মোঃ আকতারুজ্জামান, চৌদ্দগ্রাম থেকে ঃ গত দুই মাস ধরে অব্যাহত গ্যাস সংকটে কুমিল্লার বিভিন্নস্থানের হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো এখন বন্ধ হওয়ার পথে রয়েছে। এতে লোকসানে পড়ে হোটেল ব্যবস্থা গুটিয়ে নেওয়ার উপক্রম হয়েছে মালিকদের। এছাড়াও বাসা-বাড়িতেও পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ নেই, এতে ভোগান্তিতে পড়েছে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ। সরেজমিনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামের বিভিন্ন অভিজাত হোটেল-রেস্তোরাঁ ও উপজেলার পৌর এলাকাসহ বিভিন্ন উপজেলার বাসা-বাড়িতে ঘুরে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাখরাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানি লিমিটেড (বিজিডিসিএল) কুমিল্লায় গ্যাস সরবরাহ করে থাকে। কুমিল্লায় প্রতিদিন ৫৫ থেকে ৫৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। তবে মোট চাহিদার মধ্যে গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে ৩০ থেকে ৩২ মিলিয়ন ঘনফুট। এছাড়া গত দুই/তিন বছর থেকে শীতকাল এলেই গ্যাসের চাপ অনেকটাই কমে যায়। যার ফলে গত দুই মাস ধরে কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকায় পর্যাপ্ত গ্যাস থাকছে না। যার ফলে গ্যাস সংকটের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরা ও উপজেলার পৌর এলাকার বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে ঘুরে দেখা যায়, ভোর থেকেই গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। তবে বাসা-বাড়িতে দুপুরের পর গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক সহলেও হোটেল রেস্তোরাঁগুলোতে একেবারেই গ্যাস থাকছে না ভোর থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত।
এদিকে, বিজিডিসিএল গ্রাহকদের অপর একটি সূত্র জানায়, কুমিল্লায় বাখরাবাদ গ্যাসের যে পরিমানে বৈধ সংযোগ রয়েছে সে তুলনায় অবৈধ সংযোগের সংখ্যাও কম নয়। বাখরাবাদ গ্যাসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও এর ঠিকাদারদের যোগসাজশে জেলার প্রতিটি স্থানেই অবৈধ সংযোগের সংখ্যা দিন দিন আশংকাজনক হারে বেড়েই চলেছে।
সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, গ্যাসের সবচেয়ে বেশি সংকট বিরাজ করছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা অংশে অবস্থিত বিভিন্ন অভিজাত হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে। কয়েকটি হোটেল-রেস্তোরাঁ ঘুরে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকাল ৬ টা থেকেই এসব হোটেল-রেস্তোরাঁয় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। রাত ৯টা থেকে ১০টার দিকে আবারও গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়। এ সময়ের মধ্যে কাঠ কিনে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এতে একদিকে যেমন এসব হোটেলের খাবারের মান নষ্ট হচ্ছে, অপরদিকে গ্যাস না জ্বালিয়েও ব্যবসায়ীদের গ্যাস বিল দিতে হচ্ছে। এছাড়া অতিরিক্ত টাকায় জ্বালানী হিসেব বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করতে হচ্ছে কাঁঠ।
দেশের ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামের মিয়া বাজার এলাকায় অবস্থিত অভিজাত কয়েকটি হোটেল মধ্যে, ফুড প্যালেসের মালিক ভিপি মাহবুব হোসেন মজুমদার, হাইওয়ে ইনের ব্যবস্থাপক মো.শাহ আলম, টাইম্স স্কয়ারের ব্যবস্থাপক আনোয়ারুল হক, গ্রামীণ রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক সোহেল রানা জানান, ভোর থেকেই আমাদের হোটেলগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। আবার গ্যাস আসতে বাজে রাত ১০টা। ওই সময় আমাদের গ্যাসের তেমন প্রয়োজনও থাকে না। তাঁরা বলেন, গত দুই মাস থেকেই আমরা এ ভোগান্তিতে রয়েছি। আমাদের প্রতিদিন হাজার হাজার টাকার কাঁঠসহ বিভিন্ন জ্বালানী কিনতে হচ্ছে। এছাড়া কাস্টমারদেরও চাহিদা মতো খাবার সরবরাহ করতে পারছি না। তাঁরা আরও বলেন, আবার অনেক কষ্ট করে এসব খাবার তৈরি করলেও খাবারের মান ঠিক থাকছে না। এ অবস্থায় আমাদের হোটেল গুলোতে কাষ্টমারও আসা কমতে শুরু করেছে। এছাড়া গ্যাস না জ্বালিয়েও আমাদের প্রতি মাসে কয়েক লক্ষ টাকা গ্যাস বিল দিতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের ব্যবসাা বন্ধ করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না জানান তাঁরা।
পৌরসভার বৈদ্দেখিল এলাকার সেলিম মিয়া, আবু তাহের, শাহাজান, রামরায় গ্রামের ইদ্রিস মিয়াজী বলেন, সকাল থেকেই গ্যাস থাকে না। আবার গ্যাস থাকলেও চাপ একদম কম থাকে। এতে আমাদের ভোগান্তির শেষ নেই।
পৌর সভার জয়ন্তী নগর গ্রামের ইয়াছিন বলেন, আমাদের এলাকায় একেবারেই গ্যাস থাকে না এমন ঘটনা ঘটেনি। তবে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গ্যাসের চাপ কিছুটা কম থাকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাখরাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানি লিমিটেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক (বিক্রয়) আবুল বাশার সাংবাদিকদের বলেন, কুমিল্লায় প্রতিদিন ৫৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন রয়েছে। তবে সে তুলনায় পাওয়া যাচ্ছে ৩০ মিলিয়ন ঘনফুট। তিনি বলেন, চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। এ কারণে বেশ কিছু স্থানে গ্যাসের সংকট দেখা দিতে পারে।
আর কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিজামুল হাসান জানান, শীতকালে গ্যাসের চাপ কমে যায়। তার ওপর নতুন করে গৃহস্থলি, শিল্পকারখানা ও সিএনজি ফিলিং স্টেশনে গ্যাস সংযোগ দেওয়া গ্রাহকদের সংখ্যাও বেড়েছে। তিনি জানান, সারা দেশেই গ্যাসের উৎপাদন কমেছে। দ্রæত এ সংকট নিরসনের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন