স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের স্থান বাংলাদেশের মাটিতে হবে না। আমরা তাদের কোনভাবেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেবো না।
তিনি বলেন, যারা স্বাধীন বাংলাদেশ চায়নি বা মানত না তারাই এ দেশে একের পর এক জঙ্গি হামলা চালিয়েছে। স্বাধীনতা বিরোধী চক্র এবং জঙ্গি ও সন্ত্রাসী গ্রুপ একই সূত্রে গাঁথা বলে তিনি উল্লেখ করেন।
রোববার (২৫ মার্চ) দুপুরে রাজারবাগ পুলিশ লাইন অডিটোরিয়ামে ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ব্যক্তিবর্গের পরিজনদের আনুষ্ঠানিক সমবেদনা জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়।
এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মো. মোখলেছুর রহমান, র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বিভিন্ন বিভাগের প্রধানসহ সিনিয়র কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন হলি আর্টিজান হামলায় নিহত দেশী-বিদেশী চারজন ব্যক্তির ঘনিষ্ঠজন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. শামছুর রহমান। এরপর হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ঘটনা সম্পর্কে ও মামলার বর্তমান অবস্থা এবং পুলিশের পক্ষ থেকে কি কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তার বর্ণনা দেন কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন জাপানি রাষ্ট্রদূত হিরোইয়াসু ইজুমি ও ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান। তিনি নিহত ফারাজ আইয়াজ হোসেন এর নানা।
অনুষ্ঠানে হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে চারজনের পরিজনকে সমবেদনা জ্ঞাপন ও সমবেদনাপত্র প্রদান করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান।
হলি আর্টিজানে নিহত ফারাজ আইয়াজ হোসেনের পক্ষে তার ভাই জারেফ আইয়াজ হোসেন, ইশরাত জাহান আখন্দের পক্ষে তার বড় ভাই আলী হায়াত আখন্দ, অবিন্তা কবিরের পক্ষে তার মামা তানভীর আহম্মেদ ও তারিশি জৈন এর পক্ষে তার চাচা নিরেন সরকার সমবেদনাপত্র গ্রহণ করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, হলি আর্টিজান সন্ত্রাসী হামলা ছিল আমাদের জন্য টার্নিং পয়েন্ট। এর পরই আমরা জনগণের সহযোগিতায় সন্ত্রাস দমন কার্যক্রম ব্যাপকভাবে শুরু করি। তিনি বলেন, অত্যন্ত দক্ষতার সাথে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একের পর এক জঙ্গি আস্তানা গুড়িয়ে দিয়েছে।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় দেশী-বিদেশী ২০ জনকে হত্যা করে যাদের ৯ জন ইতালি, ৭জন জাপানি, তিনজন বাংলাদেশী এবং একজন ভারতীয় নাগরিক। এ ছাড়া সন্ত্রাসীদের হামলায় পুলিশের দু’জন কর্মকর্তা মারা যান। পরে সেখানে কমান্ডো অভিযান চালিয়ে জিম্মি সংকটের অবসান ঘটানো হয়।অভিযানে ৬ জঙ্গি সদস্য নিহত হয়।
মন্ত্রী বলেন, অন্তত ২৫টি জঙ্গি বিরোধী অভিযানে অনেক জঙ্গি সদস্য নিহত হয়েছেন।অনেকে গ্রেফতার হয়েছেন। সরকারের আহবানে সাড়া দিয়ে আবার অনেক জঙ্গি সদস্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছেড়ে দিয়ে ফিরে এসেছেন ।যারা ভুল পথে গিয়েছিলেন তাদের অনেককে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অভিযানের সময় জঙ্গি সদস্যরা আত্মাহুতি দিয়ে মারা যাওয়ার পর তাদের মৃতদেহ স্বজনরা পর্যন্ত নিতে আসে নাই। তারা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘৃণা করেছেন। অনেক স্বজনরা বলেছেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদে যুক্তরা আমাদের সন্তান হতে পারে না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে আমরা অনেক সফলতা অর্জন করেছি। অনেক জঙ্গি আস্তানা গুড়িয়ে দিয়েছি। তাদের নেটওয়ার্ক ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে।
মানুষ হত্যা করা পৃথিবীর কোন ধর্মই সমর্থন করে না উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ, এখানে সব ধর্মের মানুষ এক সাথে একটি মেলবন্ধনে যুক্ত। সূত্র: বাসস
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন