মানিকগঞ্জে পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট ও সর্বহারা পার্টির পরিচয়ে কয়েকটি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক, সরকারি কর্মকর্তাসহ চিকিৎসকদের কাছে চাঁদা দাবি করা হয়েছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এ চাঁদা দাবি করা হয়। ইতোমধ্যে দুই ব্যাংক কর্মকর্তা ভয়ে চাঁদা পরিশোধও করেছেন। এ ঘটনায় সরকারি কর্মকর্তাদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্ব স্ব থানায় সাধারণ ডায়রি করেছেন ভুক্তভোগীরা।
থানার সাধারণ ডায়রি ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সর্বহারা পার্টির আঞ্চলিক কমান্ডার পরিচয় দিয়ে বিপ্লব নামে এক ব্যক্তি প্রথমে মোবাইলে ফোন করে। এরপর তার নাম ধরে বলেন, সীমান্তে বিজিবির সঙ্গে তাদের কিছু লোকের গোলাগুলি হয়েছে। আহতদের ভারতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ৫০ লাখ টাকা লাগবে। ৪০ লাখ টাকা জোগাড় হয়েছে। আরও ১০ লাখ টাকার প্রয়োজন। তাই তোকে কিছু চাঁদা দিতে হবে। চাঁদা না দিলে স্বপরিবারে গুম ও হত্যার হুমকি দেয়া হয়। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে অকথ্য ভাষায় গালাগালিও করা হয় কর্মকর্তাদের।
গত এক সপ্তাহে মানিকগঞ্জে অগ্রণী ও সোনালী ব্যাংকের প্রায় প্রতিটি শাখায় ব্যবস্থাপক নয়তো অন্যকোনো কর্মকর্তাদের ফোনে কল করে এভাবে চাঁদা দাবি করা হয়। প্রাণভয়ে অগ্রণী ব্যাংকের আরিচা ঘাট শাখার সিনিয়র অফিসার শরিফ মিয়া ও হরিরামপুরের বয়রা শাখার ব্যবস্থাপক রাজিব মিয়া বিকাশের মাধ্যমে প্রায় ৩ লাখ টাকা পরিশোধও করেছেন। একই কায়দায় চাঁদা দাবি করা হয় সাটুরিয়া উপজেলা প্রশাসনের চার কর্মকর্তাকে হুমকি দিয়ে। এ ছাড়াও শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আরশাদুল্ল্যাহ ও একই হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসক শাহ আলমগীর হোসেন এবং সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এক কর্মকর্তার কাছেও ছাঁদা দাবি করা হয়। তাদেরকে একেক সময় একেক নম্বর থেকে ফোন করা হয়। ভুক্তভোগীরা সবাই স্ব স্ব থানায় সাধারণ ডায়রি করেছেন।
সাটুরিয়া উপজেলা অগ্রণী ব্যাংক শাখার সেকেন্ড অফিসার প্রশান্ত কুমার বসাক জানায়, পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির সর্বহারা কমিটির সভাপতি পরিচয় দিয়ে তার কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ক্ষিপ্ত হয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে টাকা না দিলে তাকে এবং তার পরিবারকে গুম করে ফেলার হুমকি দেয়। সাটুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমদাদুল হক জানান, পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির চরমপন্থি নেতা মহিউদ্দিন দাদা ভাই পরিচয় দিয়ে তাকে ফোন করে চাঁদা দাবি করে হুমকি দেয়।
অগ্রণী ব্যাংকের মানিকগঞ্জ অঞ্চলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার দেওয়ান মোহাম্মদ সাদেক জানান, চক্রটি যেভাবেই হোক তাদের কর্মকর্তাদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করেছে। এ ঘটনায় কর্মকর্তা কর্মচারীদেরে মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। থানায় সাধারণ ডায়রি করার পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে জেলার পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি চক্রটিকে দ্রæত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিয়েছেন। মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) হাফিজুর রহমান জানান, এ জেলায় কখনো পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট অথবা সর্বহারা পার্টির অস্তিত্ব ছিল না। এটি একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের কাজ। এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। প্রযুক্তির মাধ্যমে চক্রটি শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ ঘটনা সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের মনোবল ভেঙে দেয়ার চক্রান্তও হতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন