বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার উপকূলে এখন ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালী ইলিশ। এই সময়ে এটি অভাবনীয় বলে মনে করছেন অভিজ্ঞজনেরা। মণ মণ ইলিশে শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারীঘাট এখন সরগরম। এতে করে বোট মালিক ও মৎসজীবীরা দারুন খুশি। তবে কক্সবাজার থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ইলিশ পৌঁছাতে নানা ভোগান্তি হচ্ছে বলে জানা গেছে।
গতকাল কয়েকজন বোট মালিক ও জেলের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দৈনিক গড়ে ৫০ টন ইলিশ মাছ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। শীতের শেষে এসে এই ধরনের ইলিশ ধরা পড়ার ঘটনা গত এক যুগে এই প্রথম বলে জানান মৎস্য ব্যবসায়ীরা। তবে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আহরিত ইলিশ দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিতে গিয়ে চরমভাবে নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারা।
গতকাল সকালে শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারীঘাটে গিয়ে দেখা যায়, সাগর থেকে ইলিশের ঝাঁপি নিয়ে ঘাটে ফিরছে সারি সারি ট্রলার। মাছ আনলোড করে নতুন করে রসদ নিয়ে পুনরায় বঙ্গোপসাগরে রওনা দিচ্ছে।
ফিশারীঘাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে জেলে-শ্রমিক ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের মাঝে প্রাণচঞ্চল রয়েছে। ঘাটের শ্রমিকরা নৌকা থেকে ইলিশ তুলে ডাঙ্গায় নিচ্ছে আর মৎস্য ব্যবসায়ীরা তা পাইকারী দরে বড় ব্যবসায়ীদের বিক্রি করছে। কিছু ব্যবসায়ী পাইকারী বাজার থেকে ইলিশ কিনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে সরবরাহ করছে। এখান থেকে দৈনিক গড়ে ৫০ মেট্রিক টন ইলিশ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে যাচ্ছে বলে জানান মৎস্য ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় বাজারেও সাগরের তাজা ইলিশের সহজ প্রাপ্যতা রয়েছে।
কক্সবাজার শহরের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, গত কয়েক বছর ইলিশের নাগাল পাওয়া ছিল দুষ্কর। তবে আগের বছরের তুলনায় এবছর ইলিশের স্বাদ বেশি। বঙ্গোপসাগরেরর কক্সবাজার উপকূলে গত মাসাধিককাল ইলিশের সহজপ্রাপ্যতা সৃষ্টি হওয়ায় বাজারে দামও সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে রয়েছে।
এদিকে কক্সবাজার শহরের প্রধান প্রধান বাজারগুলো ঘুরে জানা গেছে, কেজিতে তিনটি বা ৩শ থেকে সাড়ে তিন শ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম প্রতি কেজি সর্বেচ্চ ৩শ টাকা। চারশ গ্রামের চেয়ে বড় ইলিশের দাম চারশ থেকে পাঁচশ টাকা। আকার ভেদে ইলিশের দাম আরো বেশি।
তবে বঙ্গোপসাগরে ইলিশ পড়ার ঘটনায় জেলে বহদ্দাররা এবার লাভের আশায় বুক বাঁধলেও পুলিশী হয়রানির কারণে মৎস্য ব্যবসায়ীরা শান্তিতে ব্যবসা করতে পারছেন না বলে জানান কক্সবাজার ফিশারীঘাটস্থ মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী। কক্সবাজার ফিশারীঘাটস্থ মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নুরুল ইসলাম চিশতি জানান, কক্সবাজার থেকে দেড়-দুই টনের ইলিশ বোঝাই একটি পিকআপকে ঢাকা পর্যন্ত পৌঁছাতে পুলিশকে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা না দিলে গাড়িতে ইয়াবা ঢুকিয়ে দিয়ে চালান দেয়ার হুমকি দেয়া হয়।
এছাড়া বিভিন্ন চেকপোস্টে অহেতুক ঘন্টার পর ঘন্টা গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। যে কারণে বাজারে যথাসময়ে পৌঁছাতে না পেরে ব্যবসায়ীরা লোকসানের শিকার হন। গাড়ি চালক নুরুল আলম বলেন, হাইওয়ে পুলিশই সবচেয়ে বেশি হয়রানি করে মাছের গাড়িকে। এরমধ্যে লোহাগাড়া, পটিয়া মইজ্জারটেক, শাহ আমানত সেতুর দুই প্রান্তে, মিরসরাই থানার সামনে ও দাউদকান্দি ব্রীজের আগে চেকপোস্ট বসিয়ে পুলিশ চাঁদাবাজি করে বলে সোনা মিয়া জানায়।
কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মঈনউদ্দিন আহমদ জানান, সরকারের পরিকল্পিত কর্মসূচির কারণেই এ মৌসুমে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। ইলিশ মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার গত কয়েক বছর ধরে প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারিসহ জাটকা ধরার বিরুদ্ধে অভিযানসহ নানা কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। তিনি আরও জানান, সরকারের এসব কর্মসূচী কঠোরভাবে পালিত হয়েছে। ফলে প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সাগর ও নদী মোহনায় নির্বিঘ্নে ডিম ছাড়ার সুযোগ পেয়েছে। এ কারণে চলতি মৌসুমে ইলিশের উৎপাদন প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন