শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিবন্ধ

বাঁধন যেন না ছেঁড়ে

আল ফাতাহ মামুন | প্রকাশের সময় : ১৪ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

জীবনকে উন্নত করতে আর সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমরা ছেড়েছি স্বজন-আপনজনদের। বেছে নিয়েছি শহুরে বন্দি জীবন। যেখানে শুধু স্বার্থপরতা আর নির্দয় হৃদয়েরই চর্চা হয়। তাইতো বছরের পর বছর চলে যায় গ্রামের ছোট্ট কুটিরে জীর্ণদেহের বৃদ্ধ মা কিংবা অসুস্থ বাবার খোঁজ নেওয়া হয় না। দরিদ্র ভাই, অভাবী বোনকে একটা ফোনও করি না এই ভয়ে, না জানি আমার কাছে কিছু চেয়ে বসে। ফুফু-খালা, মামা-চাচাদের নামও জানে না এই প্রজন্মের অনেক সদস্য। কে কোথায় থাকে এতো রীতিমত ভিনগ্রহের অজানা খবরের চেয়েও বেশি অজানা তাদের কাছে। হায়! এ যে মনুষত্বের সবচেয়ে বড় লজ্জা।
বেশি দিন আগের কথা নয়। এ দেশ ছিলো একান্নবর্তী পরিবারের দেশ। নানান অসুবিধা থাকায় এখন আমরা একক পরিবারের দেশ হয়ে উঠছি। প্রশ্ন হলো, একক পরিবার হয়েও কী আমরা সুখী হতে পেরেছি? পেরেছি সভ্য হতে? না, পারিনি। বরং আমাদের মাঝে স্বার্থপরতা, লোভ, খাই-খাই মনোভাব মাথাচাড়া দিয়েছে আশংকাজনকভাবে। তাইতো এখন একক পরিবার হয়ে উঠছে আরো ‘একক’। এখানে নেই কোন নিরাপত্তা। ভালোবাসা-মায়া-মমতা। স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মা, ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন কেউই কারো কাছে নিরাপদ নয়। স্বার্থে আঘাত লাগা মাত্রই একজন আরেকজনকে খুন করে ফেলছে। এরকম হওয়ার অনেকগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম কারণ হলো, পারিবারিক সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি এবং প্রেমের সঙ্গে আমাদের পরিচয় নেই। মানুষের মাঝে যখন স্নেহ-প্রেমের ঘাটতি দেখা দেয়, তখনই তার পক্ষে যে কাউকেই খুন করা সহজ হয়ে পড়ে।
আমি বলছি না, আবার আমাদেরকে একান্নবর্তী পরিবারের ফিরে যেতে হবে। এটা সম্ভবও নয়। শুধু বলতে চাই, আমাদের পারিবারিক বন্ধনগুলো দৃঢ় হোক। আত্মীয়তার রশিটি আরো মজবুত হোক। সন্তানকে তার চাচা-মামাদের সঙ্গে মেশার সুযোগ দেয়া হোক। শুধু ক্লাস আর পরীক্ষাই জীবন নয়, প্রেম-ভালোবাসাও বেঁচে থাকার বড় অনুষঙ্গ। একটি ঘটনা বলার লোভ সমলাতে পারছি না। সম্প্রতি আমার পরিচিত এক আত্মীয়ের বাবা মারা যান। পরদিন ছেলের টেস্ট পরীক্ষা। তাই তিনি ছেলেকে বাসায় রেখেই গ্রামে চলে যান। আমি অবাক হয়ে ভাবলাম, যে নানা নাতিকে এত আদর যত্ম করল, তাকে শেষবারের মতো দেখার চেয়ে টেস্ট পরীক্ষা বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলো। আরো অবাক করা বিষয় হল, ছেলের মনেও নানার চেয়ে পরীক্ষার মায়াই বেশি দেখলাম। তার নানা যে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে, চাইলেই আর কখনো নানাকে দেখতে পারবে না- এ অনুভ‚তিটুকুও জাগেনি ইন্টার পড়–য়া কিশোরটির হৃদয়ে।
যে বাবা-মা সন্তানের কানে সেরা হওয়ার সবক দিচ্ছেন, তারা কি একবারের জন্যও সেবা করার কথাটি বলতে পারেন না? তাহলে তো আর আমাদের দেশে বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা দিন দিন বাড়ত না।
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন