শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সরকারি কর্মকর্তাই দুর্নীতির প্রধান উৎস

দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদন

মালেক মল্লিক | প্রকাশের সময় : ৯ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সরকারি নিয়োগ প্রদানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। অযোগ্য চাকুরি প্রার্থীরা দেশের নিয়োগে দুর্নীতির প্রধান উৎস। সরকারি-বেসরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে লক্ষ লক্ষ চাকুরি প্রার্থী ঘুরে বেড়াচ্ছেন, যাদের অনেকে দেশের উন্নয়নে সম্পৃক্ত হতে পারছেন না, অন্যদিকে ঘুষ-দুর্নীতি এবং প্রতারণার মাধ্যমে চাকুরি পেতে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন চাকুরী প্রত্যাশীরা। এইভাবেই দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন অনেকেই। এমনি চিত্র উঠে এসেছে রাষ্ট্রের একমাত্র দুনীর্তি বিরোধী সংস্থা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর ২০১৭ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে। এছাড়াও সরকারি অন্যান্য অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাই নানাভাবে অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন। ফলে ওই সব প্রতিষ্ঠান কাক্সিক্ষত সাফল্য অর্জনে করতে পারছে না। এতে সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ জনগন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, গণপূর্ত অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্স, আয়কর বিভাগ, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের এমনিই চিত্র। প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের কাছে দুদকের ২০১৭ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনটিতে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনেটি বিশ্লেষণে দেখা যায়, শিক্ষাখাতের দুর্নীতির উৎস উপস্থাপনা করা হয়েছে। এসব প্রতিরোধ আবার সুপারিশও করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে,বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় তরুণ প্রজন্মকে মানবসম্পদে পরিণত করে জনতাত্তি¡ক লভ্যাংশ পেতে হলে অন্যান্য অনুষঙ্গের সাথে গুণগত শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় সাধারণ শিক্ষার ক্ষেত্রে উচ্চতর ডিগ্রী গ্রহণের পথ এতটাই অবারিত হয়েছে যে, সরকারি-বেসরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে লক্ষ লক্ষ চাকুরি প্রার্থী ঘুরে বেড়াচ্ছেন, যাদের অনেকে দেশের উন্নয়নে সম্পৃক্ত হতে পারছেন না, অন্যদিকে অনেকে ঘুষ-দুর্নীতি এবং প্রতারণার মাধ্যমে চাকুরি পাওয়ার প্রত্যাশায় দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন।
সরকারি নিয়োগ প্রদানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কতিপয় কর্মকর্তা এবং অনেক অযোগ্য চাকুরি প্রার্থীরা দেশের নিয়োগে দুর্নীতির প্রধান উৎস। পক্ষান্তরে, দেশের বিভিন্ন উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানে কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন মানবসম্পদের স্বল্পতার কারণে বহু বিদেশী নাগরিক এদেশে এসে নিযুক্তি লাভ করছেন। এসব বন্ধে সুপারিশে উল্লেখ করা হয়েছে, সর্বোচ্চ মেধাবীদের জন্যই কেবল উচ্চ শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত রাখা যেতে পারে। নির্ধারিত বেঞ্চ মার্কের কম প্রাপ্ত নম্বরের শিক্ষার্থীগণ সাধারণ বিশ^বিদ্যালয়, প্রকৌশল, চিকিৎসা ও কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবেন না। তাদের বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষা যেমন পলিটেকনিক, মনোটেকনিক এবং ভোকেশনাল শিক্ষার সুযোগ দিয়ে কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন মানবসম্পদে পরিণত করা যেতে পারে। কেবল এভাবেই মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন এনে তরুণদের সুশিক্ষিত করে সক্ষম এবং দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি করা যেতে পারে। তবে শর্ত থাকে যে, বেঞ্চ মার্কের কম প্রাপ্ত নম্বরের শিক্ষার্থীদেরকে কারিগরি শিক্ষাদানের নিমিত্ত প্রতি উপজেলায়, জেলায়, শহর অথবা মহানগরীর পর্যাপ্ত সংখ্যক বিশ^বিদ্যালয়গুলোকে ঢেলে সাজানোর মহাপরিকল্পনা এখনই গ্রহণ করা যেতে পারে। এতে দক্ষ মানবসম্পদের চাহিদা মিটিয়ে বহির্বিশে^ও চাহিদা মিটাতে ভূমিকা রাখতে পারে, ফলে বাংলাদেশের জন্য জনতাত্তি¡ক লাভ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে আরও দৃশ্যমান হতে পারে। এছাড়াও এক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষকগণ হবেন শিক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন। তাদের জীবন-মান এবং ক্যারিয়ার প্লানিং যুগোপযোগী করা সমীচীন। এ প্রেক্ষাপটে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকগণকে ২য় শ্রেণি এবং প্রধান শিক্ষকগণকে প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদা প্রদান করা যেতে পারে। আর বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত এমপিওভুক্তসহ সকল স্তরের শিক্ষক নিয়োগের জন্য আলাদা কমিশন গঠন করা যেতে পারে। এছাড়া জাতীয় শিক্ষা নীতি অনুসারে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন করা জরুরি বলে প্রতীয়মান হয়।
প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রতিরোধে সকল পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন হতে হবে সৃজনশীল ও বর্ণনামূলক। এ ক্ষেত্রে পরীক্ষায় বিদ্যমান বহু নির্বাচনী প্রশ্ন প্রণয়ন পদ্ধতি বাতিল করা যেতে পারে এবং পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা যতদূর সম্ভব কমিয়ে আনতে হবে। প্রতিটি উপজেলায় সর্বোচ্চ দুইটির বেশি পরীক্ষা কেন্দ্র রাখা সমীচীন হবে না। পরীক্ষা কেন্দ্রসমূহ উপজেলা শহরেই থাকা বাঞ্ছনীয়।
গণপূর্ত অধিদপ্তর ও স্থলবন্দর কর্তৃপ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ: নির্মাণ ও মেরামত কাজে কথিত দুর্নীতির ঘটনার অভিযোগ বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে এসে থাকে। প্রকল্প নির্বাচনে প্রত্যাশী সংস্থার স্বার্থ অবহেলিত, প্রকল্প নির্মাণ কাজের ব্যয় অতিরিক্ত প্রাক্কলন, প্রকল্পের অহেতুক সময় বাড়িয়ে প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে অধিক ব্যয়ে প্রকল্প সমাপ্তকরণ, নি¤œমানের মালামাল সামগ্রী ব্যবহার, দরপত্র আহŸানে অনিয়ম, টেন্ডারের তথ্য ফাঁস, নেগোসিয়েশনের নামে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে সাপোর্টিং বা এজেন্ট ঠিকাদার নিয়োগ, সঠিকভাবে নথি সংরক্ষণ না করা, কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের অনৈতিক আচরণ, অপর্যাপ্ত জনবল, অপর্যাপ্ত মনিটরিং ব্যবস্থা করতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে প্রবেশের অনুমতি থেকে শুরু করে যন্ত্রপাতি ক্রয়, কনটেইনার হ্যান্ডলিং, পাইলটিং, ড্রেজিং, নির্মাণ ও উন্নয়ন কাজ, জাহাজের বার্থ এ্যালোকেশন, নিজস্ব তহবিল ব্যবস্থাপনা, পেনাল রেন্ট মওকুফ, বন্দরের ভ‚মি ইজারা ইত্যাদিসহ নানা প্রকারের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এজাতীয় অনিয়ম-দুর্নীতির কতিপয় উৎস এবং তা নিরসনের কিছু সুপারিশ বাস্তবায়নের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।
গত রোববার দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের নেতৃত্বে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের কাছে ২০১৭ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ করেন। এসময় কমিশনার ড.নাসিরউদ্দীন আহমেদ, এ এফ এম আমিনুল ইসলাম ও সচিব ড. মোঃ শামসুল আরেফিন উপস্থিত ছিলেন। এসময় সরকারি দপ্তরের মোট ৯ টি খাতে দুর্নীতি প্রতিরোধ, দীর্ঘ সূত্রিতা লাঘব, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আরও নিশ্চিত, সর্বোপরি উত্তম চর্চার বিকাশে সুপারিশমালা প্রেসিডেন্ট এই বার্ষিক প্রতিবেদনের পেশ করা হয়। পরে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ফাঁদ মামলার মাধ্যমে ঘুষখোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিদ্যমান কঠোর অবস্থান অব্যাহত থাকবে। ঘুষ গ্রহণ বন্ধ করুন, নইলে কঠোর পরিণতি ভোগ করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা দক্ষ এবং সক্ষম মানবসম্পদ সৃষ্টির লক্ষ্যে শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়সহ বিভিন্ন খাতে সুপারিশমালা পেশ করেছি।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন