের খুব গুরুত্বর্পূণ বাহক। এ হিমোগেøাবিনের সাথে গøুকোজ লেগে থাকতে পারে এবং এর জন্য কোন এনজাইমের প্রায়োজন পড়ে না। এরূপ গøকোজ লেগে থাকা হিমোগেøাবিনকে গøাইকোসিলেটেড হিমোগেøাবিন (ঐনঅ১ঈ) বলে। রক্তে গøুকোজের পরিমান যত বেশি হবে গøাইকোসিলেটেড হিমোগেøাবিনের পরিমানও তত বেশি হবে। হিমোগেøাবিনের সাথে লেগে থাকা গøকোজ ঐ লোহিত কনিকা যতদিন বেঁচে থাকে ততদিনই লেগে থাকবে। যেহেতু লোহিত কনিকা প্রায় ১২০ দিন (চার মাস) বেঁচে থাকে তাই এ পরীক্ষটি করে আমরা ডায়াবেটিস রোগীর গত প্রায় চার মাসের ডায়াবেটিসের অবস্থার (রক্তে গøুকোজের পরিমাপের) হিসাব পাব। আর এ গøাইকোসিলেটেড হিমোগেøাবিনের পরিমান সাময়িক অন্যান্য সমস্যা (যেমন মানসিক অবস্থা, খাওয়া দাওয়া, শারীরিক শ্রম, বা অন্যান্য ওষুধের প্রভাবে) পরিবর্তিত হয় না ।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যমাত্রা : দ্রæত নির্ণয়ের পাশাপাশি ডায়াবেটিসের সঠিক নিয়ন্ত্রণ ডায়াবেটিস জনিত জটিলতা প্রতিরোধে সাহায্য করে। এ ব্যাপারে রক্তের গøুকোজ নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও রক্তের চর্বি, ওজন, রক্তচাপ নির্দিষ্ট মাত্রার ভিতর রাখা জরুরী।
নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যমাত্রা হলো:

ষ ডাঃ শাহজাদা সেলিম
সহকারী অধ্যাপক
এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ
কমফোর্ট ডক্টর’স চেম্বার, ১৬৫-১৬৬, গ্রীনরোড, ঢাকা।
ফোন ঃ ৮১২৪৯৯০, ৮১২৯৬৬৭, ০১৭৩১৯৫৬০৩৩

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন