বছরের শুরু থেকেই বাণিজ্যের প্রশ্নে শত্রু মিত্র সব দেশের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভারতের ক্ষেত্রে যেমনটা হয়েছে, একদিকে দেশটির সাথে নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তি করছে যুক্তরাষ্ট্র, অন্যদিকে ভারতের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ককে জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে। তাদের দ্বিমুখী এই নীতি অনেককেই হতভম্ব করে দিয়েছে।
কয়েকটি পয়েন্ট
প্রথম প্রশ্ন হলো কেন ট্রাম্প প্রশাসন বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছে। তিনটা সম্ভাব্য কারণ রয়েছে যেগুলো বিবেচনা করার মতো: একটা হলো প্রকৃত সমস্যা, যেটা চীনের সাথে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে রয়েছে। দ্বিতীয়টা হলো কাল্পনিক সমস্যা, বিভিন্ন দেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে অতিরিক্ত মাথা ঘামানো। তৃতীয় হলো সোজাসাপটা বাণিজ্যের রাস্তা বন্ধ করে দেয়া।
তথ্য প্রমাণ বলছে এই শেষের বিষয়টিই বেশি সত্য। সোজাসাপটা সংরক্ষণবাদের জন্যই এগুলো করা হচ্ছে। চীনের অর্থনৈতিক কিছু আচরণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ রয়েছে। চীন যুক্তরাষ্ট্রের মেধাসত্ব হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু এ বিষয়গুলোতে তেমন কিছু করতে পারছে না যুক্তরাষ্ট্র। বছর খানিক আগে চীন তাদের স্টিলের অতিরিক্ত উৎপাদনের বিষয়ে চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছিল কিন্তু শুল্কের লোভে সেটা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন ট্রাম্প। তাছাড়া বিশ্বের বাণিজ্য সঙ্কটগুলো নিয়ে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কিছু করতেও পারছেন না ট্রাম্প। দীর্ঘদিনের বাণিজ্য সহযোগী ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কানাডার মতো দেশের সাথে বিবাদে যাওয়ায় যৌথভাবে চীনের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপও নিতে পারছে না তারা।
তাছাড়া, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক নীতি দ্রæত বদলায়। মে-জুনে কানাডাসহ অন্যান্য দেশের জন্য স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের শুল্ক বাড়িয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তি ছিল, এটা যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি করছে। কিন্তু মাসের শেষেই জি-৭ বৈঠকে মার্কিন অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কানাডার সংরক্ষণবাদী ডেইরি খাতের কথা উল্লেখ করেন ট্রাম্প।
সিস্টেমের ভেতরে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে নিয়ন্ত্রণের জন্য তাদের নিজেদেরই রাজনৈতিক সিস্টেম রয়েছে। প্রেসিডেন্ট খোদ সংরক্ষণবাদী হলেও কিভাবে একজন মাত্র ব্যক্তি একটা দেশের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যিক অবস্থানকে এমন নাটকীয়ভাবে বদলে দিতে পারে? মার্কিন সংবিধানের দিকে তাকালে এই জটিলতা আরও বাড়বে। কারণ শুল্ক আরোপের ক্ষমতা কংগ্রেসের হাতে দেয়া আছে।
১৯৩০ সালে সংরক্ষণবাদী নীতি নেয়ার পর থেকে কংগ্রেস অভ্যন্তরীণভাবে বাণিজ্যের দায় দায়িত্ব নির্বাহী বিভাগের উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে আসছে। যুক্তি ছিল যে কংগ্রেসের উপর দায়িত্ব থাকলে কংগ্রেস সদস্যদের নিজ নিজ এলাকার স্বার্থ তাদের মতামতের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট আরও বিস্তৃত জাতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। এখন এমন আইনি ব্যবস্থা রয়েছে যেখানে প্রেসিডেন্টের সংরক্ষণবাদী অবস্থানের বিরুদ্ধে কংগ্রেস খুব সামান্যই ভূমিকা রাখতে পারে। আগের প্রেসিডেন্টরা এই ক্ষমতা তেমন একটা ব্যবহার করেননি।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থার দিকে তাকালে বাণিজ্য যুদ্ধের সীমাবদ্ধতাটাও চোখে পড়ে। জেনারেল এগ্রিমেন্ট অন ট্যারিফস অ্যান্ড ট্রেড অনুযায়ী বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা কোন বড় দেশের উপর কোন বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে না। বিশ্বের বড় বাণিজ্য শক্তিগুলোর মধ্যে বিরোধ হতেই পারে, কিন্তু ডাবিøউটিও ডিসপিউট মেকানিজম এই ধরনের বিবাদ মেটাতে দ্রæত কাজ করতে পারে না।
সামনে কি অপেক্ষা করছে
আমরা প্রশ্ন করতে পারি: এর পর বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য কি অপেক্ষা করছে? নিকট ভবিষ্যতে আমরা হয়তো উত্থান দেখবো। চীনের কাছ থেকে আমদানিকৃত ৩৪ বিলিয়ন ডলারের উপর শুল্ক বাড়িয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যেটা ৬ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে। একই ধরণের ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছে চীন। তার বিরুদ্ধেও আবার পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প।
অটো খাতে শুল্ক আরোপের জন্য জাতীয় নিরাপত্তার যুক্তিও ব্যবহার করছেন ট্রাম্প। কিছু রিপোর্টে বলা হয়েছে, নভেম্বরের শুরুতে মার্কিন মিড-টার্ম নির্বাচনের আগেই এই ধরনের শুল্ক কার্যকর করতে চান তিনি। মানের দিক থেকে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম বাণিজ্যের মতো হলেও পরিমাণের দিক থেকে এটা হবে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অটো বাণিজ্যের আকার অনেক বড়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন হুমকি দিয়েছে, অটোর উপর শুল্ক আরোপ করা হলে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের পাল্টা শুল্ক আরোপ করবে তারা।
ট্রাম্প যে তার নীতি থেকে সরে আসবেন, এ ধরনের লক্ষণ খুব সামান্যই দেখা যাচ্ছে। যদিও প্রাইভেট সেক্টর এবং কংগ্রেস সদস্যদের তরফ থেকে এ ব্যাপারে চাপ রয়েছে। মার্কিন নীতিতে যদি কোন পরিবর্তন আনতে হয়, তাহলে বাণিজ্য নীতির উপর কংগ্রেসের শক্তিকে জোর করে প্রয়োগ করে সেটা করতে হবে। এখন পর্যন্ত সেটা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না, যদিও চারদিক থেকে চাপ ঠিকই বাড়ছে। সূত্র ঃ এসএএম।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন