শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিবন্ধ

নবাব স্যার সলিমুল্লাহ : ইতিহাসের দ্যুতিময় ব্যক্তিত্ব

আতিকুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১৬ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

১. ঢাকার নবাব পরিবারে ১৮৭১ সালের ৭ জুন সলিমুল্লাহ জন্মগ্রহণ করেন। পিতা নবাব আহসান উল্লাহ ব্রিটিশ, জার্মান, ফার্সি ও উর্দু গৃহশিক্ষকদের তত্ত¡াবধানে সলিমুল্লাহর শিক্ষা সম্পন্ন করেন। ১৮৯৩ সালে তিনি ডিপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদে নিযুক্ত হয়ে ময়মনসিংহে এবং ১৮৯৫ সালে বিহারের মুজাফফরাবাদে ও কিছুদিন ত্রিপুরায় দায়িত্ব পালন করে ইস্তফা দেন। এরপর তিনি ময়মনসিংহে অবস্থান করেন। ১৯০১ সালের ১৬ ডিসেম্বর টেলিগ্রাফ মারফত পিতা নবাব আহসান উল্লাহর ইন্তেকালের সংবাদ পেয়ে বিশেষ ট্রেনযোগে ঢাকায় ফিরে আসেন। দুই দিন পর জ্যেষ্ঠপুত্র বিধায় তিনি নবাব পদে অধিষ্ঠিত হন। ১৯০২ সালে ব্রিটিশ সরকার নবাব সলিমুল্লাহকে ‘কমান্ডার অব দ্য স্টার অব ইন্ডিয়া (সিএসআই) উপাধি দেয়। ১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি দিল্লির দরবার হলে নবাব সপ্তম অ্যাডওয়ার্ডের মুকুট পরিধানের রাজকীয় অনুষ্ঠানে সলিমুল্লাহকে ‘নবাব বাহাদুর’ খেতাবে ভ‚ষিত করা হয়।
২. ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার স্যাভেজ ঢাকায় একটি ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। এতে ব্যয় ধরা হয় এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। সরকার ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ করে। নবাব সলিমুল্লাহ বাকি এক লাখ টাকা ও জমি দান করলে ১৯০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ঢাকা স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং’। ১৯০৮ সালে নবাব সলিমুল্লাহ আরো অর্থ দান করে পিতার নামে স্কুলটির নামকরণ করেন ‘আহসান উল্লাহ স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং।’ ১৯৪৭ সালের পর স্কুলটি কলেজে উন্নীত হয়। মুসলিম লীগ সরকার ১৯৬২ সালে কলেজটির উন্নয়ন করে প্রতিষ্ঠা করে ‘পূর্ব পাকিস্তান প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়’ যা ছিল তদানীন্তন প্রদেশের প্রথম ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়। স্বাধীনতার পর এটির নামকরণ করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি’ (বুয়েট); নবাব সলিমুল্লাহর দান করা জমিতে বুয়েট প্রতিষ্ঠিত।
এতিম মুসলিম ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য ১৯০৮ সালে আজিমপুরে ২৮ বিঘা জমি দান করে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘নবাব সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানা’। লেখাপড়ার জন্য এতিমখানায় ছেলেদের জন্য একটি এবং মেয়েদের জন্য একটি করে দুটি স্কুল রয়েছে। শত শত এতিম ছেলেমেয়ের থাকা-খাওয়া, চিকিৎসা, পোশাক-পরিচ্ছদ ও লেখাপড়ার যাবতীয় ব্যয় নবাব সলিমুল্লাহ মৃত্যু পর্যন্ত নিজের পকেট থেকে খরচ করেছেন। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এই এতিমখানাটি বর্তমানে বিভিন্ন মানুষের দান করা অর্থে পরিচালিত হচ্ছে।
৩. আধুনিক বা পাশ্চাত্যের শিক্ষা থেকে বিভিন্ন কারণে বঞ্চিত থাকা মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষাবিস্তারে নবাব ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। যুগোপযোগী শিক্ষার অভাবকেই মুসলমানদের পশ্চাৎপদতার কারণ বলে তিনি বিশ্বাস করতেন। স্যার সৈয়দ আহমেদ উচ্চশিক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। কিন্তু নবাব সলিমুল্লাহর প্রাথমিক তথা গণশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা গভীরভাবে উপলব্ধি করতেন। ইম্পেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে কংগ্রেস নেতা গোপালকৃষ্ণ গোখলে ১৯১১ সালে ‘বাধ্যতামূলক অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা বিল’ উত্থাপন করে। ১৯১২ সালের ৩ মার্চ কলকাতায় অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত মুসলিম লীগের পঞ্চম অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে নবাব সলিমুল্লাহ তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ গোখলের বিলকে সমর্থন করে বক্তব্য রাখেন। বিলটি অনুমোদিত না হওয়ায় তা কার্যকর হয়নি।
৪. মানুষদের স্ব স্ব পেশায় যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জনের জন্য ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষাপদ্ধতি ও ভিন্ন ভিন্ন স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠার পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেন। সেই সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন পেশার জন্য স্বতন্ত্র পুস্তকাদি রচনা ও পাঠ্যসূচি প্রণয়নের পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ তার এই পরিকল্পনা অনুসরণ করছে। শিক্ষা পরিবেশে থেকে শিক্ষার্থীরা যেন উন্নত চরিত্র গঠনের সুযোগ পায় সে জন্য আলীগড় কলেজ হোস্টেলের মতো ঢাকায় একটি মুসলিম ছাত্রাবাস নির্মাণের জন্য এক লাখ ৮৬ হাজার টাকা দান করেন। এর পূর্বে বঙ্গে ছাত্রাবাস নির্মাণ করার চিন্তাও কেউ করতে পারেননি। তা ছাড়া ঢাকার বিভিন্ন স্কুল, মাদরাসা ও মুসলিম বোর্ডিংয়ের জন্য ১৯০৫ সালেই তিনি লক্ষাধিক টাকা দান করেন।
৫. ১৯১২ সালের ৩১ জানুয়ারি লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠান দাবি মেনে নেয়ার পূর্ব পর্যন্ত নবাব সলিমুল্লাহ প্রস্তাবিত আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলসভাবে কাজ করেন। আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসতে ভারতের বিভিন্ন নবাব ও মুসলিম জমিদারসহ বিশিষ্ট মুসলিম নেতৃবৃন্দের সঙ্গে নবাব সলিমুল্লাহ যোগাযোগ রক্ষা করতেন। ১৯১১ সালের ১৫ ও ১৬ মার্চ নবাব সলিমুল্লাহর সভাপতিত্বে তার বাসভবন আহসান মঞ্জিলে অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক লীগের অধিবেশনে প্রস্তাবিত আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য চাঁদা সংগ্রহ করতে নবাব সলিমুল্লাহকে প্রেসিডেন্ট এবং রেভিনিউ বোর্ডের জুনিয়র সচিব মুহীবুদ্দিনকে সেক্রেটারি করে ‘পূর্ববঙ্গ আসাম প্রাদেশিক চাঁদা সংগ্রহ কমিটি’ গঠন করা হয়। এই কমিটির অন্যতম সদস্য শওকত আলী ও ধনবাড়ীর জমিদার সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর সহযোগিতায় নবাব সলিমুল্লাহর ১৯১১ সালের আগস্ট মাসের মধ্যে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা চাঁদা সংগ্রহ করে আলীগড়ে প্রেরণ করেন। স্যার সৈয়দ আহমেদ (১৮১৭-১৮৯৮) ১৮৭৫ সালে আলীগড় স্কুল এবং ১৮৭৭ সালে আলীগড় কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। তার মৃত্যুর ২২ বছর পর বাংলাসহ ভারতের বিশিষ্ট মুসলিম নেতৃবৃন্দের ধারাবাহিক সহযোগিতায় ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়। এক বছর পর ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পেছনে মুসলিম সমাজে শিক্ষা বিস্তারের আপোষহীন নেতা নবাব সুলিমুল্লাহর শ্রম, সহযোগিতা ও সাহায্য ইতিহাস স্বীকৃত।
৬. বঙ্গভঙ্গ রহিত হওয়ার পর নবাব সলিমুল্লাহ ও নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মুসলিম প্রতিনিধি দল ১৯১২ সালের ৩১ জানুয়ারি ঢাকা সফররত ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আলোচনার সময় নবাব সলিমুল্লাহ তার পুরনো দাবি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সঙ্গে মুসলিম শিক্ষাব্যবস্থা তদারকির জন্য মুসলিম শিক্ষা কর্মকর্তা এবং আনুপাতিক হারে মুসলিম শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানান। নবাবের এই দু’টি দাবি ভাইসরয় মেনে নেন এবং সংখ্যানুপাতে মুসলিম শিক্ষা অফিসার এবং সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩৩ শতাংশ মুসলিম শিক্ষক নিয়োগের নির্দেশ দেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায় অর্ধেক পদও পূরণ হয়নি।
৭. স্কুলগুলোতে মুসলিম শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে নবাবের যুক্তি ছিল, অমুসলিম শিক্ষকদের সংস্কৃত ঘেঁষা বাংলা ভাষা মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য কিছুটা অন্তরায় সৃষ্টি করে। এ সম্পর্কে ১৯০৮ সালে পাঞ্জাবের অমৃতসরে অনুষ্ঠিত সর্বভারতীয় মুসলিম শিক্ষা সম্মেলনের ২২তম অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে নবাব সলিমুল্লাহ বলেন, ‘বাংলাদেশে শহরের ছেলেপুলেরা সাধারণ উর্দুতেই কথা বলে, আর শহরতলী বা গ্রামে ব্যবহৃত হয় মুসলিম বাংলা ভাষা যা হিন্দুদের ব্যবহৃত বাংলা ভাষা থেকে স্বতন্ত্র। তাই সরকারি স্কুলগুলোতে মুসলিম শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে’। ৫৫২ বছরের মুসলিম শাসনের সময় মুসলিম সুলতানদের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা সাহিত্য দুটি সমান্তরাল পথে বিকশিত হয়েছে। এর একটি হচ্ছে আরবি ও ফার্সি শব্দাবলি নির্ভর ‘মুসলিম বাংলা সাহিত্য’ এবং অপরটি সংস্কৃত, পালি ও প্রাকৃত শব্দাবলি প্রভাবিত ‘হিন্দু বাংলা সাহিত্য’। এই দু’টি ধারা আজও অব্যাহত রয়েছে।
৮. ১৯০৪ সালের ১১ জানুয়ারি আহসান মঞ্জিলে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় নবাব সলিমুল্লাহর দেয়া আসাম প্রদেশ, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগ এবং দার্জিলিং, জলপাইগুঁড়ি ও কুচবিহার নিয়ে নতুন প্রদেশ গঠনের প্রস্তাবটি মেনে নিয়ে ব্রিটিশ সরকার ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর গঠন করে ‘পূর্ব বাংলা ও আসাম প্রদেশ’। নতুন প্রদেশের অবিসংবাদীত নেতা হিসেবে নবাব সলিমুল্লাহ শিক্ষাবিস্তারকে প্রাধান্য দেন। ১৯০৫ সালেই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিপুল অর্থ দান করেন। শিক্ষা সম্মেলন, শিক্ষা সমিতি, সর্ব ভারতীয় ও প্রাদেশিক মুসলিম লীগ গঠনের জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় করে ১৯১৩ সালে তিনি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ব্রিটিশ সরকার তার জমিদারীর দায়িত্ব গ্রহণ করে ‘কোর্টস অব ওয়ার্ড’ গঠন করে এবং জমিদারীর আয় থেকে তাকে মাসোহারার ব্যবস্থা করে। বাংলা তথা ব্রিটিশ ভারতের মুসলমানদের শিক্ষা বিস্তারের উন্নয়নের ক্ষেত্রে ও তাদের রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের জন্য অকাতরে অর্থ ব্যয় করে নবাব সলিমুল্লাহ নিঃস্ব হয়ে পড়েন।
৯. ব্রিটিশ ভারতের অধিকারবঞ্চিত মুসলমানদের জন্য তার সবচেয়ে বড় অবদান ‘নিখিল ভারত মুসলম লীগ’। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে শত বছরের শোষণের ফলে তলানীতে পৌঁছে যাওয়া ভারতীয় মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ করেছে মুসলিম লীগ। ১৯০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর ঢাকার শাহবাগের বাগানবাড়িতে গঠিত হওয়ার পর থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত এই দলের পতাকা নিয়ে মুসলিম স্বার্থ রক্ষায় রাজনীতি করেছেন : মহামান্য আগাখান (১৮৭৭-১৯৫৭), কংগ্রেসের সাবেক নেতা কায়েদে আযম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ (১৮৭৬-১৯৪৮), নবাবজাদা লিয়াকত আলী খান (১৮৯৫-১৯৫১), শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক (১৮৭৩-১৯৬২), হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী (১৮৯২-১৯৬৩), খাজা নাজিমউদ্দীন (১৮৯৪-১৯৬৪), মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী (১৮৮০-১৯৭৬), পন্ডিত আবুল হাশিম (১৯০৫-১৯৭৪), ফজলুল কাদের চৌধুরী (১৯১৯-১৯৭৩), খান এ সবুর (১৯০৮-১৯৮২), শেখ মুজিবুর রহমান (১৯২০-১৯৭৫) প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। উপমহাদেশে মুসলিম রাজনীতিবিদ সৃষ্টির পেছনে রয়েছে নবাব সলিমুল্লাহ ও তার গঠিত মুসলিম লীগের ঐতিহাসিক অবদান।
১০. কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নেতৃত্বে পূর্ববঙ্গের কলকাতা প্রবাসী জমিদারগণের এবং ভারতীয় কংগ্রেসের প্রচন্ড বিরোধিতা ও মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে পরিচালিত সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের ফলে ব্রিটিশ সম্রাট পঞ্চম জর্জ ১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বর দিল্লির দরবার হলে বঙ্গভঙ্গ রহিত করেন। এতে বাংলার মুসলমানরা আশাহত হয়ে পড়ে, আর উল্লসিত হয় বাংলার বর্ণবাদী হিন্দু নেতারা। ১৯১২ সালের ৩১ জানুয়ারি নবাব সলিমুল্লাহর প্রস্তাব মেনে ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা করেন। ‘পূর্ববঙ্গের চাষা-ভূষা মুসলমানদের’ উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ দেয়ার স্বার্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নবাব সলিমুল্লাহ ২০০ বিঘার বেশি জমি দান করেন। তার দান করা জমিতে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নবাব সলিমুল্লাহর জন্ম বা মৃত্যুবার্ষিকী কখনো পালন করা হয় না। অকৃতজ্ঞতা আর কাকে বলে।
১১. বঙ্গভঙ্গ রহিত হওয়ার পর থেকেই নবাব সলিমুল্লাহ স্বপ্ন ভঙ্গের ব্যাধিতে ভুগতে থাকেন। এ কে ফজলুল হককে বঙ্গীয় মুসলিম লীগের নেতৃত্বে অধিষ্ঠিত করে তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেন। ১৯১৫ সালের ১৬ জানুয়ারি কলকাতা থেকে তার ঢাকা ফেরার কথা ছিল। তিনি ফিরলেন, তবে জীবিতাবস্থায় নয়। ১৬ জানুয়ারি রাত ২-৩০ মিনিটে তার কলকাতার চোরঙ্গী রোডস্থ ৫৩ নম্বর বাড়িতে ইন্তেকাল করেন। ১৬ জানুয়ারি বিকেল ৪টায় কলকাতায় আলিয়া মাদরাসা সংলগ্ন ওয়েলসলি স্কোয়ার পার্কে নামাজে জানাজা শেষে ১৭ জানুয়ারি নবাব সলিমুল্লাহর লাশ ঢাকায় আনা হয়। ঢাকায় দুটি জানাজা শেষে নবাবকে দাফন করা হয় বেগমবাজার পারিবারিক গোরস্তানে। নবাবের মৃত্যু আজও রহস্যে ঘেরা। আজ ১৬ জানুয়ারি, শিক্ষা ও রাজনীতির ক্ষেত্রে বাংলার মুসলমানদের অবিসংবাদিত নেতা নবাব স্যার সলিমুল্লাহ বাহাদুরের ১০২তম মৃত্যুবার্ষিকী। আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুন। আমিন।
লেখক : সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
মোঃ সদরুল হাসান ২২ জুন, ২০২০, ১০:১৭ পিএম says : 0
নবাব স্যার সলিমুল্লাহ গত ১৬/০১/১৯১৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ০১/০৭/১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে জীবিতকালে তিনি ও নবাব আলি চৌধুরি অগ্রনী ভূমিকা পালন করেন। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ৬০০ একর জমি দানের বিষয়টি ইতিহাসে দেখতে পাওয়া যায়না। তাঁর জমিদানের প্রকৃত তথ্যসূত্র জানানোর জন্য অনুরোধ করা হলো৷
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন