শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিত করতে ইলিশ আহরনে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা উঠে গেল গত মধ্যরাতে

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৯ অক্টোবর, ২০২২, ১০:৪৭ এএম

নির্বিঘ্নে প্রজনন নিশ্চিত করতে ২২ দিনের ইলিশ আহরন,পরিবহন ও বিপননে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেল গত মধ্যরাতে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পরে গত মধ্যরাতেই শত শত জেলে দক্ষিণ উপক’লের নদÑনদী ও সাগর মোহনায় ছুটছে ইলিশ সহ সব মাছ অহরনে। আশি^নের বড় পূর্ণিমার আগে পরে সাগর থেকে ঝাকে ঝাকে ইলিশ উপক’লে ছুটে এসে ডিম ছেড়ে আবার সাগরে ফিরে যায়। আমাদের মৎস্য বিজ্ঞানীগন ভোলার পশ্চিম আউলিয়া পয়েন্টÑতজুমদ্দিন, মনপুরা দ্বীপ, পটুয়াখালীর কলাপাড়ার লতাচাপলি পয়েন্ট-এর ধলচর দ্বীপ, মৌলভীরচর দ্বীপ, কালিরচর দ্বীপ এবং মায়ানী পয়েন্টÑমীরসরাই ছাড়াও কুতুবদিয়া পয়েন্ট এলাকায় মা ইলিশের অত্যাধীক প্রচুর্য লক্ষ্য করে ঐ ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারকে ‘ইলিশের প্রধান প্রজননস্থল’ হিসেবে চিঞ্হিত করেছেন। এ বিবেচনায় গত ৬ অক্টোবর রাতের প্রথম প্রহর থেকে ২৮ অক্টোবর মধ্যরাত পর্যন্ত ২২ দিন মূল প্রজনন এলকায় সব ধরনের মৎস্য আহরন সহ সারা দেশেই ইলিশ আহরন, পরিবহনও বিপনন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল।
২২ দিনের এ নিষেধাজ্ঞার সময় দক্ষিণাঞ্চলের জেলে পল্লীগুলোতে নিস্তদ্ধতা নেমে এলেও গত কয়েক দিন ধরে বেকার জেলেদের মধ্য আবার প্রাণস্পন্দন লক্ষ করা গেছে। আড়ত সহ মাছের মোকামগুলোও আবার জেগে উঠেছে। স্থানীয় নদ-নদীর মাছ আজ দুপরের পরেই দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন খুচরা বাজারে আসনে শুরু করবে বলে জানিয়েছেন মৎস্যজীবীগন।
এবারো ইলিশ আহরনে নির্ভরশীল জেলেদের খাদ্য নিরাপত্তায় সরকার ১৩ হাজার ৮৭২ টন চাল বিনামূল্যে বিতরন করেছে। দেশের ৩৭টি জেলার ১৫৫টি উপজেলার ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৮৮৭ জেলে পরিবারকে ২৫ কেজি করে চাল বিতরন করা হয়েছে। এরমধ্যে শুধু বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার ৪১টি উপজেলার ৩ লাখ ৬ হাজার ১২০ জেলে পরিবারের মাধ্যে ৯ হাজার ১৮২ টন চাল বিতরন করা হয়েছে। দেশে উৎপাদিত ইলিশের ৬৮Ñ৭০ ভাগই দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ নদ-নদী ও উপক’লীয় এলাকায় আহরিত হচ্ছে।
এবারের আহরন নিষিদ্ধকালীন সময়েও নৌ বাহিনী, কোষ্ট গার্ড, র‌্যাব এবং পুলিশ জেলা-উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে টাস্ক ফোর্স দক্ষিণাঞ্চল সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অত্যন্ত কঠোর নজরদারী করেছে। তবে জেলেদের মধ্যে এবার আইন ভঙ্গের প্রবনতাও বেশী করে লক্ষ্য করা গেছে। মৎস্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের মতে, গত ২২ দিনে দক্ষিণাঞ্চল সহ উপক’লীয় এলাকায় ইলিশ আহরন বিরোধী প্রায় সাড়ে ১০ হাজার অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় প্রায় দু হাজার মোবকাইল কোর্টের মাধ্যমে ৪৫ লাখ টাকা জরিমানা আদায় ছাড়াও আটককৃত ৩০ টন ইলিশ বাজেয়াপ্ত করে বিভিন্ন এতমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিং-এ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রায় ২ হাজার ১শ জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ডাদেশ প্রদান করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। এসব অভিযানে প্রায় ৯ কোটি ৫ লাখ ঘন মিটার অবৈধ জাল আটক করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় পৌনে ৩ কোটি টাকা। ইলিশ আহরন বিরোধী অভিযানকালে ভ্রাম্যমান আদালত জাল ও নৌকা সহ মৎস্য আহরন সরঞ্জামসমুহ বাজেয়াপ্ত করে নিলামে বিক্রীর মাধ্যমে সরকারী কোষাগাড়ে প্রায় ১৫ লাখ টাকা জমা করেছে বলেও জানিয়েছেন মৎস্য অধিদপ্তর।
এদিকে মা ইলিশ রক্ষায় এসব কার্যক্রম সমুহের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলেই প্রায় ১০ হাজার টন ইলিশ আটক ও বাজেয়াপ্ত করা হয়। এছাড়াও ৫৫ লাখ ঘন মিটার অবৈধ জাল আটক করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এসময় অবৈধভাবে ইলিশ আহরনের দায়ে দক্ষিণাঞ্চলে ৭১৬ জন জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে জেল ছাড়াও প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে বলে বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য দপ্তর জানিয়েছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের মতে, ২০১৮-এর ৭Ñ২৮ অক্টোবর আহরন বন্ধকালে উপকূলের প্রজননস্থল সহ অভ্যন্তরীন মূক্ত জলাশয়ে ৪৮% মা ইলিশ ডিম ছাড়ার সুযোগ পায়। মৎস্য গবেষনা ইনস্টিটিউট-এর মতে প্রজননক্ষম মা ইলিশের হার ২০১৭ সালে ৭৩% থেকে ’১৮ সালে ৯৩%-এ উন্নীত হয়। পাশাপাশি এসময়ে প্রজনন সাফল্য ৮০%-উন্নীত হয়। ইলিশ আহরন নিষিদ্ধের ফলে ঐ সময়ে দেশে ৭ লাখ ৬ হাজার কেজি উৎপাদিত ডিমের ৫০%-এর সাফল্যজনক পরিস্ফুটন সহ তার ১০% বেঁচে থাকলেও ইলিশ পরিবারে নতুন ৩ হাজার কোটি জাটকা যূক্ত হয়। ২০১৯ সালে মূল প্রজনকালীন সময়ে দেশের প্রধান ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্র সমুহে পরিক্ষামূলক নমুনায়নে ৮৩% ইলিশের রেনুর পাশাপাশি ১৭% অন্যান্য মাছেরও রেনু পোনা পাওয়া যায়। ফলে ইলিশ আহরন নিষদ্ধকালীন সময়ে উপক’লে অন্যান্য মাছেরও নিরাপদ প্রজনন সাফল্যজনক ভাবে স¤পন্ন হচ্ছে বলে মৎস্য বিজ্ঞানীগন নিশ্চিত হয়েছেন ।
‘হিলসা ফিসারিজ ম্যানেজমেন্ট অ্যাকশন প্লান’এর আওতায় ২০০৫ সালে প্রথম প্রধান প্রজনন মৌসুমে দেশে ১০দিন ইলিশ আহরন বন্ধ রাখা হয়। পরবর্তিতে মৎস্য বিজ্ঞানীদের সুপারিশে ২০১১ সালে তা ১১ দিন এবং ২০১৫ সালে ১৫ দিনে ও ২০১৬ সালে থেকে ২২ দিনে উন্নীত করা হয়। এমনকি ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্র এবং মাইগ্রেশন পথ নির্বিঘœ রাখা সহ সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের মজুত ও জীব বৈচিত্রকে সমৃদ্ধ করতে হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ সংলগ্ন ৩ হাজার ১৮৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় দেশের প্রথম ‘সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা’ বা ‘মেরিন রিজর্ভ এরিয়া’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রজনন মৌসুমে ২২দিন, জাটকা আহরনে ৮ মাস এবং সাগরে ৬৫ দিনের আহরন নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশে গত দুই দশকে ইলিশের উৎপাদন ২ লাখ টন থেকে গত অর্থ বছরে প্রায় ৫.৬৫ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে বলে মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে। যা চলতি অর্থ বছরে আরো ১০ হাজার টন বৃদ্ধির ব্যাপারে আশাবাদী মংস্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্র।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন