রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

রোহিঙ্গা সঙ্কট, ওআইসি ও মুুসলিম বিশ্ব

হোসেন মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ৭ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

উন্নত-আলোকিত এ বিশে^ আজ সবচেয়ে নিপীড়িত-নির্যাতিত কারা? কাদের অপমান, লাঞ্ছনা, দুর্দশার কোনো শেষ নেই? কারা স্বাধীনতার জন্য যুগ যুগ ধরে বুকের রক্তে ভিজিয়ে চলেছে জন্মভ‚মির মাটি? কারা বুকের গভীরে শত বছর ধরে লালন করে চলেছে মুক্তির আকাক্সক্ষা? বিশে^ কোন মা-বোনদের পবিত্র সম্ভ্রম অহরহ বিনষ্ট করে চলেছে সামরিক ইউনিফরম পরিহিত পশুর দল, যাদের অপরাধের কোনো বিচার হয় না? কোন প্রতিবাদী কিশোরদের স্বপ্ন মাথাকুটে মরছে কারাগারের চার দেয়ালের মধ্যে? কাদের রোজা রাখা ও কুরআন পাঠ সরকারি নির্দেশ জারি করে নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে? উগ্রবাদী, সন্ত্রাসীর তকমা লাগিয়ে নির্বাপিত করে দেয়া হচ্ছে কাদের স্বাধীনতা চেতনার আলোকশিখা? তারা আর কেউ নয়Ñ মুসলমান এবং মুসলমান।
চেচনিয়াসহ রাশিয়ার উত্তর ককেশাসে দেড়শ’ বছরের মুক্তির সংগ্রাম, ফিলিস্তিন ও কাশ্মীরে সাত দশকের স্বাধীনতার লড়াই, জিনজিয়াং-এ কয়েক দশকের দমন-নিপীড়ন বিরোধী সংগ্রাম এবং সর্বশেষ রোহিঙ্গা মুসলমানদের গণহত্যা, গণধর্ষণ ও গণবিতাড়নের নিষ্ঠুর চিত্র এ সত্যকেই উপস্থাপন করে। যেসব বিশ^শক্তি গত দু’শত বছর ধরে বিশ^কে শাসন করেছে এবং সেই শাসকদের দলে নয়া বিশ^শক্তি হিসেবে হালে যারা যোগ দিয়েছেÑ তাদের সবার হাতই মুসলিমের রক্তে রঞ্জিত। বিশ^শাসন ও নিজেদের প্রাধান্য বিস্তারে তাদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় মুসলমান বা মুসলিম বিশে^র কোনো স্থান নেই। সবচেয়ে দুঃখজনক হল, উচ্চাশা-দূরদৃষ্টিহীন ও সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নির্ধারণে অপারগ মুসলমানরা ক‚টনীতি ও কৌশলের ক্ষেত্রে ক্রমাগত ব্যর্থতার পাথর চাপা পড়ে যে কোনো পন্থায় আত্মরক্ষার চেষ্টা করে নিজেদের শুধু উপেক্ষা ও অবজ্ঞার প্রান্তে ঠেলে দিচ্ছে।
মুসলিম বিশে^র এ বিপর্যস্ত অবস্থার প্রেক্ষাপটে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠা এবং সহযোগিতার অঙ্গীকার নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছিল ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)। বিশ শতকের মাঝামাঝি আধুনিক বিশে^ ওআইসির আত্মপ্রকাশ ছিল যেন মুসলিম গর্ব ও গৌববের এক হঠাৎ আলোর ঝলকানি। মুসলিম উম্মাহর অস্তিত্ব জানান দিতে ও আত্মসম্মানবোধ সৃষ্টিতে এবং মুসলমানদের আত্মপরিচয়ের সংকট কাটাতে ওআইসি এক বিরাট ভ‚মিকা পালন করে। কিন্তু অনতিকালের মধ্যেই বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এবং ঐক্যের শিথিলতার কারণে উম্মাহর জন্য এক অকল্পনীয় হতাশার জন্ম দিয়ে নিষ্প্রভ হয়ে পড়ে ওআইসি। ওআইসি এখনো অস্তিত্বশীল। কিন্তু একদা বিপুল প্রত্যাশা সৃষ্টিকারী এ সংস্থাটিকে সাম্প্রতিক দশকগুলোতে উম্মাহর ব্যাপারে কোনো বলিষ্ঠ ও কার্যকর ভ‚মিকা পালন করতে দেখা যায়নি। গত শতকের নব্বই-এর দশকে ইরাকের কুয়েত দখল, আফগানিস্তান ও ইরাকে পশ্চিমা ধ্বংসকান্ড, মুসলিম বিশে^ সন্ত্রাসবাদের উত্থান ও বিস্তার, সিরিয়া ও লিবিয়ায় গৃহযুদ্ধ ইত্যাদি ক্ষেত্রে ওআইসি শোচনীয় ব্যর্থতার পরিচয় দেয়। উম্মাহর আস্থা অর্জনে সংস্থাটির আর তেমন সক্রিয় উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি।
স্বীকার্য যে, ওআইসি আশানুরূপভাবে কার্যকর ভ‚মিকা পালন না করলেও এটিই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মুসলিম বিশে^র প্রতিনিধিত্বকারী একমাত্র সংগঠন। তাই এ সংস্থাকে নিয়ে আজো মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ক্ষীণ প্রত্যাশা বিদ্যমান। তারই রেশ ধরে মুসলিম বিশ^ আজ যখন নতুন সংকটের শিকার, তখন ওআইসি আবার এগিয়ে এসেছে। মুসলমানদের অনেকের মনেই নতুন করে আশাবাদ সৃষ্টি করে ঢাকায় ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সম্মেলনের প্রাক্কালে জানা যায়, মিয়ানমার সরকারের চরম নির্মমতার শিকার রোহিঙ্গারা যাতে তাদের নিজভ‚মিতে ফিরে যেতে পারে সে বিষয়টি প্রধান গুরুত্ব পাবে।
রোহিঙ্গা সমস্যাটি বাংলাদেশের জন্য এক গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছরের আগস্টে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা বিতাড়নের সর্বশেষ পর্যায় শুরু হওয়ার পর তিন থেকে চার মাসের মধ্যে সর্বস্ব ত্যাগ করে শুধু প্রাণ হাতে নিয়ে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুু বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করে। প্রথম দিকে সরকার রোহিঙ্গা আগমন রোধে কঠোর মনোভাব গ্রহণ করলেও পরবর্তীতে নমনীয় হয়। মানবিক কারণে তােেদর এদেশে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। তারপরও দু’দেশের মধ্যবর্তী নো ম্যানস ল্যান্ড অবস্থান করতে বাধ্য হয় বহু রোহিঙ্গা। বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব নীতি ও বিবেচনা থেকে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মহলের সহায়তায় এ সমস্যা সমাধােেনর চেষ্টা করছে। বলা দরকার, প্রতিবেশি রাষ্ট্র হিসেবে রোহিঙ্গা সমস্যা নিরসনে মিয়ানমারের ভ‚মিকা আজ পর্যন্ত আন্তরিক নয়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে যে প্রত্যাবাসন চুক্তি হয়েছে, তা নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে নানা কথা রয়েছে। জাতিসংঘ এ চুক্তিকে ইতিবাচক মনে করেনি। এর আগে মানবাধিকার সংস্থাগুলো পরিষ্কারভাবে বলেছে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। যতদূর জানা যায়, বাস্তবতাও সে কথাই বলে। অল্প কিছুিদন আগে প্রকাশিত এক খবরে জানা যায়, রাখাইন রাজ্যে এখন এক লাখেরও কম রোহিঙ্গা আছে। আর রোহিঙ্গাদের বিতাড়ন করা স্থানগুলো মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ নতুন ভাবে সাজিয়ে তুলছে। সেখানে রোহিঙ্গাদের পুরুষানুক্রমে বসবাসের সকল চিহ্ন মুছে ফেলা হয়েছে, যা সুপরিকল্পিত। এদিকে আলোচনা পর্যায়ে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার কথা বলছে বটে, কিন্তু তাতে আন্তরিকতা, নিশ্চয়তার কোনো প্রকাশ পর্যবেক্ষকরা দেখতে পাচ্ছেন না। শোনা যাচ্ছে, প্রত্যাবাসন চুক্তিতে দীর্ঘ সময় ধরে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যায় ধাপে ধাপে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার কথা বলা হয়েছে। যারা ফিরবে তাদের প্রথমে রাখা হবে বিভিন্ন শিবিরে, পরে তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। অর্থাৎ জন্মভ‚মি থেকে গণহত্যা, গণধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, নির্যাতনের শিকার হয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের সরাসরি নিজ নিজ ভিটেমাটিতে ফেরার কোনো সুযোগ নেই। এর অর্থ এ হতে পারে, মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের যদি ফিরিয়ে নেয়ও, তাদের আর নিজ এলাকায় একসাথে রাখবে না, ছড়িয়ে দেবে বিভিন্ন স্থানে যাতে তারা কখনো সংগঠিত হতে বা শক্তি সঞ্চয় করতে না পারে। এখানে উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের বেশির ভাগই নিরাপত্তা ভীতির কারণে মিয়ানমারে ফিরতে রাজি নয়। তারা মিয়ানমারে ফেরার শর্ত হিসেবে নাগরিকত্ব দাবি করেছে। কিন্ত সে বিষয়ে কোনো কথাই মিয়ানমার বলেনি। এ সবের মধ্য দিয়ে সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে যে রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করা বা তাদের অধিকার ফিরিয়ে না দেয়ার মনোভাবে কার্যত মিয়ানমার সরকার অটল রয়েছে। এর আগে দেশটির সংবাদ মাধ্যম ও নানা সূত্রে পাওয়া খবর থেকে সুস্পষ্ট যে, মিয়ানমারের বৌদ্ধ জনগোষ্ঠি ও ভিক্ষুরা রোহিঙ্গাদের কোনোভাবেই বরদাস্ত করতে রাজি নয়। তাদের সে মনোভাবই সরকারের মনোভাব। এর কোনো ব্যত্যয় হওয়ার সুযোগ নেই।
এ মাসের প্রথম দিনে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য পরিদর্শন করে। তার আগে দলটি বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির পরির্শন করে। খবরে জানা যায় যে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ১ মে রাখাইনের দু’টি গ্রাম, একটি ট্রানজিট সেন্টার,একটি রিসেপশন ক্যাম্প পরিদর্শন এবং স্থানীয় বৌদ্ধ, হিন্দু ও পালিয়ে না যাওয়া কয়েকজন মুসলিমের সাথে কথা বলেন। পরে মিয়ানমারের নেত্রী অংসান সু চির সাথে তাদের বৈঠক হয়। প্রতিনিধিরা জাতিসংঘের সদস্য হিসেবে মিয়ানমারকে কিছু বাধ্যবাধকতা পালনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক মানদন্ডের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া প্রয়োজন বলেও তারা বলেছেন। তারা এও বলেছেন যে, বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়ার আগে রোহিঙ্গারা কি পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল তা নিয়ে তদন্ত করাও গুরুত্বপূর্ণ। জানা যায়, এ ক‚টনীতিকরা সু চি ও মিয়ানমারের সেনাপ্রধানকে স্পষ্ট করে বলেছেন, রোহিঙ্গা নির্যাতন, হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনাগুলোর বিশ^াসযোগ্য তদন্ত না করলে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) বিচারের উদ্যোগ নেয়া হবে। অন্যদিকে এক খবরে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের হত্যা ও ধর্ষণের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য-প্রমাণ যোগাড় করা হচ্ছে যাতে ভবিষ্যতে আইসিসিতে বিচার হলে মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করা যায়। এদিকে মিয়ানমার নেত্রী নিরাপত্তা পরিষদের এ সফরকারী প্রতিনিধি দলের সদস্যদের বলেছেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য জাতিসংঘকে সম্পৃক্ত করা দরকার এবং এখনি তার উপযুক্ত সময়। এই প্রথম তিনি এ ধরনের কথা বললেন। উল্লেখ্য, মিয়ানমার সরকার ও সু চি নিজে এতদিন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সাথে জাতিসংঘকে যুক্ত করার ঘোর বিরোধী ছিলেন। মনে করা হচ্ছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মিয়ানমার বিরোধী মনোভাব কঠোর হওয়া ও জাতিসংঘের জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ মিয়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে।
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, রোহিঙ্গা সমস্যাটি জটিল এবং এ জটিলতা সৃষ্টির জন্য সম্পূর্ণরূপে দায়ী হচ্ছে মিয়ানমার। দু’টি বিশ^ শক্তি নিজেদের স্বার্থে দেশটিকে অব্যাহত সমর্থন যুগিয়ে চলেছে। তাদের এ সমর্থনে বলীয়ান হয়ে এতদিন এ ব্যাপারে অনমনীয় মনোভাব প্রদর্শন করেছে মিয়ানমার। এ অনমনীয়তাই এ সমস্যাকে যারপর নাই জটিল করে তোলে যা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছে। এ সংকটকালে মুসলিম বিশে^র মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতা ও সমর্থন নিয়ে এগিয়ে আসে তুরস্ক ও আরো কিছু দেশ। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় যে, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও নিকট বন্ধু এবং যে দেশের সাথে বন্ধুত্ব সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বলে দাবি করা হয় সেই ভারত রোহিঙ্গা সমস্যায় প্রথমদিকে বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়ায়নি বা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থানের প্রতি সমর্থনও জানায়নি। বরং মিয়ানমারের সাথে তার সম্পর্ক ও সহযোগিতা আরো জোরদার করেছে। রোহিঙ্গাদের বিষয়ে ভারত সরকারের মনোভাব নেতিবাচক। রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দিতেও ভারত রাজি নয়। যাহোক, পরবর্তীতে ভারত রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে জানায়। কিন্তু এ সমস্যা সমাধানে ভারত এ পর্যন্ত বাংলাদেশকে জোর সমর্থন করে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে জানা যায়নি। বরং এটাই স্পষ্ট হয়েছে যে, কথিত সবচেয়ে নিকটবন্ধু বাংলাদেশের জন্য মিয়ানমারের সাথে সম্পর্কের কোন রকম অবনতি ঘটানোর কথা চিন্তাও করে না। একই কথা খাটে চীনের ক্ষেত্রেও। ঘনিষ্ঠ বন্ধু চীনও রোহিঙ্গা সমস্যা বিষয়ে বাংলাদেশের সমর্থনে কোনো ভ‚মিকা নেয়নি। কূটনৈতিক ভাষায় তারাও বাংলাদেশের পাশে থাকার কথা বলেছে, কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষে মিয়ানমারের উপর কোনো চাপ সৃষ্টির কোনো উদ্যোগ এখনো নেয়নি। সর্বমহলের ধারণা যে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভারত, রাশিয়া ও বিশেষ করে চীনের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, মিয়ানমারের উপর তাদের প্রভাবই সবচেয়ে বেশি। উল্লেখ করা যেতে পারে, ভ‚রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণে চীন এবং অর্থনৈতিক ও উত্তর পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদ দমনের স্বার্থে ভারতের কাছে মিয়ানমারের গুরুত্ব অপরিসীম।
অতি সম্প্রতি যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মত প্রভাবশালী দেশগুলো রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের পাশে থাকার কথা জোর দিয়ে বলেছে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে তারা মিয়ানমারের উপর চাপ অব্যাহত রাখবে। এক্ষেত্রে কানাডার অভিমত প্রশংসা পাবার দাবি রাখে। দেশটি বলেছে, রোহিঙ্গা সংকট এখন আর শুধু বাংলাদেশের নয়, আন্তর্জাতিকভাবে বিষয়টি নিয়ে চিন্তার সময় এসেছে। কানাডা আরো যে কথাটি বলেছে তা আর কেউ বলেনি। তারা বলেছে, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ভারত ও চীনকে ‘উদাসীনতা’ ছেড়ে এগিয়ে আসতে হবে। একটি কথা সহজেই বলা যায়, রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রæত ও আশানুরূপ সমাধান এখন পর্যন্ত দৃষ্টিগ্রাহ্য নয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চীন ও ভারতকে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে রাজি করানোর চেষ্টা হয়েছে বা হচ্ছে কিনা তা সরকারই ভালো বলতে পারে। হয়ত এক্ষেত্রে ফল হয়নি, কারণ ফল না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। অতএব জাতিসংঘই বড় ভরসা। ওআইসি রোহিঙ্গাদের বিষয়ে সংস্থার পক্ষ থেকে মিয়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি করবে বলে বলেছে, তবে সংস্থা জাতিসংঘের আরো কার্যকর ভূমিকা গ্রহণের উপর জোর দিয়েছে। ওআইসি এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘের পাশে থাকবে বলেও জানিয়েছে। জাতিসংঘ এ বিষয়ে কতটা সক্রিয় হয় এবং বিশ^সংস্থার পদক্ষেপ ভাগ্যাহত রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনে জন্য কত দ্রæত ও কতটা সুফল বয়ে আনে, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন