শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

পাটজাত পণ্য রফতানি আয় বাড়ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বাংলার সোনালি আঁশখ্যাত পাট আবারও ফিরে পাচ্ছে তার পুরনো সুদিন। বিশ্ববাজারে চাহিদা বাড়ছে আমাদের দেশের পাট ও পাটজাত পণ্যের। রফতানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশিয় চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। স্থানীয় বাজারেও পাটপণ্য বিক্রি বিপুল পরিমাণে বেড়েছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত নয় মাসে ৭৪ কোটি ১১ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি হয়েছে। গত অর্থবছরে একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৬৪ কোটি ৬৬ লাখ ডলার। আলোচ্য সময়ে পাট ও পাটপণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৮ কোটি ৬৫ লাখ ডলার। সে হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় আট শতাংশ বেশি রফতানি হয়েছে। এর মধ্যে পাটের সুতা ও দড়ি রফতানি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এ উপখাত থেকে ৪৬ কোটি ৬১ লাখ ডলার রফতানি আয় হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ২২ শতাংশের বেশি। কাঁচাপাট রফতানি করে আয় হয়েছে ১০ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। আর পাটের বস্তা ও ব্যাগ রফতানি করে এ নয় মাসে আয় হয়েছে ৯ কোটি ৮১ লাখ ডলার। এছাড়া পাটের অন্যান্য পণ্য রফতানি করে আয় হয়েছে ৭ কোটি ৬৭ লাখ ডলার। অবশ্য কাঁচাপাট, পাটের বস্তা ও ব্যাগ রফতানি আয় আগের বছরের চেয়ে কমেছে।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদের শুরুতে পাটের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বহুমুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়। বন্ধ পাটকলগুলো চালুর পাশাপাশি ‘ম্যান্ডেটরি প্যাকেজিং অ্যাক্ট প্রণয়ন, জুট ডাইভারসিফিকেশস প্রমোশন সেন্টার ( জেডিপিসি) প্রতিষ্ঠা, পাটনীতি করাসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়। পাট হতে ভিসকস, পাটপাতার চা, কম্পোজিট জুট জিও টেক্সটাইল ইত্যাদি বিষয়ে উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। সেই সাথে পাটের বাজার সমপ্রসারণের কাজ করছে সরকার। ইতোমধ্যে আফ্রিকার দেশ সুদানের হারানো বাজার পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি ঘানা, কেনিয়া ও ক্যামেরুনের বাজারে দেশের পাটের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া চীন, দুবাই ও কাতারের বাজারে পাটপণ্য রফতানি শুরু হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, দেশের পাটজাত পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার মধ্যপ্রাচ্যের সিরিয়া, ইরান ও লিবিয়া। আবার লিবিয়া থেকে বাংলাদেশি পাটপণ্য রপ্তানি হতো আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে। এসব দেশের রাজনৈতিক সঙ্কট পাটশিল্পের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সংকট মোকাবেলায় সরকারি-বেসরকারিভাবে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া পাট চাষীদের প্রতি নজর দিতে হবে। কারণ, তারা এক বছর পাটের দাম পেলে পরের বছর ন্যায্যদাম থেকে বঞ্চিত হন। পাটচাষীরা যাতে তাদের ফসলের ন্যায্যদাম পান সে ব্যাপারে সরকারকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, পাটের সোনালী দিন ফিরিয়ে আনতে সরকার কাজ করছে। পাটের উৎপাদন ও বহুমুখী ব্যবহার উৎসাহিত করতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। জেডিপিসি পাটপণ্যের বহুমুখীকরণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করছে। তিনি বলেন, জেডিপিসি’র সহায়তায় ইতোমধ্যে ২৩৫ রকম দৃষ্টিনন্দন বহুমুখী পাটপণ্য তৈরী করা হয়েছে যা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। পরিবেশবান্ধব পাটের ব্যবহার বহুমুখীকরণ ও উচ্চমূল্য সংযোজিত পাটপণ্য উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে চারকোল, পাটপাতার পানীয়সহ নতুন নতুন বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদনের ফলে পাট তার হারানো গৌরব ফিরে পাবে।
এদিকে স্থানীয়ভাবে পাটপণ্য ব্যবহার বাড়াতে বর্তমান সরকার ১৭টি পণ্যে পাটের মোড়ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে আইন প্রণয়ন করেছে। পণ্যগুলো হলো ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার , চিনি , মরিচ, হলুদ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ডাল, ধনিয়া, আলু, আটা, ময়দা ও তুষ-খুদ-কুড়া। এ আইন বাস্তবায়নের ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রতি বছর প্রায় ১০০ কোটি পাটের বস্তার চাহিদার সৃষ্টি হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন