খ্রিষ্টীয় ২০১৮ সালের এক-চতুর্থাংশ গত হতে না হতেই আমরা বাংলা ১৪২৫ সনে উত্তীর্ণ হবো। শুভ নববর্ষের সম্ভাষণে মুখরিত হয়ে উঠব, পয়লা বৈশাখের আবাহনে চারদিক জাগবে। কি সৌভাগ্য কত বাধা- বিপত্তি, দুঃখ-দুর্দশা, অভাব-অনাটন আর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ উপেক্ষা করে অন্তত একটি দিনের জন্য নবীন-প্রবীণ উৎসাহে মেতে উঠবেন। কিন্তু এই ক্ষণস্থায়ী উৎসাহ পরে হতাশার সৃষ্টি করে। কেননা এতে আমাদের অর্জনের খাতায় থাকে বড় একটা শূন্য।
অথচ স্বাধীনতা-উত্তর কয়েকটি দশক পর জাতীয় উন্নয়নের মাপকাঠি খুব যে নীচ স্তরে অবনত ছিল তা তো নয়। অনেক, অনেক দিক থেকে আমরা সমুন্নত হয়ে উঠেছি। এখন আমাদের রয়েছে তারুণ্যদীপ্ত উচ্চ শিক্ষা সমৃদ্ধ বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়। আমাদের দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক শ্রেণী মাথার ঘাম পাায়ে ফেলে বিদেশ থেকে প্রেরণ করছেন লক্ষ কোটি টাকার বস্তা। তবু সমন্বিত কর্মকান্ড গড়ে উঠছে না। সামাজিক, রাজনৈতিক সংহতি আমাদের জন্য যেন সুদূর পরাহত কোনো বিষয়। প্রকাশিত-অপ্রকাশিত চিন্তা-ভাবনা, নানাবিধ কর্মকান্ডে তা স্বতঃউদ্ভাসিত।
অতএব প্রথমত সামাজিক ক্ষেত্রে আমাদের সংহতি অর্জন করতে হবে। নবীনের কাছে প্রবীণদের নতুন করে এই প্রত্যাশা উত্থাপন করতে হবে অতীব জরুরি। আমাদের জাতীয় চেতনাকে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে আবদ্ধ করতে হবে। সর্বোপরি সব সংকোচ উপেক্ষা করে নিজেদের স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্বরূপে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশী স্বজন সবাইকে নিয়ে সামাজিক সংহতি গড়ে তুলতে হবে।
কিন্তু সামজিক সংহতির বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছে আমাদের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। পৃথিবীর সর্বত্র আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বহুদলীয় সরকার বিরাজমান। সেই মানসিকতায় আমরা অবশ্যই প্রস্তুত থাকব রাষ্ট্রযন্ত্রের পরিচালনার ভার একাধিক দলের হাতে ন্যস্ত করতে। সহনশীলতাকে রাজনৈতিক সংস্কৃতির অঙ্গ হিসেবে গণ্য করতে হবে। নবীনকে আমরা প্রতিহিংসাপরায়ণ হতে শিক্ষা দিতে পারি না।
জনগণের প্রতি ভালোবাসা এবং ঐকান্তিক আগ্রহ নিয়ে সমাজসেবা, রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব সম্পাদন, সামগ্রিক কার্যকলাপে স্বদেশী ভাবাপন্ন থাকা নববর্ষে নবীনের কাছে প্রবীণের প্রত্যাশা। তাহলেই নতুন বছর সবার জন্য সুখ ও সৌভাগ্য বহন করে আনবে।
লেখক : গবেষক, সাবেক মহাপরিচালক, বাংলা একাডেমি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন