শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিবন্ধ

চাই বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ

প্রকাশের সময় : ২৭ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এম এইচ খান মঞ্জু
ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমানোর পরও দেশে বিনিয়োগ বাড়েনি বরং শিল্পখাতে এখনো স্থবিরতা বিরাজ করছে। অন্যদিকে বাণিজ্যিক খাতে সুদের হার কমানোর অজুহাত দেখিয়ে ব্যাংকগুলো সাধারণ মানুষের তথা আমানতকারীদের সুদ কেবল কমিয়েই চলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের বক্তব্য উদ্ধৃত করে প্রকাশিত এক খবরে জানানো হয়েছে, ঋণ দেয়ার জন্য বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে সোয়া লাখ কোটি টাকা প্রস্তুত থাকলেও ঋণ নেয়ার ব্যাপারে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না বিনিয়োগকারীরা। গত এক বছরে ব্যাংকগুলোতে আমানত যেখানে ১৩ শতাংশ বেড়েছে সেখানে ঋণ বেড়েছে মাত্র ৯ শতাংশ।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত বছরের জানুয়ারিতে সুদের হার যেখানে ছিল ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ, ডিসেম্বরে সেখানে সুদের হার নেমে এসেছে ১১ দশমিক ১৮ শতাংশে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে ঋণের পরিমাণ অবশ্যই বাড়তো। কারণ, কিছুদিন আগে পর্যন্তও ১৫ শতাংশ হারে সুদ দিয়ে বিনিয়োগকারীরা ঋণ নিয়েছে। ওদিকে ঋণ দিতে ও সুদ আদায় করতে না পারার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ব্যাংকগুলো সাধারণ আমানতকারীদের সুদের হার ক্রমাগত কমিয়ে চলেছে। গত বছরের জানুয়ারিতে এই সুদের হার ছিল ৭ দশমিক ২৬ শতাংশ, ডিসেম্বরে তা ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। ৬ দশমিক ১ শতাংশ হারে মূল্যস্ফীতিকে বিবেচনায় নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বাস্তবে বর্তমানে আমানতের বিপরীতে সুদ দেয়া হচ্ছে মাত্র দশমিক ২৪ শতাংশ হারে। একে কোনোভাবেই গুরুত্বপূর্ণ বা উৎসাহব্যঞ্জক বলা যায় না। এরই পাশাপাশি ঋণ ও বিনিয়োগ না বাড়ার কারণ ব্যাখ্যাকালে বলা হয়েছে, একদিকে সুদের হার যথেষ্ট পরিমাণে কমানো হয়নি, অন্যদিকে রয়েছে গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ না পাওয়াসহ অবকাঠামোগত অসুবিধা।
সংশ্লিষ্টজনেরা জানিয়েছেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ পাওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে দুই হাজারের বেশি আবেদন সরকারের কাছে পড়ে আছে। সংযোগ পেলেই এসব কারখানায় উৎপাদন শুরু হয়ে যাবে। কিন্তু মূলত ঘুষ-দুর্নীতির কারণে আবেদনকারীরা সংযোগ পাচ্ছে না। রিপোর্টে একেও ঋণ ও বিনিয়োগ না বাড়ার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, সব মিলিয়েই বিনিয়োগ পরিস্থিতির আশংকাজনক অবনতি ঘটেছে। উদ্বেগের কারণ হলো, ২০১৪ সালে এসে বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি হঠাৎ ঋণাত্মক হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত উন্নতির কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। তখন রাজনৈতিক সহিংসতাকে কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়েছিল। এতদিনে সে অবস্থায় যথেষ্ট পরিবর্তন ঘটেছে এবং সংকটের মীমাংসা না হলেও রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত ও স্বাভাবিক রয়েছে। তা সত্ত্বেও যেহেতু ঋণ নেয়ার ও বিনিয়োগ করার পরিমাণ একেবারেই বাড়ছে না সেহেতু প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করা দরকার। আর তেমন যে কোনো অনুসন্ধানে দেখা যাবে, কারণ আসলে সরকারের নেতিবাচক নীতি এবং গ্যাস ও বিদ্যুতের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর দুর্নীতি। এ ব্যাপারে সাবেক অর্থ উপদেষ্টাসহ অর্থনীতিবিদদের বক্তব্যও উল্লেখ করা দরকার। তারা বলেছেন, শুধু ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমালেই চলবে না, কমাতে হবে যথেষ্ট পরিমাণে এবং দ্রুততার সঙ্গে। সেই সাথে অত্যধিক গুরুত্ব দিয়ে গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ দেয়াসহ অবকাঠামোগত সকল অসুবিধা দূর করতে হবে। তাহলেই স্বল্প সময়ের মধ্যে দেশী শুধু নয়, বিদেশী বিনিয়োগও বাড়বে।
বলা দরকার, দেশে বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় এবং বিদেশে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারণা চলতে থাকায় বিদেশী কোনো শিল্পপতি গোষ্ঠীই বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার কথা চিন্তা করার সাহস পাচ্ছে না। তার ওপর রয়েছে গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ পাওয়া থেকে উৎপাদন অব্যাহত রাখার নানামুখী সমস্যা। শিল্প-কারখানার জন্য জমি বরাদ্দ দেয়ার পর বিদেশীদের কাছ থেকে জমি ফেরত নেয়ার দৃষ্টান্তও বর্তমান সরকারই স্থাপন করেছে। অর্থাৎ কথিত সহিংসতা কিংবা রাজনৈতিক কোনো আন্দোলন বা অনিশ্চয়তার কারণে নয়, বিদেশী বিনিয়োগ কমে যাওয়ার পেছনে প্রধান ভূমিকা রয়েছে সরকারের। সব মিলিয়েই দেশ বাস্তবে কঠিন সমস্যার মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সুচিন্তিত পরিকল্পনার ভিত্তিতে দেশী ও বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোর চেষ্টা চালাতে হবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি বিনিয়োগ বোর্ডকেও তৎপর করতে হবে, যাতে সকলের মিলিত চেষ্টায় বিনিয়োগ পরিস্থিতিতে উন্নতি ঘটতে পারে। আমরা একই সঙ্গে সুদের হার কমিয়ে সাধারণ আমানতকারীদের বঞ্চিত করা ঠিক মনে করি না। বিনিয়োগে গতি আনার পাশাপাশি সত্যিকার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি চাইলে ঋণের বিপরীতে বেশি হারে সুদ যেমন কমানো দরকার তেমনি দরকার সাধারণ আমানতকারীদেরও উৎসাহিত করা।
লেখক: প্রিন্সিপাল, এমএইচ খান ডিগ্রী কলেজ গোপালগঞ্জ, সাবেক সংসদ সদস্য, গোপালগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন