হাজার হাজার কিলোমিটার সড়ক মহাসড়কের বেহাল অবস্থার কারণে সড়ক পথে চলাচলে ঝুঁকি, যানজট ও দুর্ঘটনার হার ক্রমেই বাড়ছে। মানুষ একদিকে উন্নয়নের বাণী শুনছে, জিডিপি প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশে পরিনত হওয়ার প্রত্যাশা করছে, অন্যদিকে নাগরিক জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে অসহনীয় ভোগান্তিতে নাকাল হচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণের যেন কোনো পথ নেই। সারাদেশের কথা বাদ দিলেও শুধুমাত্র রাজধানী শহরের দিকে তাকালেই বাস্তব অবস্থা সবার সামনে পরিষ্কার হয়ে যায়। গুরুত্বপূর্ণ প্রায় প্রতিটি রাস্তাই হয় খানাখন্দে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে আছে, না হয় সাধারণ বৃষ্টিপাতেও রাস্তাগুলো কোমর সমান পানিতে তলিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। এই যদি হয় উন্নয়নশীল দেশের রাজধানী শহরের অবস্থা তবে সারাদেশে এবং মফষ¦লের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে তা সহজেই অনুমেয়। গত সপ্তাহের বৃষ্টিতে রাজধানীর একেকটি রাস্তা ¯্রােতস্বিনী নদীতে পরিনত হওয়ার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে আগামী বর্ষায় জনদুর্ভোগ অনেক বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশিত হয়েছে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, দেশের ৪টি প্রধান মহাসড়কের অর্ধেকের অবস্থাই বেহাল। বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের এক বড় অংশই ব্যয় করা হয় অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে। গত ৮ বছরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, সেতু নির্মান ও মেরামতে ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেও অবস্থার তেমন কোন উন্নতি হয়নি।
বন্দর, সমুদ্র বন্দর এবং পশ্চাদভ‚মির সাথে সংযুক্ত প্রধান মহাসড়কগুলো দেশের আমদানী-রফতানী ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের লাইফলাইন হিসেবে বিবেচিত হয়। বছরের পর বছর ধরে এসব রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী ও ঝুঁকিপূর্ণ রেখে দেশের অর্থনীতির কাঙ্খিত উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব নয়। গবেষনা জরিপে দেখা গেছে, সড়ক-মহাসড়ক ও সেতু নির্মানে বিশ্বের সর্বোচ্চ খরচ হয় বাংলাদেশে। যা প্রতিবেশী ভারত. পাকিস্তান ও চীনের ব্যয় থেকে প্রায় ১০ গুণ এবং ইউরোপের নির্মান ব্যয় থেকে চারগুণের বেশী। এর বিপরীত দিক হচ্ছে, বিশ্বের সর্বোচ্চ ব্যয় করে সর্বনি¤œ মান ও স্বল্পস্থায়ীত্বের রাস্তা নির্মান করে বাংলাদেশ। কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে রাস্তা নির্মান ও মেরামতের পর বছর না ঘুরতেই তা ভেঙ্গে খানাখন্দে পরিনত হয়। জনগণের রাজস্ব থেকে অবকাঠামো নির্মান খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও সঠিক সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ণ ও কাজের মান নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট দফতরের যেন কোন দায়দায়িত্ব বা জবাবদিহিতা নেই। রাস্তা, বাঁধ ও সেতু নির্মান ও মেরামতের মত প্রকল্পগুলো সব সময়ই জরুরী জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়। ঠিকাদারী চুক্তি বা সরকারী নির্দেশনা অনুসারে সারাবছর ধরেই এসব প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের কথা থাকলেও কোন অজ্ঞাত কারণে দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলো বর্ষা অথবা ঈদের ছুটির আগে তড়িঘড়ি করে মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হয়। বলাবাহুল্য এসব মেরামতি কাজে ব্যয়িত অর্থের বেশীরভাগই অপচয়-অনিয়মে লোপাট হয়ে যায়।
আমাদের প্রতিবেশী এবং বিশ্বের অনেক দেশই বর্ষা ও বৃষ্টিপ্রবণ। এত বেশী টাকা খরচ করে এবং এত বেশী সময় ব্যয় করে তারা রাস্তা নির্মান বা মেরামত না করলেও আর কোন দেশের রাস্তা এভাবে প্রতি বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েনা। সর্বোচ্চ ব্যয় করে নি¤œমানের রাস্তা ও সেতু নির্মানের পেছনে যে দুর্নীতি, লুটপাটের অপসংস্কৃতি রয়েছে তা দূর করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। সামনে রমজান মাস। একই সঙ্গে বর্ষাকাল এবং ঈদুল ফিতর সমাগত। এহেন বাস্তবতায় ঢাকা থেকে একযোগে লাখো মানুষের ঈদে বাড়ি ফেরার ঝক্কির সময় সড়ক-মহাসড়কের বেহালদশা নি:সন্দেহে আবারো আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। উল্লেখ্য, বিগত বছরের বন্যায় দেশের শত শত কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত অনেক রাস্তাই এখনো মেরামত করা যায়নি। এবারো এডিপি বাস্তবায়নে প্রত্যাশিত গতি আনতে ব্যর্থ হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় ও দফতরগুলো। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষীয় তরফে জুনের আগেই রাস্তা মেরামতের প্রতিশ্রæতি দেয়া হলেও ঈদ বা বর্ষার আগে রাস্তা মেরামত ও মানুষের ঘরে ফেরা ঝক্কি নিয়ে আশঙ্কা ক্রমশ প্রবল হয়ে উঠছে। রমজানে এবং ঈদের সময় যানজটসহ রাস্তার দুর্ভোগ কমিয়ে আনতে বিশেষ জরুরী উদ্যোগ প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সচিব জানিয়েছেন, কাজ চলছে আশা করছি সামনের বর্ষায় সড়ক-মহাসড়কে বাস চলাচলে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকবেনা। চলতি অর্থবছরের আর মাত্র ২ মাস বাকি আছে। এ সময়ের মধ্যে ভগ্নদশায় থাকা গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোর মেরামত কাজ দ্রæতায়িত করতে হবে। অর্থবছরের শেষ প্রান্তে এসে কোনো মতে প্রকল্পের টাকা খরচের প্রতিযোগিতা করে কিংবা ঈদের আগে জনতুষ্টিমূলক ও লোকদেখানো মেরামতি কাজে কোটি কোটি টাকার অপচয় আর দেখতে চায়না মানুষ। দেশের কাঙ্খিত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা দূর করতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন