রাঙামাটি থেকে সৈয়দ মাহাবুব আহামেদ : দীর্ঘ বিরতির পর কাপ্তাই হ্রদে এ বছর আবারো বড় ধরনের মাছ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে। বড় মাছের মধ্যে ২০ থেকে ২৭ কেজি ওজনের কাতল মাছ ৮ থেকে ১০ কেজি ওজনের রুই মাছ, ৬ থেকে ১২ কেজি ওজনের মৃগেল ও কালিবাউস, ৪ থেকে ২০ কেজি ওজনের বোয়াল মাছ, ৩ থেকে ৫ কেজি ওজনের তেলাপিয়া মাছ পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া সেই তিন দশক আগে কাপ্তাই হ্রদে যেভাবে ২০ থেকে ৩০ কেজি ওজনের চিতল মাছ পাওয়া যেত, এবছরও তেমনি বড় ধরনের মাছ জেলেরা শিকার করছেন বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে। স্থানীয় জেলেরা জানিয়েছেন কাপ্তাই হ্রদে বর্তমানে নির্দিষ্ট প্রজাতির দেশীয় মাছ ছাড়াও পাঙ্গাশ, বিদেশী জাতের মাগুর মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে। কাপ্তাই হ্রদে একটি ১০ কেজি ওজনের পাঙ্গাশ মাছ ধরা পড়ে স্থানীয় এক জেলের জালে। শহরের রিজার্ভ বাজারের মৎস্য বিক্রেতা রাসেল এটি পাইকারিদরে কিনে ২১শ টাকায় মাছটি বিক্রি করেছেন বলে জানিয়েছেন। স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, অন্যান্য বছরের ন্যায় কাপ্তাই হ্রদে এবছর দেশীয় প্রজাতির মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি হয়েছে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। স্থানীয় জেলেদের মাধ্যমে এবছর ১০ থেকে ১৪ কেজি ওজনের বাঘাআইর, ৮ থেকে ১০ কেজি ওজনের আইর মাছ ধরা পড়ছে জালে। বিগত অন্তত দুই দশক এই ধরনের মাছ হ্রদে তেমন একটা পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বিএফডিসির সুচারু ব্যবস্থাপনা ও আর স্থানীয় জেলেসহ হ্রদ সংশ্লিষ্টদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি হওয়ার ফলেই কাপ্তাই হ্রদে এবার মাছের উৎপাদন আগের বছরগুলোর চেয়ে দ্বিগুণ বেড়েছে। জেলেরা জানান, কাপ্তাই হ্রদে এবছর দেশীয় প্রজাতির শিং, শোল, ফলিমাছসহ টেংরা মাছের মতো দেশীয় প্রজাতির মাছের উৎপাদন হয়েছে আগের বছরগুলোর তুলনায় বেশি পরিমাণে। এবার হ্রদে জেলেদের জালে ধরা পড়া বাঁচা মাছ ও পাবদা মাছের সাইজও অনেক বড় বড়। এই সকল মাছ বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবছর অনেকটা সুলভ মূল্যে কিনছে স্থানীয় ক্রেতারা। সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সূত্রগুলোর সাথে আলাপ করে জানা গেছে, গত কয়েক বছর কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য শিকার নিষিদ্ধ কালীন সময়ে রাঙামাটি বিএফডিসি’ কর্তৃপক্ষের নিবিড় তত্ত¡াবধানের কারণে এবার মাছের উৎপাদন বেড়েছে। কাপ্তাই হ্রদ বৃহত্তর মৎস্য ব্যবসায়ি সমিতির সভাপতি মোঃ শুক্কুর জানিয়েছেন, বিএফডিসি কর্তৃপক্ষ বিগত এক বছর আগে যে হারে অভিযান চালিয়ে অবৈধ জাঁকগুলো ধ্বংস করার পাশাপাশি কারেন্ট জালসহ ক্ষতিকর জাল জব্দ ও কাপ্তাই হ্রদের মাছ উৎপাদনের অভয়াশ্রমগুলো রক্ষা করায় এবছর মাছের উৎপাদন বেড়েছে। তিনি জানান, স্থানীয় বিএফডিসির কর্মকান্ডে জেলেসহ ব্যবসায়িদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি হওয়ায় এটি সম্ভব হয়েছে। ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় বাজারগুলোর মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বিগত বছরে রাঙামাটি বিএফডিসির সময়পোযোগি সিদ্ধান্তের কারণে হ্রদের আনাছে-কানাচে অনেক বেশি পরিমাণ আবদ্ধ জায়গা উম্মুক্তকরণ করা হয়েছে। মৎস্য শিকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ হ্রদে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে পোনা অবমুক্ত করার সময়ে প্রত্যেকটা অভয়াশ্রমে সঠিক পরিমাণে পোনা অবমুক্ত করাসহ এই সকল স্থানগুলো সঠিকভাবে তদারকিতে থাকায় এবার মাছের উৎপাদন গতানুগতিক প্রত্যাশার চেয়ে ভালো হয়েছে। রাঙামাটি মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন বিএফডিসি’র ব্যবস্থাপক নৌ-বাহিনীর কমান্ডার মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, কাপ্তাই হ্রদ রাঙামাটি জেলা তথা পুরোদেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে অপার সম্ভাবনাময় একটি খাত। এখানে যোগদানের পর থেকেই বিষয়টি অনুধাবন করে সংশ্লিষ্ট সকলের সার্বিক সহযোগিতায় আমি হ্রদের মৎস্য সম্পদ রক্ষায় এবং এর সঠিক উন্নয়নে নানামুখি পদক্ষেপ নিয়েছি। অবৈধ জাঁক অপসারণ, হ্রদের সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণে বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনাসহ মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টির খাতগুলোকে ধ্বংস করায় রাঙামাটিবাসি বর্তমান সময়ে এর সুফলভোগ করতে শুরু করেছে। তিনি বলেন কাপ্তাই হ্রদের সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা তথা এর সম্পদের যুগোপযোগি ব্যবহার পদ্ধতিতে আধুনিকতার ছোঁয়া আনতে পারলে এই হ্রদের মাছ দিয়ে আমাদের দেশের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আমরা অদূর ভবিষ্যতে বিদেশেও রপ্তানি করতে পারবো।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন