শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

বসন্তেই গ্রীষ্মের ফল তরমুজ বাজারে

নরসিংদী থেকে সরকার আদম আলী | প্রকাশের সময় : ২৪ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

গ্রীষ্মের দৃষ্টিনন্দন মনলোভা ফল তরমুজ। কিন্তু এ বছর বসন্তের মধ্যভাগেই বাজারে আমদানি হতে শুরু করেছে ছোট-বড় আকারের হাইব্রিড জাতের তরমুজ। স্বাদে পানসে হলেও দাম কম নয়। দাম শুনলে খাওয়ার স্বাদ মিটে যায়। একেকটি তরমুজের দাম চাওয়া হচ্ছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। তবে বিক্রি হচ্ছে কম। দাম শুনে সাধারণ ক্রেতারা তরমুজের ধারে কাছেও ভিড়ছে না। ভাগ্যবান ক্রেতারা দুই একটি করে কিনে নিচ্ছেন এসব তরমুজ। যাদের তরমুজ খাওয়ার সৌভাগ্য হচ্ছে তারা জানিয়েছেন, দেখতে সুন্দর হলেও খেতে যাচ্ছেতাই। কোনো কোনো তরমুজ ভেতরে লাল কিন্তু খেতে পানসে। কোনো কোনোটি অর্ধেক সাদা, অর্ধেক লাল। খেতে লাউয়ের মতো। অধিকাংশ ক্রেতাই তরমুজ কিনে প্রতারিত হচ্ছেন। সচেতন ক্রেতারা জানিয়েছে, এখনকার তরমুজের ভেতর সিরিঞ্জ দিয়ে তরমুজের ফ্লেভারযুক্ত লাল রঙ পুশ করা হয়। যেসব তরমুজে লাল রঙ পুশ করা হয়, সেগুলোই লাল। আর যেগুলোতে রঙ পুশ করা হয় না, সেগুলো লালচে সাদা রঙয়ের হয়ে থাকে। এছাড়া দেশীয় জাতের তরমুজ যেমন কড়া মিষ্টি স্বাদের হয়ে থাকে, হাইব্রিড জাতের তরমুজ তেমনটা মিষ্টি স্বাদের হয় না। গ্রীষ্মকালের দেশী জাতের তরমুজ এখনও বাজারে আমদানি হয়নি। বাজারে যেসব তরমুজ আমদানি হচ্ছে তার বেশির ভাগই হাইব্রিড ও আগাম জাতের তরমুজ। বিক্রেতারা গ্রাহকের মুখ দেখে তরমুজ বিক্রি করে। চেনা ক্রেতাদের কাছে পানসে স্বাদের তরমুজ বিক্রি করে পরে মার খাওয়ার ভয়ে বিক্রেতারা তরমুজ বিক্রি করেন না। যারা তরমুজ কিনে নেয়, তাদের বেশির ভাগই অপরিচিত। নরসিংদী কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তরমুজের উৎপত্তিস্থল দক্ষিণ আফ্রিকায়।
পরবর্তীতে এ ফল মিসর, ভারতীয় উপমহাদেশ, ইউরোপ ও আমেরিকা পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে। বাংলাদেশের নাটোর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, ফরিদপুর, ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলায় তরমুজের চাষাবাদ হয়ে থাকে। নরসিংদীর মেঘনা তীরবর্তী চরাঞ্চলে তরমুজের চাষাবাদ হতো। তরমুজের অনেক জাত রয়েছে। দেশীয় জাতের তরমুজের মধ্যে রয়েছে- গোলালন্দ ও পতেঙ্গা জাতের তরমুজ। বিদেশি জাতের মধ্যে রয়েছে- টপইল্ড, সুগার ডেলিকাটা, গ্লোরি, চালর্স, স্টোন গ্রে ইত্যাদি। হাইব্রিড জাতের মধ্যে রয়েছে- পতেঙ্গা জায়েন্ড, মিলন মধুর, ওয়ার্ল্ড কুইন, বিগ টপ, চ্যাম্পিয়ন, অমৃত, সুগার এম্পায়ার, সুইট বেবি, ফিল্ড মাস্টার, সুগার বেলে, ক্রিমসন সুইট, ক্রিমসন গ্লোরি, মোহিনী, আমরুদ, ভিক্টর সপার, ওশেন সুপার, আসাই ইয়ামাভো, আধারি, পুষা বেদানা, পাটনাগরা, মুধ এফওয়ান ইত্যাদি। তবে বর্তমানে দেশীয় জাতের তরমুজের বাজার দখল করে নিয়েছে বিদেশি ও হাইব্রিড জাতের তরমুজ। বসন্তের মধ্যভাগ থেকেই হাইব্রিড জাতের তরমুজ বাজারে উঠতে থাকে। বিক্রেতারা লোভনীয়ভাবে উপস্থাপন করে বিক্রি করে। আর ক্রেতারা কিনে নিয়ে প্রতারিত হয়। খাদ্য, পুষ্টি ও ওষুধি গুণে ভরপুর বিধায় তরমুজ বাঙালি সমাজে খুবই জনপ্রিয় ফল। প্রচন্ড গরমে একফালি তরমুজ ক্লান্ত মানুষের রসনা তৃপ্ত করে। প্রতিদিন এক টুকরো তরমুজ খেলে শরীরের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল বা চর্বি গঠনে বাধাগ্রস্ত হয়। হৃদরোগে ঝুঁকি কমে যায়। শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। আমেরিকান গবেষকরা একদল ইঁদুরকে চর্বিযুক্ত খাবার ও তরমুজ খেতে দিয়ে পরীক্ষা করেছেন। পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণের পরও পাশাপাশি তরমুজ খাওয়ার কারণে ইঁদুরগুলোর রক্তে লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন বা এলডিএলর পরিমাণ অনেক কম হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। রক্তে এলডিএল চর্বি বৃদ্ধি পেলে ধমণীতে পানি জমে যায়। ফলে পানি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়।
নিয়মিত তরমুজ খেলে রক্তে চর্বি কমে যায়। তরমুজ সাধারণত শুষ্ক আবহাওয়ায় বেশি ফলে। বাংলাদেশে বসন্ত ও গ্রীষ্ম মৌসুমে বাতাসে জলীয় কণা কম থাকার কারণে তরমুজের ব্যাপক ফলন হয়। যে বছর বেশি বৃষ্টিপাত, সে বছর তরমুজের ফলন কমে যায়। এ বছর বৃষ্টি কম থাকার কারণে তরমুজের ফলন বেশি হতে পারে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। তবে স্থানীয় জাতের তরমুজ এখন খুবই কম চাষাবাদ হয়। নরসিংদীর চরাঞ্চলের তরমুজচাষিরা জানিয়েছে, মেঘনা তীরবর্তী বেলে মাটিতে তরমুজের ব্যাপক ফলন হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন