গাজীপুরে আরেকটি ‘চমৎকার’ নির্বাচন উপহার দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। গত ১৫ মার্চ অনুষ্ঠিত খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে চমৎকার নির্বাচন হিসাবে দাবি করেছিল নির্বাচন কমিশন। সে মতে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন ‘দ্বিতীয়’ চমৎকার নির্বাচন। পর্যবেক্ষক মহল অবশ্য মনে করে, বর্তমান নির্বাচন কমিশন ব্যতিক্রম বাদে এরকম নির্বাচন এর আগেও উপহার দিয়েছে। চমৎকার নির্বাচন কাকে বলে তা কারো অজানা থাকার কথা নয়। অনিয়ম-দুর্নীতি-দুষ্কৃতিতে ভরা নির্বাচনকে যদি চমৎকার নির্বাচন বলা হয়, তবে চমৎকার নির্বাচনের জানা ধারণাটিই পাল্টে ফেলতে হবে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ, প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনকেই প্রকৃত নির্বাচন, ভালো নির্বাচন বা চমৎকার নির্বাচন হিসাবে গণ্য করা হয়। অথচ খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এমন কোনো অনিয়ম, দুর্নীতি, জাল-জালিয়াতি, জোর-জবরদস্তি নেই, যা বাস্তবে দেখা যায়নি। তিনটি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত হওয়া, ৫৪টি ভোটকেন্দ্রে অস্বাভাবিক ভোট পড়া, আগে থেকে ছাপ-মারা ব্যালট পাওয়া, ব্যালট বইয়ের মুড়িতে সই বা আঙুলের ছাপ না থাকা, বহু কেন্দ্রে বিএনপির প্রার্থীর এজেন্ট না থাকা কিংবা জোর করে তাদের বের করে দেয়া, ভোটের আগে নির্বিচার ধর-পাকড় ও ভয়ভীতি প্রদর্শন ইত্যাদি কি প্রমাণ করে? এসব কি চমৎকার নির্বাচনের পরিচয় বহণ করে?
নির্বাচন কমিশন, ক্ষমতাসীন দল এবং ক্ষমতাসীন দলের অনুগত বা দলকানা পর্যবেক্ষকরা যাই বলুক, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে বিস্তার বিরূপ আলোচনা বা সমালোচনা হয়েছে। বলা হয়েছে, দৃশ্যত শান্তিপূর্ণ বলে প্রতীয়মান হলেও তলে তলে বিশেষত ভোট কেন্দ্রের অভ্যন্তরে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি ও জাল-জালিয়াতি হয়েছে। নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী সংস্থা ও ক্ষমতাসীন দল একাট্টা হয়ে নির্বাচনের একটি নতুন ‘মডেল’ উপহার দিয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখেনা, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ, প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণরায়ের যথার্থ প্রতিফলন ঘটানোই নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এই দায়িত্ব প্রতিপালনে নির্বাচন কমিশন শোচনীয়ভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। অত:পর বিভিন্ন মহল থেকে এ আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে যে, আগামীতে আর কোনো নির্বাচন যেন খুলনা স্টাইলে না হয়, নির্বাচন কমিশন তা নিশ্চিত করবে। খুলনার অভিজ্ঞতাকে সামনে রেখে উপযুক্ত সতকর্তা ও বিধিব্যবস্থা অবলম্বন করবে। এই পর্যায়ে নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা ও দায়িত্বশীলতা প্রমাণের প্রথম সুযোগটিই আসে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক হলেও বলতে হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন এই সুযোগ গ্রহণে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। খুলনা স্টাইলের নির্বাচন গাজীপুরে আরো ব্যাপক ও নিখুঁতভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে মেয়রপ্রার্থী, নির্বাচন কর্মকর্তা এবং প্রশাসন ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন, ‘এখানে (গাজীপুরে) নির্বাচন খুলনার মতো হবে না।’ তিনি ঠিকই বলেছিলেন, কিন্তু মানুষ তার কথা বুঝতে ভুল করেছিল। তারা বুঝেছিল, খুলনার মতো অনিয়ম-দুর্নীতি-শক্তিপ্রয়োগ এবং নির্বাচন অগ্রহণযোগ্য ও প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না। প্রকৃতই প্রশংসনীয় ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন সর্বোচ্চ কঠোরতা ও দায়িত্বশীলতা প্রদর্শন করবে। বাস্তবে কি দেখা গেল? খুলনার নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা ও অবস্থানকে যদি ‘নতজানু’ বলে অভিহিত করা হয়, তবে গাজীপুরের ক্ষেত্রে বলতে হবে, ভূতলশয়ন। ওপরে সবকিছু ঠিকঠাক বলে মনে হলেও ভেতরে ছিল ‘গড়ের মাঠ’। সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের মতে, ‘ভোটের নামে নিবিড় প্রশাসনিক ম্যাকানিজম হয়েছে।’ সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, গাজীপুর নির্বাচন হয়েছে, ‘প্রশাসন নিয়ন্ত্রিত’ এবং নির্বাচন কমিশন ছিল ‘ক্রীড়নক’। সাংবাদিক সৈয়দ আবুল মকসুদ জাতীয় নির্বাচন করার মতো যোগ্যতা নির্বাচন কমিশনের আছে কিনা তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন।
কী হয়নি গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে? ব্যাপক জালভোট, বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের মেয়রপ্রার্থীর পক্ষে নৌকা প্রতীকে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করা, কোনো কোনো কেন্দ্রে রাতেই ব্যালটে সিল মেরে বাক্সে ভরে রাখা, বিএনপির মেয়রপ্রার্থীর প্রচারকেন্দ্র দখল করা, এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করতে দেয়া, এজেন্টদের ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং রাতেই অনেককে গ্রেফতার ও পরে ছেড়ে দেয়া, ভোটের আগে বিএনপির নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেফতার ইত্যাদি অনেক কিছুই হয়েছে। চোখের সামনে এতসব কাÐ ঘটলেও নির্বাচন কমিশন প্রতিকারমূলক কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। নয়টি কেন্দ্রের ভোটের কার্যক্রম স্থগিত করেই মনে করেছে, বড় একটা কাজ করেছে। বুঝাতে চেয়েছে, নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে অনিয়ম বরদাশত করেনি। যথারীতি ব্যবস্থা নিয়েছে। এও বুঝাতে চেয়েছে, ওই নয়টি কেন্দ্র ছাড়া বাকী সব কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। নির্বাচনের পর নির্বাচন কমিশনের প্রতিক্রিয়াটি এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে। নির্বাচন কমিশনের তরফে বলা হযেছে, নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন সন্তুষ্ট। সন্তুষ্ট তো বটেই! বহুপক্ষীয় যোগসাজসের নির্বাচনের ফলাফল যেমন হওয়ার কথা ছিল তেমনই হয়েছে। এর চেয়ে সন্তুষ্টির বিষয় নির্বাচন কমিশনের জন্য আর কি হতে পারে?
ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রæপ (ইডবিøউজি) গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ শেষে যে বিবৃতি গত বৃহস্পতিবার দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, ইডবিøউজির মতে, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাড়ে ৪৬ শতাংশ কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে। এই কেন্দ্রগুলোতে ১৫৯টি নির্বাচনী অনিয়মের ঘটনা তার নজরে এসেছে। এসব অনিয়মের মধ্যে আছে জোর করে ব্যালট পেপার সিলমারা, ফলাফল শিটে ভোটের সংখ্যা বাড়িয়ে লেখা, কেন্দ্রের ৪০০ গজের মধ্যে প্রচার চালানো, ভোটকেন্দ্রে অনুমোদিত ব্যক্তিদের অবস্থান ও বিএনপির পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়া ইত্যাদি। কিছু নজিরও বিবৃতিতে তুলে ধরা হয়েছে। অনেকেরই জানা, ইডবিøউজি’র একটা বদনাম আছে ‘সরকার ঘেষা’বলে। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর সংস্থাটি যে বিবৃতি দেয় তাতে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন ওঠে। সেই বিবৃতিতে কার্যত নির্বাচন কমিশন ও সরকারী মহলের অভিমতেরই প্রতিফলন ঘটে। সেই সংস্থাই যখন বলে প্রায় ৫০ শতাংশ কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে এবং অনিয়মের সংখ্যা দেড় শতাধিক তখন নির্বাচনটি কেমন হয়েছে, উপলব্ধি করতে কষ্ট হয় না।
খুলনার মতো গাজীপুরেও অনেক কেন্দ্রে অস্বাভাবিক ভোট পড়েছে। ভোটের ব্যবধানও অনেক বেশী। এটা অনিয়মের প্রমাণবাহী। ৪২৫টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে প্রায় ৪০০টি কেন্দ্রের ফলাফলে দেখা গেছে, দুটি কেন্দ্রে ৯০ শতাংশের ওপর ভোট পড়েছে। ২৮টি কেন্দ্রে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ভোট পড়েছে। এসব কেন্দ্রে নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকের ব্যবধানও অস্বাভাবিক। নজির হিসাবে উল্লেখ করা যায় বিপ্রবর্থা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের কথা। এই কেন্দ্রে নৌকা পেয়েছে ১ হাজার ৮১৭ ভোট। ধানের শীর্ষ পেয়েছে ৪৭৬ ভোট। অনুরূপভাবে বসুরা মক্তব মাদরাসা কেন্দ্রে নৌকা পেয়েছে ২ হাজার ৩২৬ ভোট। আর ধানের শীর্ষ পেয়েছে ৫৪৭ ভোট। এই কেন্দ্রে সবচেয়ে বেশী, প্রায় ৯৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। বিপরীত চিত্রও রয়েছে। দেখা গেছে, ৪০ শতাংশের নীচে ভোট পড়েছে ১৮টি কেন্দ্র। সবচেয়ে কম অর্থাৎ ১৪.১৪ শতাংশ ভোট পড়েছে গাজীপুর হলি সান কিÐার গার্টেন অ্যান্ড হাইস্কুল কেন্দ্রে। নির্বাচন কমিশনের হিসাবে এ নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৫৮ শতাংশ। গত নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৬৮ শতাংশ। বদিউল আলম মজুমদারের মতে, বাস্তবে ভোটের হার অনেক কম ছিল। জালভোটের কারণে ভোটের হার বেড়ে থাকতে পারে। বিজয়ী প্রার্থীর ভোট সংখ্যা বেশি হয়েছে বলেই কিছু কিছু কেন্দ্রে অস্বাভাবিক ভোট দেখা গেছে।
স্থানীয় নির্বাচনে পরিবেশ-পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে সর্বোচ্চ ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ ভোট কাস্ট হতে দেখা গেছে। গাজীপুরের পরিবেশ-পরিস্থিতি মোটেই স্বাভাবিক ছিলনা। ৪২৫টি কেন্দ্রের মধ্যে প্রায় ৪০০ কেন্দ্রই ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন কথিত ৫৮ শতাংশ ভোট পড়া অসম্ভব। অস্বাভাবিক ভোট পড়া ভোটের হার বাড়িয়েছে। ১৪ থেকে ৪০ শতাংশের নীচে ভোট পড়াও স্বাভাবিক বলে মনে হয় না। সম্ভবত ওইসব কেন্দ্রে ভোটাররা ভোট প্রদানে উৎসাহ দেখায়নি। কিংবা পরিবেশ এতই প্রতিকূল ছিল যে, তারা ভোট দেয়ার চেয়ে না দেয়াকেই শ্রেয় ও নিরাপদ মনে করেছে।
খুলনা ও গাজীপুর সিটি করর্পোরেশনের বিগত নিবাচনে বিএনপির প্রার্থী মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবারের নির্বাচনে দুই সিটিতেই মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। মূল প্রতিদ্ব›িদ্বতা দুই দলের প্রার্থীর মধ্যে হলেও বিপুল ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের দুই প্রার্থী। এতে ক্ষমতাসীন দল খুব খুশী। দলের নেতৃবৃন্দ মনে করছেন, উন্নয়নের পক্ষেই ভোটাররা রায় দিয়েছে। তারা নির্বাচনে অনিয়ম-দুর্নীতি ও জাল-জালিয়াতির কথা মানতে নারাজ। তাদের মতে, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। ছোটখাটো কিছু অনিয়ম বা বিচ্যুতি ঘটলেও তা অস্বাভাবিক বা ফলাফল বদলে যাওয়ার মতো নয়। যে কোনো নির্বাচনে বিচ্ছিন্ন কিছু অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েই থাকে। তাদের মতে, বিএনপির জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে হ্রাস পাওয়াতেই আওয়ামী লীগের এই বিশাল বিজয় তরান্বিত হয়েছে।
বিএনপির নেতাদের বক্তব্য, তাদের বিজয় ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে দুই সিটি করপোরেশনেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে ফলাফল তাদের অনুকূলেই আসতো। প্রশাসন, আইনশৃংখলা বাহিনী ও নির্বাচন কমিশন একজোট হয়ে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে তাদের বিজয় কেড়ে নিয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে দুই নির্বাচনকেই প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিও জানানো হয়েছে।
নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকদের মতে, আপাতত শান্তিপূর্ণ বলে প্রতিভাত হলেও দুই সিটি নির্বাচনেই ব্যাপক অনিয়ম, কারচুপি ও জাল-জালিয়াতি হয়েছে। এসব ভোটের আগের রাতে এবং ভোটের দিনে ভোট কেন্দ্রের অভ্যন্তরে সংঘটিত হয়েছে। কৌশলটি একেবারে নতুন না হলেও এই দুটি সিটি নির্বাচনে তার ব্যাপক প্রয়োগ হয়েছে। আসন্ন তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এই কৌশল অবলম্বিত হলে নির্বাচনের প্রতি, ভোট দেয়ার প্রতি মানুষের আর কোনো আগ্রহ থাকবে না। নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের আস্থাও শূণ্যে নেমে যাবে।
এত কিছুর পরও রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন বিএনপি তার মেয়র প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়নও সম্পন্ন হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাদের মতে, ওই তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও তাদের দলীয় মেয়রপ্রার্থীরা বিজয়ী হবেন। বিএনপির নেতাদের ধারণা, খুলনা ও গাজীপুরের মতো ওই তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও ভোট ডাকাতির মাধ্যমে তাদের বিজয় ছিনিয়ে নেয়া হতে পারে। তারপরও তারা নির্বাচনে থাকবেন। এতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের মুখোশ পুরোপুরি উন্মোচিত হয়ে যাবে। এই সরকারের অধীনে এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় কোনো নির্বাচনই যে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না সেটা চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হয়ে যাবে। দলীয় সরকারের বদলে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে এবং সরকারের বশংবদ নির্বাচন কমিশনের স্থলে একটি দক্ষ, যোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত নির্বাচন ছাড়া যে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত ও নিরংকুশ হবে না সে সত্যও প্রতিষ্ঠিত হবে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর বেশিদিন বাকী নেই। সেই নির্বাচন কেমন হবে, তা নিয়ে দেশে-বিদেশে আলোচনার শেষ নেই। নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হোক, এটাই সব মহলের প্রত্যাশা। কিন্তু খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যে নজির স্থাপিত হয়েছে তা যদি আসন্ন তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অপরিবর্তিত থাকে তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আশাবাদী হওয়ার মতো তেমন কিছু থাকবে না। এটা সঙ্গতকারণেই বড় ধরনের উদ্বেগের বিষয়। শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও এ নিয়ে কম নেই উদ্বেগ। যুক্তরাষ্ট্র তার বাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের অঙ্গীকারের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র এই অঙ্গীকারের বাস্তবায়ন দেখতে চায়। খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ব্যালট ছিনতাই, বলপূর্বক সিল মারা, ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, বিরোধী দলের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়াসহ সংঘটিত অনিয়ম-দুর্নীতিতে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, জাতীয় নির্বাচনটি এমন হতে হবে যাতে ভোটের ফলাফলে জনআকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটে। বাংলাদেশ সফররত ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী মার্ক ফিল্ড বলেছেন, তার দেশ অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়।
জনআকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটে এমন নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্রের প্রকৃত মুক্তি ও বিকাশ ঘটতে পারে না। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট রাজনীতিক ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন যথার্থই বলেছেন, জনগণের ঐক্যই কেবল মাত্র তাদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে পারে। বলা বাহুল্য, যেখানে ভোটাধিকারই নেই, সেখানে নির্বাচনে জনআকাঙ্খার প্রতিফলনের প্রশ্নই আসতে পারে না। হৃত ভোটাধিকার পুন:প্রতিষ্ঠার যেহেতু বিকল্প নেই, সুতরাং জনগণের ঐক্যবদ্ধ ও আন্দোলনমুখী হওয়ারও বিকল্প নেই। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বৃহত্তর ঐক্য জনঐক্য গঠন তরান্বিত করতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন