ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট রয়েছে বলে দাবি করা হয়। তবে ব্যাংকগুলোয় এখনও ৭৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি তারল্য বা অলস টাকা রয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৮ সালের মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে অতিরিক্ত অলস টাকা ৭৬ হাজার ৮৮৮ কোটি ১৬ লাখ। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে অতিরিক্ত তারল্য ছিল ৯৭ হাজার ১২২ কোটি টাকা। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, অতিরিক্ত ঋণ বিতরণ করায় গুটিকয়েক ব্যাংকে হয়তো নগদ টাকার সংকট হতে পারে। কিন্তু সার্বিকভাবে তারল্য সংকট হওয়ার কথা নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অতিরিক্ত তারল্যের অধিকাংশই রয়েছে সরকারি মালিকানার ব্যাংকগুলোয়। তবে বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক নগদ টাকার সংকটে গত তিন মাস ধরে ঋণ দিতে পারছে না।
প্রসঙ্গত, ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমিয়ে আনতে চাপের মুখে থাকা বেসরকারি ব্যাংক মালিকরা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে পড়ে থাকা অলস অর্থ নেওয়ার জন্য দাবি জানিয়ে আসছিলেন। অবশ্য সেই দাবি পূরণ হতে যাচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অলস টাকা থেকে মাত্র ছয় শতাংশ সুদে আমানত নিতে পারবে বেসরকারি ব্যাংকগুলো। গত ২ জুলাই এ ব্যাপারে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, অচিরেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পড়ে থাকা অলস টাকা (বিভিন্ন বন্ডে রাখা স্বল্প সুদের বিনিয়োগ) এবং বিভিন্ন সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের আমানত ছয় শতাংশ সুদে পাওয়া যাবে। এরই মধ্যে ব্যাংকগুলো ঋণের সুদহার নয় শতাংশে নামিয়ে এনেছে বলেও জানান তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সবচেয়ে বেশি অলস অর্থ জমা রয়েছে সোনালী ব্যাংকে। এখানে অলস অর্থ রয়েছে ৩১ হাজার ১২৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি (সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল) বাণিজ্যিক ব্যাংক ও দুটি বিশেষায়িত ব্যাংকে (বিকেবি ও রাকাব) অলস অর্থের পরিমাণ ৪৩ হাজার ১২০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। চলতি বছরের মার্চ শেষে জনতা ব্যাংকে অলস অর্থের পরিমাণ ছিল ৭৯৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। রূপালী ব্যাংকে দুই হাজার ৫০৮ কোটি ৫০ লাখ, বেসিক ব্যাংকে এক হাজার ৪২০ কোটি ৬০ লাখ, অগ্রণী ব্যাংকে দুই হাজার ৩৯৮ কোটি ৪০ লাখ, বিডিবিএল ব্যাংকে ৬৬০ কোটি ৮৯ লাখ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে (বিকেবি) দুই হাজার ৫১৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে (রাকাব) অলস অর্থের পরিমাণ হচ্ছে এক হাজার ১২৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের শেষে ব্যাংক খাতে অতিরিক্ত তারল্য ছিল এক লাখ ২৫ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের একই সময় এই অর্থের পরিমাণ ছিল ৯৭ হাজার ১২২ কোটি টাকা।
জানা গেছে, সোনালী ব্যাংক গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত আমানত সংগ্রহ করেছে এক লাখ ৭ হাজার কোটি টাকা। একই সময়ে ব্যাংকটি বিতরণ করেছে মাত্র ৪২ হাজার কোটি টাকার ঋণ। এছাড়া, অগ্রণী ব্যাংক ডিসেম্বর পর্যন্ত আমানত সংগ্রহ করেছে ৫৩ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। একই সময়ে ব্যাংকটি বিতরণ করেছে মাত্র ৩১ হাজার ৯১১ কোটি টাকার ঋণ। আবার রূপালী ব্যাংকে আমানত জমেছে ৩২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা।
অবশ্য কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক আগ্রাসীভাবে ঋণ বিতরণ করায় তাদের নগদ টাকার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে বেসরকারি খাতের ফারমার্স ব্যাংক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন