বাংলাদেশের রফতানি আয় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারলেও আগের অর্থবছরের চেয়ে বেড়েছে। প্রবৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ। প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে চীন ও মিয়ানমার বাদে অন্যসব দেশে বাংলাদেশের রফতানি বেড়েছে গত অর্থবছরে। বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি পণ্য রফতানি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে ৫ হাজার ৯৮৩ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। আগের বছরের চেয়ে রফতানি বৃদ্ধির পরিমাণ ৩৬ মিলিয়ন ডলার বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের পর সর্বোচ্চ আয় এসেছে জার্মানি ও যুক্তরাজ্য থেকে। বিগত অর্থবছরে এ দুই দেশ থেকে আয় হয়েছে যথাক্রমে ৫ হাজার ৮৯০ ও ৩ হাজার ৯৮৯ মিলিয়ন ডলার। ফ্রান্স, স্পেন, ইতালি, কানাডা, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া ও রাশিয়ায় বাংলাদেশের পণ্য রফতানিও বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করে চীন থেকে। দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু চীনে বাংলাদেশি পণ্যের রফতানি আয় আগের বছরের চেয়ে কমেছে। একসময় ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি হতো। এখন সে স্থানে রয়েছে চীন। কিন্তু চীনে বাংলাদেশি পণ্য রফতানি বাড়ার বদলে কমে যাওয়া হতাশাজনক। এশীয় দেশগুলোর মধ্যে বিগত অর্থবছরে জাপানে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি পণ্য রফতানি হয়েছে। গত অর্থবছরে জাপানে রফতানি করে বাংলাদেশ ১ হাজার ১৩২ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এ পরিমাণ আগের বছরের চেয়ে ১১৯ মিলিয়ন ডলার বেশি। বিশাল দেশ চীনে বাংলাদেশি পণ্যের রফতানি এর প্রায় অর্ধেক। গত অর্থবছরে চীন থেকে অর্জিত হয়েছে ৬৯৫ মিলিয়ন ডলার। ভারতে বাংলাদেশি পণ্যের রফতানি আয় ৮৭৩ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের রফতানি আয় এখনো তৈরি পোশাকনির্ভর। আশার কথা, ওষুধসহ বিভিন্ন পণ্যের রফতানিও বাড়ছে। রফতানি আয় বাড়াতে ওষুধসহ অপ্রচলিত পণ্য আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে মোট রফতানি আয় হয়েছে ৩০৩ কোটি ১৯ লাখ ২০ হাজার ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের একই সময়ে আয়ের পরিমাণ ছিল ২৫১ কোটি ৫৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার। এ হিসাবে সেবা খাতে রফতানি আয় বেড়েছে ২০.৫ শতাংশ। ইপিবির পরিসংখ্যান মতে, একক মাস ভিত্তিতে মার্চে সেবা রফতানির মাধ্যমে আয় হয়েছে ৩৯ কোটি ৬৫ লাখ ৮০ হাজার ডলার। গত বছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ২৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এ হিসাবে মার্চে সেবা খাতে রফতানি আয় বেড়েছে ৪২.১৪ শতাংশ।
যেসব সেবা পণ্যের রফতানি থেকে আয় হয়েছে এগুলোর মধ্যে রয়েছে ম্যানুফ্যাকচারিং সার্ভিসেস অন ফিজিকাল ইনপুটস, মেইনটেন্যান্স অ্যান্ড রিপেয়ার, ট্রান্সপোর্টেশন, কনস্ট্রাকশন সার্ভিসেস, ইনস্যুরেন্স সার্ভিসেস, ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসেস, চার্জেস ফর দি ইউজ অব ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি, টেলিকমিউনিকেশন সার্ভিস, অন্য ব্যাবসায়িক সেবা, পার্সোনাল-কালচার-রিক্রিয়েশনাল ও গভর্নমেন্ট গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস। সেবা খাতের রফতানি আয়ের মধ্যে ২৯৭ কোটি ৫৩ লাখ ডলারই এসেছে সরাসরি সেবা খাত থেকে। অর্থাৎ মোট রফতানির ৯৮.১৩ শতাংশই এসেছে সরাসরি সেবা খাত থেকে। বাকিটা দেশের বন্দরগুলোতে পণ্যবাহী জাহাজগুলোর কেনা পণ্য ও সেবা এবং মার্চেন্টিংয়ের অধীনে পণ্য বিক্রির আয়। কোনো অনাবাসীর কাছ থেকে পণ্য কিনে একই পণ্য কোনো অনাবাসীর কাছে বিক্রি করাকে মার্চেন্টিং বলে। এই প্রক্রিয়ায় মোট বিক্রি থেকে মোট ক্রয় বাদ দিয়ে নিট মার্চেন্টিং রফতানি আয় হিসাব করা হয়।
দেশের স্থল, সমুদ্র বা বিমানবন্দরে বিদেশি পরিবহনগুলো সেসব পণ্য ও সেবা যেমন জ্বালানি তেল ও মেরামত সেবা কিনে থাকে সেগুলোকে সেবা খাতের আওতায় ধরা হয়েছে। সেবা খাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় হয়েছে সরকারি পণ্য ও সেবা রফতানি থেকে। এ উপখাত থেকে এসেছে ১৩১ কোটি ৩২ লাখ ডলার।
অন্য উপখাতগুলোর মধ্যে ‘অন্যান্য ব্যবসায় সেবা’ থেকে এসেছে ৫০ কোটি ২৮ লাখ ডলার। টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি থেকে আয় হয়েছে ৩৭ কোটি ৬৫ লাখ ডলার। বিভিন্ন ধরনের পরিবহন সেবা (সমুদ্র, বিমান, রেল এবং সড়ক) থেকে ৪৩ কোটি ৬৩ লাখ ডলার আয় হয়েছে। আর্থিক সেবা খাত থেকে আট কোটি ৮৫ লাখ ডলার এবং ভ্রমণ সেবা উপখাত থেকে ২৯ কোটি ডলার রফতানি আয় হয়েছে। এই ৯ মাসে বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে দুই হাজার ৭৪৫ কোটি ১৫ লাখ (২৭.৪৫ বিলিয়ন) ডলার। তার সঙ্গে সেবা রফতানির আয় ৩০৩ কোটি ১৯ লাখ ডলার যোগ করে দেশের মোট রফতানি আয় হয়েছে তিন হাজার ৪৮ কোটি ৩৪ লাখ (৩০.৪৮ বিলিয়ন) ডলার।
পরিশেষে বলছি, রফতানি আয় বাড়াতে ল্যাটিন আমেরিকা ও আফ্রিকার বাজারে প্রবেশের উদ্যোগও নেওয়া দরকার। বিশেষ করে চীন যাতে আরও বেশি বাংলাদেশি পণ্য আমদানি করে সে ব্যাপারে দূতিয়ালি জোরদার করার উদ্যোগ নিতে হবে।
লেখক: অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ও সভাপতি, সাউথ এশিয়ান ল’ ইয়ার্স ফোরাম
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন