মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার চরতিল্লী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের রাস্তার রাখা হয়েছে নির্মাণ সামগ্রী, বিদ্যায়ের মাঠে বিটুমিন পোড়ানোর ধোঁয়া ও গন্ধে ভুগছে শিক্ষার্থীরা, আবার বিদ্যালয়ের ক্লাসরুমে রয়েছে নির্মাণ শ্রমিকরা, লেখাপড়ার বিঘ্ন ঘঠিয়ে রাস্তার নিমাণ কাজ করছে এক নিমাণকারী প্রতিষ্ঠাণ।
সাটুরিয়ার চরতিল্লি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ ভাড়া নিয়ে বিশাল চুলা বসিয়ে গলানো হচ্ছে রাস্তার কাজে ব্যবহারের জন্য বিটুমিন। জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ঝুট কাপড় আর প্লাস্টিক।
শুধু তাই নয়, বিদ্যালয়ের দুটি ক্লাসরুমে থাকছে নির্মাণ শ্রমিকরা। একদিকে বিটুমিন, কাপড়, প্লাস্টিক পোড়ানোর ধোঁয়া আর উৎকট গন্ধ, অন্যদিকে দুটি ক্লাসরুম বেহাত হয়ে যাওয়ায় বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
জানা গেছে, সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লি থেকে দরগ্রাম পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সড়কের কার্পেটিং কাজ শুরু হয়েছে প্রায় ২১ দিন আগে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার নির্মাণসামগ্রী রাখার জন্য ভাড়া করেছেন তিল্লি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ এবং দুটি ক্লাসরুম।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের মাঠজুড়ে রাখা হয়েছে বিটুমিনের ড্রাম, স্তূপ করা পাথর, জ্বালানির ঝুট কাপড় ও পুরনো প্লাস্টিকের বোতল। তিনটি চুলায় গলানো হচ্ছে বিটুমিন। কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে স্কুল প্রাঙ্গণসহ আশপাশের এলাকা। উৎকট গন্ধ ভাসছে বাতাসে। ৩ সপ্তাহ ধরে সকাল থেকেই শুরু হয় বিটুমিন গলানোর কাজ। কালো ধোঁয়া এবং উৎকট গন্ধে স্কুলে থাকাই মুশকিল।একদিকে চলছে স্কুল আর অন্যদিকে স্কুলের মাঠেই দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন,পুড়ছে পিচ, উড়ছে ধুয়া, দূর্গন্ধ, আর হচ্ছে বিকট শব্দ। শিক্ষার্থীরা ক্লাশে অমনোযোগী হয়ে পড়ছে। বিকট শব্দ, ধূয়া আর পিচের দূগন্ধের কারনে শিক্ষার্থীরা শ্রেনীকক্ষে থাকতে পারছে না। দিনদিন শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। লেখাপড়া ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এবং পিচ পুড়ানো কালি ধূয়ার কারণে ছাত্রছাত্রীরা পড়ছে স্বাস্থ্য ঝুকিতে।
চরতিল্লি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করে জানায়, স্কুলের দুইটি ক্লাশ রুম দখল করে রাস্তার নিমাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে নিমাণকারী প্রতিষ্ঠাণ, আর আমরা ক্লাস করি গাছের তলায়। বিকট শব্দ, ধূয়া আর পিচের দূগন্ধের কারনে আমরা শ্রেনীকক্ষে থাকতে পারছি না, আমাদের লেখা পড়ায় বিঘ্ন ঘঠছে। প্রধান শিক্ষক বারবার অভিযোগ দিয়েছি কিন্ত কোন কাজ হয় নি।
চরতিল্লি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল আওয়াল জানায়, তাঁকে না জানিয়ে স্কুল কমিটির সভাপতি ফজলুর রহমান এ বিষয়ে অনুমতি দিয়েছে। বর্তমানে স্কুলের পরিবেশ লেখাপড়া করার মতো নয়। দুটি ক্লাসরুমে নির্মাণ শ্রমিকরা থাকায় বাইরে ক্লাস নিতে হচ্ছে। যে পর্যন্ত রাস্তার নির্মাণ কাজ শেষ না হবে, সে পর্যন্ত তাদের এমন অবস্থার মধ্যে থাকতে হবে। ঠিকাদারের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই।
চরতিল্লি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ফজলুর রহমান ভাড়া আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করে জানায়, তাদের অনুমতি নিয়েই ঠিকাদার মাঠ ব্যবহার করছে। তবে প্রধান সড়ক থেকে স্কুল পর্যন্ত রাস্তাটুকু কার্পেটিং করে দেবে বলে ঠিকাদার কথা দিয়েছে। আরে পরিবেশ এমন হবে জানলে অনুমতি দেওয়া হতো না।
সাটুরিয়া উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী রণজিৎ দে জানায়, কাজটি পেয়েছে নিয়াজ ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান। রাস্তার পাশে কোনো খালি জায়গা না থাকায় স্কুলের এক অংশ ব্যবহার করা হচ্ছে। আর সেটা স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই করা হচ্ছে। তবে কাজটি করছেন সেলিম মিয়া নামের একজন।
সেলিম মিয়া স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে জানায়, স্কুলের শহীদ মিনার নির্মাণে সহযোগিতা করার বিষয়ে আলাপ হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন