শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

কর্ণফুলীর ভাঙনে দিশেহারা মানুষ

রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) থেকে নুরুল আবছার চেীধুরী | প্রকাশের সময় : ৩ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০২ এএম

অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন, অতি বৃষ্টি ও কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ঝুঁকিমুক্ত করতে ১৬টি স্প্রিলওয়ে দিয়ে পানি কর্ণফুলী নদীতে ছেড়ে দেয়া স্রোত রাঙ্গুনিয়ার তীরবর্তী প্রবল এলাকায় ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। কর্ণফুলী নদীর সাথে সংযুক্ত শিলক ও ইছামতি নদীর দু’পাড়ে ইতিমধ্যে অনেক জমি বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দক্ষিণ - মধ্যমের একাধিক গ্রাম। নদী ভাঙ্গনের ভয়াবহতা যে কোন সময়ের চেয়ে অতিরিক্ত বলে স্থানীয় ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখাগেছে, কোদালার রাইখালী, বোরারবাড়ি, কোদালা বাজার, শিলকের ডংখাল, ব্যুহচক্র বাজার, ফকিরা ঘাট, নয়া রাস্তার মাথা, সরফভাটর মরাখালের মুখ, কানুরখীল, ভ‚মিরখীল, মৌলানা গ্রাম, পাইট্টালীরমুখ, চন্দ্রঘোনার মিশন ঘাট, দোভাষী বাজার, আমতলী, শ্যামাপাড়া, ফকিরপাড়া, খন্দকারপাড়া, মিনারপাড়া, কদমতলী, মরিয়ম নগরের কাটাখালী, মরম পাড়া, ফরাশ পাড়া, কুমার পাড়া, রশিদিয়া পাড়া, ইছামতি, পারুয়ার ঘাটচেক, ইছাখালী, পোমরার গোডাউনঘাট, গোচরা বাজার। সবচেয়ে বেশী ভাঙ্গন কবলিত বেতাগীর মাতব্বর বাড়ি, চিরিয়া, মৌলভী সাহেবের ঘাট, চান্দরবাড়ি, বারুইপাড়া, বড়–য়াপাড়া, কুলালপাড়া, কাটাখালী।
ইছামতি নদীর তীব্র ভাঙ্গনে রাজা নগর ইউনিয়নের বগাবিলী উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয় অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলাচলের একমাত্র সড়কটি নদী ভাঙ্গনে বিলীন হওয়ার পথে। ভাঙ্গন প্রতিরোধ করা না গেলে সড়ক ধসে গিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দু’টি নদীতে তলিয়ে যাবে বলে স্কুলের শিক্ষকরা জানান। কর্ণফুলী নদী ভাঙ্গনে চন্দ্রঘোনা বন শুল্ক ও পরীক্ষণ ফাঁড়ির বন অফিসটি নদীর গর্ভে চলে যাচ্ছে। তার সংলগ্নে প্্ূর্বপাড়া মুক্তিযোদ্ধা জামাল উদ্দিনের বাড়ী এলাকা, জেসি দাশ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্যামাপাড়া এলাকা জরুরী ভাবে ভাঙ্গনরোধে ব্যবস্থা নেয়া না হলে পুরো সরকারী বন অফিসটি বিলীন হবে। চন্দ্রঘোনা নবগ্রামের বাসিন্দা মিয়া নেতা বলেন, চন্দ্রঘোনা বন ষ্টেশনটি অত্যান্ত পুরানো ও এই অফিস থেকে সরকার বছরে লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব আদায় করা হচ্ছে অথচ অফিসটি বিলীন হওয়ার পথে। তিনি দু:খ করে বলেন, আমি একজন শাসক দলের সক্রিয় কর্মী হওয়ার সত্বেও আমার ঘরবাড়ী নদীতে বিলীন হওয়ার পথে। কোদালা সেন পাড়ার অশোক কুমার শীল বলেন, একমাত্র শশ্মানহোলা ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে। ধোপাঘাট, সাতঘর পাড়া, শীল পাড়া, তালুকদার বাড়ি, সেন বাড়ি, বল বাড়ি, ব্রাক্ষণ বাড়ি, মুসলিম বাড়ি ও পূর্ব পাড়ার ৫শ পরিবার নদী ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে।
ইসলামপুর ইউনিয়নের কৃষক মোহাম্মদ সেলিম বলেন, পানির স্রোতে ইছামতি নদীর এশাধিক স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে শতশত বাড়িঘর ও ২০/২৫ একর জমি বিলীন হয়ে গেছে। চলতি অর্থবছরে ১৫টি স্থানে ইছামতি নদী তলদেশে উচ্চ সম্পন্ন ড্রোজার মেশিন বসিয়ে লক্ষ লক্ষ ঘনফুট বালু উত্তোলন করে পাচার করা হয়েছে। অতিরিক্ত বালু উত্তোলনের ফলে নদী ভাঙ্গন বৃদ্ধি পেয়েছে বলে তিনি জানান। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা প্রশাসন বালু পাচার বন্ধে নদীতে একাধিকবার অভিযান চালিয়ে ড্রেজার মেশিন জব্দ করে আগুনে পুঁড়িয়ে ফেলেন। অভিযানের কয়েক দিন পর্যন্ত বালু পাচার বন্ধ রাখা হলেও পরবর্তীতে আবার চালু করা হয়।
রাজানগর ইউনিয়নের মুছা সওদাগর জানান, নদীভাঙ্গন রোধে সরকার গত সাড়ে বছরে শত কোটি টাকার উপরে সিসি বøক ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। নদী থেকে কতিপয় শাসকদলের পরিচয় দানকারী গুটি কয়েক ব্যক্তি বেপরোয়া বালু উত্তোলন করার কারনে সরকারের মহতি উদ্যোগ ভেস্তে যেতে বসেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন