রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

স্টিমার সার্ভিসের করুণ হাল

চারটি প্যডেল জাহাজের দুটিই বিকল

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২৩ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বরিশাল ও খুলনায় বিআইডব্লিউটিসি’র দুটি বড়মাপের যাত্রীবাহী প্যাডেল জাহাজ বিকল হয়ে পড়েছে। দেশের একমাত্র অভ্যন্তরীন যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিসের ৪টি ব্যয় সাশ্রয়ী পাডেল জাহাজের সবগুলোই এখন মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। চারটি নৌযানের দুটি গত সপ্তাহে সম্পূর্ণ বিকল পড়ে। অপর দুটি জোড়াতালি দিয়ে চললেও তাও যেকোন সময়ই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। অভিযোগ ওঠেছে, বিআইডব্লিউটিসি’র কারিগরি ও বাণিজ্য পরিদপ্তরের এক শ্রেণীর কর্মকর্তার অবহেলা আর উদাসীনতায় দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও কার্যকর মেরামতের অভাবে প্যাডেল জাহাজগুলো বিকল হচ্ছে। তবে কথিত মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের নামে ব্যয়ের খাতা ক্রমশ স্ফিত হচ্ছে।
পাশাপাশি ব্যয়বহুল দুটি স্ক্রু-হুইল নৌযান পরিচালন করতে গিয়ে সংস্থাটির লোকসানের বোঝাও ক্রমশ বাড়ছে। প্রায় আড়াইগুন অতিরিক্ত জ্বালানী ব্যয়ের স্ক্রু-হুইল নৌযান দুটি যাত্রীবান্ধব না হলেও তা পরিচালনে সংস্থাটির কতিপয় দুর্নীতিবাজের আগ্রহ বেশী। কারনে প্রতি রাউন্ড ট্রিপেই ‘এমভি বাঙালী ও এমভি মধুমতি’ নামের জাহাজ দুটি থেকে বিপুল পরিমাণ জ্বালানী তেল চোরাইপথে বিক্রির সাথে সংস্থাটির অনেক কর্মকর্তা জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রায় ৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৪’র এপ্রিলে এমভি বাঙালী এবং পরের বছর মে মাসে এমভি মধুমতি চালু করার পরে এ ২টি নৌযানে ইতোমধ্যে লোকসানের পরিমান প্রায় ১২ কোটিতে পৌঁছেছে।
এরপরেও এসব শ্বেতহস্তির পরিচালনেই কর্তৃপক্ষের আগ্রহ ষোলআনা। এসব নৌযানে প্রতি ঘন্টায় জ্বালানী ব্যয় প্রায় ২শ’ লিটার। অথচ পাডেল জাহাজগুলোতে জ্বালানী ব্যয় মাত্র ৭৮ লিটার থেকে ৮৮ লিটার। কিন্তু যাত্রীবান্ধব ও ব্যয় সাশ্রয়ী যাত্রীবাহী প্যাডেল জাহাজগুলোর প্রতি কর্তৃপক্ষের নূন্যতম কোন নজর নেই। গত এক সপ্তাহেরও বেশী সময় ধরে সংস্থাটির প্যডেল জাহাজ ‘পিএস অস্ট্রিচ’ বিকল হয়ে বরিশাল ঘাটে পড়ে আছে। শুক্রবার রাতে খুলনা থেকে বরিশাল হয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করার সময় বিকল হয়ে পড়েছে সংস্থাটির অপর প্যাডেল জাহাজ ‘পিএস মাহসুদ’।
গত ১৩ এপ্রিল খুলনা থেকে ঢাকা যাবার পথে বরিশালের কাছে পিএস অস্ট্রিচ বিকল হয়ে পরে। নৌযানটির মূল ইঞ্জিনের ক্রস বেয়ারিং-এর অক্সিলারী ব্যাবেল বেয়ারিং অকার্যকর হয়ে পড়ায় নৌযানটি অচল হয়ে পড়ে। প্রায় চার বছর আগে ঐ বোরিংটি মেরামত করার পরে দীর্ঘদিনেও তা আর পরিবর্তন বা রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি।
১৩ এপ্রিল পিএস অস্ট্রিচ বিকল হবার পর থেকে বরিশাল বন্দরে পড়ে আছে। বিকল বেয়ারিংটি খুলে বিআইডবিøউটিসি’র নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ডে নেয়া হয়েছে। মেরামত শেষ করে তা বরিশালে ফিরিয়ে আনার পরেই কেবল পিএস অস্ট্রিচ সচল হবার সম্ভবনা রয়েছে। তবে কবে নাগাদ ঐ বেয়ারিং বরিশালে এনে নৌযানটিতে সংযোজন করা সম্ভব হবে তা বলতে পারেননি কেউ।
অপরদিকে ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে পিএস মাহসুদ জাহাজটি খুলনা পৌছে রাত ৩টায় ফিরতি ট্রিপে যাত্রা করার সময়ই বিপত্তি ঘটে। নৌযানটির মূল ইঞ্জিন চালু করাই সম্ভব না হওয়ায় যাত্রা বাতিল করতে হয়। ফলে শুক্রবার বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকামুখী রকেট স্টিমারের যাত্রা বাতিল করতে হয়েছে। আরো প্রায় ছয়মাস অগে পিএস মাহসুদ পূর্ণাঙ্গ মেরামতে সংস্থার ডকইয়ার্ডে নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হলেও রহস্যজনক কারনে তা কার্যকর হয়নি।
এদিকে বিআইডব্লিউটিসি’র বহরে থাকা পিএস লেপচা ও পিএস টার্ণ নামের অপর দুটি প্যাডেল জাহাজের অবস্থাও খুবই করুন। পিএস লেপচার ডকিং সহ এর পূর্ণাঙ্গ মেরামত জরুরি হলেও কর্তৃপক্ষের কোন উদ্যোগ নেই। পিএস টার্ণ-এর মূল ইঞ্জিনের টার্বো চার্জার অনেটাই অকার্যকর গত দুই বছর ধরে। ফলে নৌযানটির গতি হ্রাস পাওয়ায় পরিচালন ব্যয় বাড়ছে। বাড়ছে যাত্রীদের ভোগান্তিও।
অথচ বিঅইডব্লিউটিসি’র ৪টি প্যাডেল জাহাজই যথাযথ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে নির্বঘেœ বানিজ্যিক পরিচালন সম্ভব বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। এমনকি বিশ^ ঐতিহ্যের এসব নৌযান পরিপূর্ণ পুনর্বাসন করলে তা অরো অন্তত কুড়ি বছর নির্বিঘ্নে যাত্রী পরিবহন করতে পারবে বলেও মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। এসব বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসি’র চেয়ারম্যানসহ দায়িত্বশীল মহলে গতকাল যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন