বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

গাজীপুর মার্কা নির্বাচন কাম্য হতে পারে না

ড. আব্দুল হাই তালুকদার | প্রকাশের সময় : ৮ জুলাই, ২০১৮, ১২:০২ এএম

গাজীপুর সিটি নির্বাচন হলো। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিদার আ.লীগ সরকার সত্যি নির্বাচন করতে জানে। সাহায্যকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষতা হারিয়ে সরকারের অঙ্গ সংগঠনের মতো কাজ করেছে। এক অভিনব ও চাতুর্যপূর্ণ কায়দায় নির্বাচনটি করে কর্তাব্যক্তিরা খুশিতে টগবগ করছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দাবি করেছেন, আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে জানি। কারো উপদেশ বা পরামর্শ লাগবে না। গাজীপুর নির্বাচনটি খুলনা নির্বাচনকেও হার মানিয়েছে। কী সুন্দর একপক্ষীয় নৃত্য, গীত, আনন্দ, উল্লাসের মধ্যে দিয়ে নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত করা সম্ভব হয়েছে। বাইরে থেকে বোঝার উপায় নাই। তবে সাংবাদিক, বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে বিরোধীদল, সাধারণ ভোটার ও দেশের মানুষ ঠিকই নির্বাচনী হালচাল বুঝেছে। নির্বাচনের আগে থেকে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হয়। বিএনপি নেতাকর্মীরা ঘরে থাকতে পারেনি, নির্বাচনী ময়দান ফাঁকা রেখে তারা গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে থেকেছে। নির্বাচনের কয়েকদিন আগে থেকে তাদের দৌড়ের ওপর রাখা হয়েছে। গ্রেফতার এড়াতে তারা পালিয়ে থেকে জীবন রক্ষা করেছে। এমনভাবে ভয়ভীতি ও ত্রাস সৃষ্টি করা হয়েছে যাতে কেউ মাথাচাঁড়া দিতে না পারে। নির্বাচনে এজেন্ট পাওয়া মুশকিল হয়েছে। ১৫০/২০০ নেতাকর্মী গ্রেফতার করে এমনভাবে আতংক সৃষ্টি করা হয়েছে যে, তারা কেউ সামনে আসতে সাহস পায়নি। সত্যিই আ.লীগের কৌশল ও চাতুর্য দেশের মানুষকে বোকা বানিয়েছে। ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রæপ ও সাংবাদিকদের দেয়া তথ্য মতে, গাজীপুরে সত্যিকার অর্থে কোন নির্বাচনই হয়নি, ইলেকশানের দিন একপক্ষীয় নির্বাচনী মহড়া অনুষ্ঠিত হতে মানুষ দেখেছে। বিএনপির কোন এজেন্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি। নির্বাচনের আগে থেকে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি করে যারা এজেন্ট হতে ইচ্ছুক, তাদের ভয়ভীতি, মামলা হামলা ও গ্রেফতারের আতংক সৃষ্টি করে নিবৃত্ত করা হয়েছে। যারা তার পরেও দমেনি বা অতি সাহস প্রদর্শন করেছে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। নির্বাচনের দিন যারা এজেন্ট হতে এসেছিল, তাদেরকে ধরে নিয়ে এক জায়গায় জড়ো করে রাখা হয়েছে। ফলে অধিকাংশ কেন্দ্রে কোন এজেন্ট ছিল না। এমন কি ধানের শীষের স্টিকার লাগানো কর্মী দেখা যায় নি। সকলে জীবন বাঁচাতে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলেছে। হাসান উদ্দিন সরকার কোর্টে গেলেও সুবিধা করতে পারেন নি। কোর্টের রায় বেরুনোর আগেই নির্বাচন শেষ হয়েছে। আর কোর্টের নিষেধাজ্ঞা পেলেও কোন লাভ হতো না। খুলনা সিটি নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী নজরুল ইসলাম কোর্টের নিষেধাজ্ঞা পেলেও কোন লাভ হয়নি। কারণ যাদের বিরুদ্ধে মামলা নেই তাদের গ্রেফতারে নিষেধাজ্ঞা পাওয়া গিয়েছিল। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিতে পুলিশের কোন অসুবিধা হবার কথা নয়। নতুন-পুরাতন মামলা মিলিয়ে শত শত মামলার বেড়াজালে বিএনপি নেতাকর্মীরা আটকে আছেন। যাদের বিরুদ্ধে মামলা নাই, তাদের গ্রেফতারে কোন অসুবিধা নাই। বেনামী আসামীর বিরাট লিস্টে নাম ঢুকালেই কেল্লা ফতে। ফলে যে কাউকে আসামী করতে পুলিশের অসুবিধা নাই। কথা হচ্ছে সততা ও পেশাদারিত্ব হারিয়ে পুলিশ যেন আওয়ামী ক্যাডার বাহিনীতে রূপান্তরিত হয়েছে। তারা যেন ভুলে গেছে যে, তারা কোন দলের বা সরকারের কর্মচারী নন, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। ভুলে যাবার কারণে যত সব বিপত্তি ঘটছে।
মানুষ প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। দেশ অনৈতিক ও অনুচিত কর্মকাÐে ভরে গেছে। সত্য মিথ্যায় পরিণত হচ্ছে, মিথ্যাকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হচ্ছে। দেশের মানুষ ন্যায়বিচার ও ন্যায্য অধিকার বঞ্চিত হয়ে, ক্ষমতাহীন হয়ে দিন কাটাচ্ছে। জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস, সংবিধান স্বীকৃত অধিকার হলেও জনগণ সে মালিকানা হারিয়ে ফেলেছে। জনগণকে ক্ষমতাশালীরা আর তোয়াক্কা করে না। ভোটের জন্য তাদের কাছে যেতে হয় না। দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা না থাকায় দেশের সর্ব সেক্টরে দুর্নীতি, দুঃশাসন জেঁকে বসেছে। দুর্নীতি এত ব্যাপক আকার ধারণ করেছে যে, বিনা নজরানায় একটা পিয়নের চাকরিও আশা করা যায় না। জনগণের করার কিছু নাই। ভোটের মাধ্যমে তারা যে, অধিকার ফলাবে তার উপায় নাই। ভোটের মহড়া সেরে নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা করা হচ্ছে। গাজীপুর নির্বাচনটি সকলে প্রত্যাশা করেছিল অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু মানুষ অবাক ও বিস্ময়ে লক্ষ করল, নির্বাচনী তামাশার নাটক। একদলীয় একপক্ষীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান হলো, যার রেজাল্ট সকালে জানা গিয়েছিল। দেখা গেল, সকাল থেকে আ.লীগের কর্মীরা নৌকার স্টিকার লাগিয়ে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে এজেন্ট না থাকায় তারা পরমানন্দে উল্লাস করছে। জাল ভোটের মহোৎসব হয়। তাদের নাচন কুদনে গাজীপুরের নির্বাচনী মাঠ সরগরম হয়ে ওঠে। বিজয়োল্লাসে আ.লীগ নেতাকর্মীরা সারাদিন ফুরফুরে মেজাজে কাটায়। আমি এক লেখায় বলেছিলাম, দেশের রাজনৈতিক ময়দানে কবরের নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। বাইরে থেকে কবরের ভেতরের অবস্থা আঁচ-অনুমান করা যায় না। গাজীপুরে ঠিক তেমনি এক পক্ষের আনন্দ উল্লাস দেখা গেলেও বিরোধী শিবিরে কবরের নিস্তব্ধতা বিরাজ করছিল। কারণ তাদের করার কিছু ছিল না। মামলা, হামলা, গ্রেফতার, অত্যাচার-নির্যাতনের ভয়ে তারা যতটা পেরেছে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলেছে। আ. লীগ নেতাকর্মীরা কেন্দ্রে অবস্থান করে ভোট দাবি করেছে, নির্বাচনী ব্যুথে প্রবেশ করে জাল ভোট দিয়ে বাক্স ভরাট করেছে। কেন্দ্রের বাইরে জটলা পাকিয়ে পাহারা দিয়েছে। শোনা যায়, আগের রাতে বাক্স ভরাট করা হয়েছে অনেক কেন্দ্রে। এজেন্ট না থাকায় এসব অপকর্ম ধরা পড়েনি। ফলে ভোটের বাক্স ছিনতাই বা বিএনপি নেতাকর্মীদের মারধর করার প্রয়োজন হয়নি। তারা নির্বিঘœ-নিশ্চিন্তে বিজয়ের প্রয়োজনাতিরিক্ত ভোট সংগ্রহ করতে পেরেছে। অথচ দু’লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে আ.লীগ প্রার্থীর বিজয় কেবল অসম্ভবই নয়, অবাস্তবও বটে। আগের নির্বাচনে অধ্যাপক মান্নান লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে জিতেছিল। এবার কি এমন পরিবর্তন ঘটল যে, গাজীপুরের মানুষ আ.লীগ প্রার্থীকে দু’লক্ষাধিক ভোটে বিজয়ী করল।
আমি জুন মাসের ২৮, ২৯ ও ৩০ তিনদিন ঢাকা ছিলাম। আমার কাজের ফাঁকে গাজীপুর নির্বাচন ও উন্নয়ন সম্পর্কে অনেক তথ্য সংগ্রহ করলাম। এসব তথ্যের ভিত্তিতে আজকের লেখা। গাজীপুরের মেয়র মান্নান সাহেব তার অর্ধেক সময় জেলখানায় কাটিয়েছেন। তার বরাদ্দ তুলনামূলকভাবে কম ছিল। বাকী সময় সরকারের মনোনীত ব্যক্তি গাজীপুর সিটির উন্নয়ন কর্মকাÐ পরিচালনা করেছেন, লোকের মুখে শুনলাম উন্নয়ন বলতে শুধু চাপাবাজি। সেখানকার রাস্তাঘাট খানাখন্দে ভরা। বৃষ্টি হলে চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। সরকারের উন্নয়নকে আমি দেখি ঋণ করে ঘি খাবার মতো। তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের বার বার দাম বৃদ্ধিতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি, খাল বিল, নদী, নালা, পুকুর, ডোবা প্রভৃতি জায়গায় লাশের মিছিল। একজন নবজাতকের মাথায় ৬০/৭০ হাজার টাকার ঋণ। ট্যাক্স বৃদ্ধির পরিমাণ অসহনীয়। বিদ্যুতের বিল আগে দিতাম ৩০০/৪০০ টাকা। বর্তমানে বাড়াতে বাড়াতে সে বিল দিতে হয় ১৮০০/২০০০। গ্রামে একবিঘা জমি দলিল করতে আগে লাগত ৪০০০/৫০০০ টাকা। বর্তমানে লাগে ৩৫০০০/৪০০০০ হাজার টাকা। প্রতিটি সেক্টরে চলছে দুর্নীতির মহোৎসব। কোনো সেক্টরে সুশাসন নাই। সরকারের দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা না থাকায় দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। তারা জনগণকে ভয় পায়। খুলনা সিটির পর মানুষ আশা করেছিল রাজধানীর কাছে হওয়ায় গাজীপুরের নির্বাচন অবশ্যই ভালো হবে। কিন্তু যাহা বাহান্ন, তাহা তিপান্ন। গাজীপুরের নির্বাচন জনগণকে হতাশ করেছে। ওপরে ছিমছাম নিরবতা, ভেতরে চরম ভীতি, সন্ত্রাস, জোর জবরদস্তি চলেছে।
গাজীপুরের নির্বাচনটি এ সরকারের আমলের নির্বাচনের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে পরিচিতি পাবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কথাবার্তা হুঙ্কার ও দম্ভোক্তিতে মনে হয়েছিল, এ কমিশন সত্যিকার আন্তরিকতার সাথে নির্বাচনটি পরিচালনা করে নিজের গ্রহণযোগ্যতা ও আন্তরিকতার পরিচয় দেবে। কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি। গাজীপুরে আবার গণতন্ত্র হেরে গেছে, আ.লীগের ছলচাতুরী ও চৌর্যবৃত্তির নিকট গণতন্ত্র পরাজিত ও নতজানু হয়েছে। মানুষ ভোট দিতে যায়নি। কোথাও কোথাও ৪০% নিচে বা ৩৫% এর নিচে ভোট পড়েছে কোথাও ৯৯%, পড়েছে না বলে বাক্সে ভোট ফেলা হয়েছে। ভোটের হার এত কম বেশি হওয়ার কারণ মানুষ অরাজকতা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য প্রত্যক্ষ করে ভোটদান থেকে বিরত থেকেছে। সংবিধানের চেতনা থেকে আমরা বহুদূরে চলে গেছি। সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র’। কিন্তু সে গণতন্ত্র আজ উধাও। খুলনা, গাজীপুর, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন কোথাও জনগণের প্রয়োজন পড়েনি। ‘সংবিধানের লালন, রক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধানের শপথটি নির্বাচন কমিশনারগণ ভুলে গেছেন। তারা সরকারকে তুষ্ট করতে যেন ব্যস্ত। অনেকে বলছেন, নির্বাচনে বিরাট ঘাটতি রয়েছে। অনেকে বলছেন, গাজীপুরে কোন নির্বাচনই হয়নি। অথচ একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, কুমিল্লা, রংপুর ও নারায়ণগঞ্জের চেয়ে গাজীপুরের নির্বাচন ভালো হয়েছে। তোষামোদি ও তেলমর্দনের এর চেয়ে নিকৃষ্ট উদাহরণ আর হতে পারে না। সারাদেশের সাথে আন্তর্জাতিক মহল থেকে যেখানে নির্বাচনটিকে প্রশ্নবিদ্ধ ও জালিয়াতির নির্বাচন বলা হচ্ছে, সেখানে নির্বাচন কমিশনের সাফাই গাওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। এদেশে অনেক ভালো নির্বাচন হয়েছে। ১৯৯১ সালে বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের পরিচালনায় চমৎকার জাতীয় নির্বাচন অনুুষ্ঠান সম্ভব হয়েছিল। বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের সরকার তত্ত¡াবধায়ক পদ্ধতির ছিল না। কিন্তু তিনি ছিলেন দলমতের ঊর্ধ্বের একজন নিরপেক্ষ মানুষ। কই সে নির্বাচন নিয়ে তো কেউ জোরালো কোন প্রতিবাদ করেনি। বরং দেশ-বিদেশে বহুল প্রশংসিত হয়েছে ‘৯১ সালের নির্বাচনটি। সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা থাকলে যে কোন কাজকে সুষ্ঠু, সুন্দর ও সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য করা যায়। গাজীপুরে নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার অভাব দারুণভাবে পরিলক্ষিত হয়। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রæতি দেবার পর নির্বাচন কমিশনের ভূমিকায় মানুষ হতাশ। এভাবে নির্বাচনকে কলুষিত করে জাতীয় নির্বাচন পরিচালনার বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে নির্বাচন কমিশনাররা।
খুলনা ও গাজীপুর নির্বাচন সম্পর্কে মার্কিন রাষ্ট্রদূত একটু সমালোচনা করায় সরকার খুবই অখুশি। অথচ আমরা তো বিপদে, আপদে, সাহায্য, সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য প্রভাবশালী দেশের কাছেই ধরণা দেই। সরকার বা বিরোধী দল উভয়ে আন্তর্জাতিক একটা সাটিফিকের্টের জন্য ছটফট করে। বহু ক্ষেত্রে তাদের সার্টিফিকেট পেলে সরকার খুশি হয় এবং তা জোরেশোরে প্রচার করে। বিরোধীদলও বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে শক্তিধর রাষ্ট্র ও সংস্থাগুলোর সাথে দেন দরবার করে। এটি সব সময় সব দলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সংকটকালে তাদের সাহায্য সহযোগিতা চাইব, আর তারা যখন গণতন্ত্র হরণ বা মানবাধিকার লংঘন, দুর্নীতি হতে দেখে সমালোচনা বা উপদেশ দেবে, তা প্রত্যাখান করব এটি অনুচিত কর্ম। দেখতে হবে বিদেশিরা গণতন্ত্র হরণ, মানবাধিকার লংঘন বা দুর্নীতির সূচক বৃদ্ধিতে সমালোচনা করছে, তা যথার্থ কিনা। গাজীপুর নির্বাচন নিয়ে বার্নিকাট একা নন, ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রæপ, সাংবাদিকরাও প্রশ্ন তুলেছেন। কমিশন কর্তৃক নিয়োজিত ইলেকশান ওয়ার্কিং গ্রæপ ৪৬.৫০% কেন্দ্রে অনিয়মের কথা বলেছেন। অনেকে পত্রিকা নিবন্ধ, প্রবন্ধ লিখে ইলেকশানটির পোস্ট মর্টেম করেছেন। আমরা ভালো নির্বাচন করে দেখালে কেউ সমালোচনা করতে পারবে না বা করলেও তা গ্রাহ্য হবে না। ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ প্রভৃতি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশের কেউ সমালোচনা করতে পারেনি, বরং ঐসব নির্বাচন দেশ-বিদেশে বহুল প্রশংসিত হয়েছে, অনেক দেশ তত্ত¡াবধায়ক মডেলে নির্বাচন করেছে ও পাকিস্তানে ঐ মডেলে নির্বাচন অনুষ্ঠান হতে চলেছে। আমাদের সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে সমালোচনার হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে আরও আন্তরিক ও সদিচ্ছা প্রসূত কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে। সামনে জাতীয় নির্বাচন, এই নির্বাচন এমনভাবে অনুষ্ঠান জরুরি হয়ে পড়েছে যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে। তার জন্য যা দরকার সরকারকে করতে হবে। বিনাভোটে নির্বাচনের কলঙ্ক ও বোঝা নামাতে হলে, অবশ্যই নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে।
লেখক: প্রফেসর (অব.), দর্শন বিভাগ ও সাবেক ডিন, কলা অনুষদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন