সরকারি গাড়ি পাওয়ার যোগ্য কর্মকর্তাদের গাড়ি কেনার জন্য সুদমুক্ত ঋণের পরিমান ২৫ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৩০ লাখ টাকা করছে সরকার। একই সঙ্গে প্রতিটি গাড়ির জ্বালানি, রক্ষণাবেক্ষণ ও চালকের বেতনসহ আনুষঙ্গিক খরচও ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ সুযোগের বাইরে রয়েছে ২৭টি ক্যাডার। অন্যদিকে এ সুযোগ বঞ্চিত কৃষি, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্যাডারে মারাত্মক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারের সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব পদের সমমর্যাদাপূর্ণ পদধারী কর্মকর্তারা এতোদিন গাড়ির জন্য সুদমুক্ত ঋণ পেতেন। তাদের সঙ্গে বিসিএস ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তা, যারা যুগ্ম প্রধান এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব (ড্রাফটিং) তাদেরও এ সুবিধা দেওয়া হয়। এখন থেকে উপসচিবদের এ সুযোগ দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে চলতি বছরের ১৩ জুলাই ৭৯জন উপসচিবকে সরকারি গাড়ী ক্রয়ের জন্য আদেশ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া উপসচিব পর্যায়ের প্রায় দেড় হাজার কর্মকর্তা এবার নতুন ভাবে এ তালিকা যুক্ত করা হচ্ছে। কিন্তু অবশিষ্ট ২৭টি ক্যাডার এর বাইরে রয়ে গেছে। এ নিয়ে কৃষি, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্যাডারে মারাত্মক ক্ষোভ রয়েছে। প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত বিশেষ অগ্রিম এবং গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালা-২০১৭ (সংশোধিত) জারিকরণের জন্য কাজ করছে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. জহির উদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এ নিয়ে কয়েক মাস ধরে কাজ করছে এই কমিটি। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. জহির উদ্দিন আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, প্রতিবছর গাড়ি দাম বাড়ছে। কিন্তু সরকারি গাড়ি পাওয়ার যোগ্য কর্মকর্তাদের গাড়ি কেনার জন্য সুদমুক্ত ঋণের পরিমান অনেক দিন ধরে বাড়ানো হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমি যখন গাড়ি ক্রয় করি তখন ২০ লাখ টাকা ঋণ দেয়া হয়েছিল। এরপর এটি বাড়িয়ে ২৫ লাখ টাকা করা হয়েছে। তবে শুরুতে এর পরিমান ছিল ১৫ লাখ টাকা। একই সঙ্গে প্রতিটি গাড়ির জ্বালানি, রক্ষণাবেক্ষণ ও চালকের বেতনসহ আনুষঙ্গিক খরচের টাকাও বাড়ানো হবে। অতিরিক্ত বলেন, প্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তালিকায় এখন থেকে উপসচিবদেরও যুক্ত করা হয়েছে। ফলে তাদেরকেও প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত বিশেষ অগ্রিম এবং গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালায় যুক্ত করা হবে। তিনি আরো বলেন, সংশোধিত এই নীতিমালা এখনো চ‚ড়ান্ত হয়নি। আশা করি শিগগির এ কাজ শেষ হবে। এবিষয়ে খসড়া আলোচনা হয়েছে। চ‚ড়ান্ত হলেই সংশোধিত এই নীতিমালা জারি করা হবে।এছাড়া প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত বিশেষ অগ্রিম এবং গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালা-২০১৪ তে বলা হয়েছে- বাজার মূল্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে যুক্তিসঙ্গত সময় অন্তর অন্তর সরকার বিশেষ অগ্রিমের পরিমান পুনঃনির্ধারণ করতে পারবে। এ সুযোগে সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ির জন্য সুদমুক্ত ঋণের পরিমান বাড়াচ্ছে সরকার।
সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের কমিশনার মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, সরকারি গাড়ি পাওয়ার যোগ্য কর্মকর্তাদের গাড়ি কেনার জন্য সুদমুক্ত ঋণের পরিমান বাড়ানো হচ্ছে। চলতে মাসের মধ্যে এবিষয়ে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে। তিনি বলেন, সুদমুক্ত ঋণের পরিমান ২৫ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৩০ লাখ টাকা এবং প্রতিটি গাড়ির জ্বালানি, রক্ষণাবেক্ষণ ও চালকের বেতনসহ আনুষঙ্গিক খরচ ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫৫ হাজার টাকা করা হতে পারে।
জনপ্রপ্রশান মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আলী কবির ইনকিলাবকে বলেন, আগে সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্মসচিব সরকারি গাড়ী পেতো। সুদমুক্ত ঋণ নিয়ে গাড়ি কেনারও সুযোগ ছিল না। এখন সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে অনেক সুযোগ সবিধা বেড়েছে। আমাদের সময়ে বেতন-ভাতা অনেক কম ছিল। এখন নতুন চাকরিতে ঢুকেই একজন বিসিএস অফিসার সেই বেতন পাচ্ছেন। স্বচ্ছল জীবন-যাপন করতে পারছেন। একই সঙ্গে এখন থেকে উপসচিব হলেই সরকারের গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ থাকছে। এছাড়া গাড়ির কেনার জন্য সুদমুক্ত ঋণ পাচ্ছে সরকারি কর্মকর্তারা। আমাদের সময় সুদমুক্ত ঋণ নিয়ে গাড়ি কেনারও সুযোগ ছিল না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন