বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সাহিত্য

নজরুল : রুবাইয়াৎ-ই-এর শ্রেষ্ঠ অনুবাদক

মী ম মি জা ন | প্রকাশের সময় : ৬ জুলাই, ২০১৮, ১২:০৭ এএম

0 পূর্বে প্রকাশিতের পর
সেই তো সখি স্বপ্ন আমার সেই বনানী স্বর্গপুর।
একপ্রয়াশে নজরুলের ভাষান্তরিত কয়েকটা রুবাইয়াৎ পড়ে নেই।
১৪ নং রুবাইয়াৎ:
আত্মা আমার! খুলতে যদি পারতিস এই অস্থিমাস
মুক্ত পাখায় দেব্তা-সম পালিয়ে যেতিস দূর আকাশ।
লজ্জা কি তোর হল না রে, ছেড়ে তোর ওই জ্যোতির্লোক
ভিনদেশি-প্রায় বাস করতে এলি ধরায় এই আবাস?
১৯নং রুবাইয়াৎটি:
সাকি! আনো আমার হাতে মদ-পেয়ালা, ধরতে দাও!
প্রিয়ার মতন ও মদ-মদির সুরত-ওয়ালি ধরতে দাও!
জ্ঞানী এবং অজ্ঞানীরে বেঁধে যা দেয় গাঁট-ছড়ায়,
সেই শরাবের শিকল, সাকি, আমায় খালি পরতে দাও।
৪০ নং রুবাইয়াৎ:
ছেড়ে দে তুই নীরস বাজে দর্শন আর শাস্ত্রপাঠ,
তার চেয়ে তুই দর্শন কর প্রিয়ার বিনোদ বেণির ঠাট;
ওই সোরাহির হৃদয়-রুধির নিষ্কাশিয়া পাত্রে ঢাল,
কে জানে তোর রুধির পিয়ে কখন মৃত্যু হয় লোপাট।
উপর্যুক্ত পর্যালোচনা ছাড়াও জ্ঞান বিদগ্ধ সাহিত্য সমালোচকগণের মূল্যায়নগুলি যদি আমরা দেখি তাহলে দেখতে পাই যে, সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছেন,
“ওমরই ওমরের সর্বশ্রেষ্ঠ মলি­নাথ, কাজীর অনুবাদ সকল অনুবাদের কাজী।”
বাংলা একাডেমি মহাপরিচালক শামসুজ্জামান
খান বলেছেন, ‘রুবায়াৎ-ই ওমর খৈয়াম নজরুলের আগে দু’একজন অনুবাদ করেছেন কিন্তু সে সবের আর অস্তিত্ব নেই। তাঁর মতো অতো সাবলিল ও হৃদয়গ্রাহী করে আর কেউ অনুবাদ করতে পারেননি। যে কারনে নজরুলের এই অনুবাদিত গ্রন্হটি শতশত বছর পরেও পাঠক মহলে সমাদৃত হবে।’
অবশ্যি কান্তি ঘোষের অনুবাদের খুব প্রশংসা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি বলেছিলেন কান্তি ঘোষকে-
“কবিতা লাজুক বঁধুর মতো এক এক ভাষার অন্তঃপুর থেকে অন্য ভাষার অন্তঃপুরে আনতে গেলে আড়ষ্ট হয়ে যায়। তোমার তর্জমায় তুমি তার লজ্জা ভেঙ্গেচ, তার ঘোমটার ভিতর থেকে হাসি দেখা যাচ্ছে”।
নজরুল যে অনুবাদ সাহিত্যের মহান কারিগর তার প্রমান দিয়েছেন ফারসি ভাষায় লেখা রুবাইয়াৎ-ই ওমর খৈয়াম বাংলায় অনুবাদ করার মধ্য দিয়ে। আজ থেকে ৮৭ বছর আগে পারস্য ঔপন্যাসিক ওমর খৈয়ামের অমর গ্রন্হ রুবাইয়াৎ-ই ওমর খৈয়াম প্রথম অনুবাদ করেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ১৯৩৫ সালে অনুবাদিত এই বইটি প্রকাশিত হয় কলকাতা থেকে। দ্বিতীয় সংস্করণও প্রকাশ হয় ১৯৫৮ সালে কলকাতা থেকে। তখন বইটির চিত্রায়ন করেছিলেন খালেদ চৌধুরী, ভূমিকা লিখেছিলেন বিখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী।
বইটি প্রথম প্রকাশ হওয়ার পর অসাধারণ অনুবাদের জন্য উপমহাদেশের পাঠকদের মধ্যে তুমুল আলোড়ন তুলে। বাংলাভাষার মহান এই কবি যে ফারসি ভাষায়ও সিদ্ধহস্ত ছিলেন তার প্রমানও দিয়েছেন। তাঁর অনুবাদ যে বাংলায়কৃত সকল অনুবাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দীর্ঘ ৮৭ বছর পর সেটাই প্রমান হচ্ছে। (শেষ)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন