মো. আকতারুজ্জামান চৌদ্দগ্রাম থেকে : আন্তর্জাতিক শ্রম আইন, কারখানা আইন ও শিশু আইনে ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের শ্রমে নিয়োগ নিষিদ্ধ হলেও তা এখনো কাগজে কলমের ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ। চৌদ্দগ্রাম উপজেলার প্রায় সকল ইটভাটায় অবাধেই ১২ বছরের নিচের বয়সী শিশুদের দিয়ে ইট কাটা, ইটখলায় ইট আনা-নেয়া (লোড-আনলোড) কাজ করানো হচ্ছে। উপজেলায় চল্লিশোর্ধ্ব ইটভাটায় ১২ বছরের নিচের আনুমানিক ১৫০ শিশু শ্রমিক কাজ করে। পিতা-মাতার অতিরিক্ত টাকার লোভের চাপে পড়ে একেকবার ইটখলায় লোড আনলোডে আনুমানিক ২০ কেজি ওজনের ন্যূনতম ৬টি ইট আনা-নেওয়া করতে হয় এসব শিশুদের। অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ওজনের চাপে বিভিন্ন দুর্ঘটনারও শিকার হচ্ছে এসব শিশুরা। কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠেই অন্যদের ন্যায় শুরু হয় তাদেরও জীবনযুদ্ধ। কিন্তু পরিবার, মাঝি (ইটভাটার লোড আনলোডের দায়িত্ব থাকা) কেউই দেখতে কিংবা বুঝতে রাজি নয় যে, এসব শিশুদের এখন স্কুলে থাকার কথা। টাকার লোভে ভাটায় কাজকরা শিশুদের পিতা-মাতা ভুলে যান এসকল শিশুদের মৌলিক চাহিদা শিক্ষা ও চিকিৎসার কথা। অনেক ক্ষেত্রে এসব শিশুদের ন্যায্য পাওনা থেকেও বঞ্চিত করা হয়। শিশু হওয়ায় আইন-আদালতে যাওয়ার সুযোগও নেই তাদের। তাই নীরবে কেঁদেই তাদের রাগ আর ক্ষোভের সমাপ্তি ঘটে। এছাড়াও কাজে বিঘ্ন ঘটলে নিয়মিতভাবেই মালিকপক্ষের মারধর ও ধমকের শিকার হতে হয়।
বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ এবং ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম প্রতিরোধ ও নিরসনবিষয়ক আইএলও কনভেনশন সমর্থনকারী দেশ। শিশুদের কায়িকশ্রম বন্ধে জাতীয় শিশুশ্রম নীতি ২০১০ প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও দেশের লক্ষ লক্ষ শিশুর কায়িক ও ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত হওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জাতীয় শিশুশ্রম সমীক্ষা ২০১৩ অনুযায়ী, দেশে সাড়ে ৩৪ লাখ শিশু কর্মরত রয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ১৩ লক্ষ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত আর ২ লাখ ৬০ হাজার শিশু অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত। আইএলও’র ১৮৯ নাম্বার কনভেনশনে বলা হয়েছে, ১৮ বছরের কম বয়সী এবং শ্রমে নিয়োজিত হওয়ার ন্যূনতম বয়সের ঊর্ধ্বে যেসব শিশু অবস্থান করছে, তাদেরকে বাধ্যতামূলক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। এছাড়াও তাদের অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা কিংবা কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রেও কোনো রকম প্রতিবন্ধকতা আরোপ করা যাবে না। আইএলও কনভেনশনের সমর্থনকারী দেশ হিসেবে উপজেলার যে সকল ইটভাটায় অবাধে শিশুশ্রমের কাজে জড়িত হয়ে শিশুরা মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অবিলম্বে তাদের পাশে দাড়িয়ে শিশুশ্রম বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
উপজেলার স্বদেশ ব্রিক্স এ কর্মরত এক শিশু শ্রমিকের নুরজাহান বেগমকে ইটভাটায় কাজ করে তার শিশুর বিভিন্ন অধিকার থেকে বঞ্চিতের বিষয়ে প্রশ্ন করলে প্রতিউত্তরে বলে, অভাবের তাড়নায় যেখানে পরিবার নিয়ে স্বাভাবিক বেঁচে থাকাই দায় সেখানে শিশুর শিক্ষা ও চিকিৎসার ভাবনা ভাবার সুযোগ কই?। ইটভাটায় কাজ করে আল্লাহর রহমতে দু-একবেলা খেতে পারছি সেটাই বড় কথা।
ইটভাটায় শিশুশ্রমের বিষয়েচৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাইদুর রহমান জানান, ইটভাটায় শিশু শ্রমিকদের কাজের বিষয়ে কেউ অভিযোগ করে নাই। অভিযোগ করলে শিশুশ্রম বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন