শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর জমির ফসল ব্লাস্টে আক্রান্ত

সাতক্ষীরায় চলছে ধান কাটা

সাতক্ষীরা থেকে আবদুল ওয়াজেদ কচি | প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ফলন ভাল হলেও ব্লাস্ট নামক ছত্রাকের আক্রমণে সাতক্ষীরার কিছু এলাকায় কৃষকের মুখে হাসি নেই। প্রায় সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে মিলান হয়ে গেছে ঐসব এলাকার কৃষকের স্বপ্ন।
এদিকে চলতি মৌসুমে জেলা জুড়ে পুরা-দমে ধান কাটা শুরু হয়েছে। ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে কৃষকের সব ধান কাটা শেষ হবে। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে না পড়লে চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরায় বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। ধানের দাম বেশি পাওয়াতে দ্রুত ঘরে তুলতে মরিয়া চাষীরা। জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে পুরুষের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরা ধান কাটায় ব্যস্থ সময় পার করছে। এদিকে নারী শ্রমিকদের অভিযোগ তারা মজুরি বৈষম্যের শিকার। যোগ্যতা অনুযায়ী পুরুষ ও নারীরা সমান কাজ করলেও নারীদের মজুরি দেয়া হচ্ছে কম।
জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলার সাতটি উপজেলায় ৭৩ হাজার ৮৬২ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩ লাখ ৬২৬ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ৯৭ হাজার ৫১৭ মেট্রিক টন, কলারোয়ায় ৪৮ হাজার ৪৮৫ মেট্রিক টন, তালায় ৭৩ হাজার ৭৮ মেট্রিক টন, দেবহাটায় ২৫ হাজার ১৮৯ মেট্রিক টন, কালিগঞ্জে ২১ হাজার ৭৯৬ মেট্রিক টন, অশাশুনিতে ২৭ হাজার ৫৪৪ মেট্রিক টন এবং শ্যামনগরে ৬ হাজার ৭১৭ মেট্রিক টন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং কৃষকরা নিজেদের উদ্যোগে জলাবদ্ধ ও অনাবাদি জমিতে চাষাবাদ করায় এবার জেলায় নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৭৬ হাজার ৩‘শ ৪৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সবকিছু ঠিক থাকলে বোর ধানের বাম্পার ফলন হবে এবং সুষ্ঠভাবে ফসল ঘরে তুলতে পারলে এবার জেলায় ৭ লাখ ৩০ হাজার ৪‘শ ২০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন সম্ভব হবে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারা। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে বিঘা প্রতি ১৮ থেকে ২০ মন ধান পাবে বলে আশা করছেন চাষীরা।
এদিকে ধান পাঁকারমুখে ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক। এই রোগ আক্রান্ত হওয়ায় আধাপাকা ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে। জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, জেলায় এ পর্যন্ত সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর জমিতে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে মূলত জেলার কয়েকটিস্থানে এই ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। দিনে গরম ও রাতে ঠান্ডা পড়ায় বোরো ধানে এই রোগের প্রাদুর্ভাব ছড়াচ্ছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর।
এদিকে শ্রমিকের চাহিদা বেড়ে যাওয়াতে শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে দ্বিগুণ। একজন শ্রমিক দৈনিক আট ঘণ্টা প্ররিশ্রম করে যেখানে ২শ’ থেকে ২শ ৫০ টাকা মজুরি পেত সেখানে এখন সাড়ে তিনশ থেকে সাড়ে ৪শ টাকা মজুরি দিতে হচ্ছে। বিকেলে ৪ ঘণ্টা পরিশ্রম করে একশ থেকে একশ ৫০ টাকার পরিবর্তে ২শ থেকে ২শ ৫০টাকা পারিশ্রমিক দিতে হচ্ছে। এরপরও জেলা ব্যাপি ধান কাটা শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কাজী মো.আব্দুল মান্নান বোরা ধানের ব্লাস্ট রোগ আক্রান্ত হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, এবছর জেলায় ৭৬ হাজার ৩৪৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ হাজার হেক্টর বেশী। সমপ্রতি প্রতিকুল আবহাওয়া যেমন দিনে গরম, রাতে ঠান্ডা, মেঘলা আবহাওয়া, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি এবং বাতাসের কারনে কিছু কিছু এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে বোরো ফসলে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত এলাকায় কৃষি বিভাগ থেকে সার্বক্ষণিক বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। অনুমোদিত মাত্রায় ছত্রাকনাশক ওষুধ প্রয়োগ করার জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। নতুন করে এই রোগ আর দেখা দেবেনা বলে আশ্বাস এই কর্মকর্তার। সার্বক্ষণিকভাবে এ রোগ নিরাময়ে বিভিন্ন প্রচারণা চালানো হচ্ছে বলে তিনি জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন