বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

পাল্টাপাল্টি নয়, এখনই দরকার সমঝোতামূলক সমাধান

| প্রকাশের সময় : ৫ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০২ এএম

কুর্মিটোলায় বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সারাদেশে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চলছে। শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগ ও ঘাতক চালকের ফাঁসিসহ কতিপয় দাবী নিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে। গতকালও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তারা নিজেরা গাড়ির চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স চেকসহ কোন যানবাহন কীভাবে কোন লেনে চলাচল করবে, তা ঠিক করে দিচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের দাবী মেনে নেয়ার আশ্বাস দিয়ে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হলেও, তারা রাজপথ ছাড়েনি। তাদের এ আন্দোলন কবে কীভাবে শেষ হবে, তা এখন অনেকটা অনিশ্চিত। ছাত্রদের এ আন্দোলনের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা হঠাৎ করেই বাস-ট্রাক চলাচল বন্ধ করে দিয়ে জনগণকে জিম্মী দশায় ফেলে দিয়েছে। পরিবহন খাতে অরাজকতা ও নৈরাজ্য নিয়ে ক্ষুদ্ধ মনোভাব ব্যক্ত করেছেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের নেতারা। নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেছেন, তিনি আন্দোলনকে উসকে দিয়েছেন। তার কারণেই কোমলমতি ছেলেমেয়েরা রাজপথে নেমেছে। পরিবহনে বিশৃঙ্খলার জন্যও নৌমন্ত্রীকে দায়ী করে তারা আরো বলেছেন, পরিবহন খাত একজন ব্যক্তির কাছে এভাবে জিম্মি হয়ে থাকলে যে কোনো সময় সরকার বেকায়দায় পড়তে পারে। এর সুরাহা হওয়া উচিত। এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে ক্ষমতাসীন দল ও তাদের ছাত্রসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে রাখতে বলেছে পুলিশ সদর দপ্তর। এ থেকে প্রতীয়মাণ হচ্ছে, আন্দোলন দমাতে পুলিশ প্রশাসন এক ধরনের শক্তি প্রয়োগের চিন্তা-ভাবনা করছে, যা মোটেও কাম্য হতে পারে না। এতে বরং পরিস্থিতিকে আরো অবনতির দিকে নিয়ে যাবে।
বহু বছর ধরেই পরিবহন খাতে চরম বিশৃঙ্খল পরিবেশ বিরাজ করছে। লাইসেন্সবিহীন বেপরোয়া চালকদের দৌরাত্মে প্রতিদিনই সড়কে প্রাণ ঝরছে। গত শুক্রবারও সড়ক দুর্ঘটনায় সারাদেশে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাজধানীর মগবাজারস্থ ওয়্যারলেস এলাকায় বেপরোয়া এক বাস চালক এক মোটরসাইকেল চালককে চাপা দিলে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। বিক্ষুদ্ধ জনতা বাসটিতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। দেখা যাচ্ছে, শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনেও বাসচালকদের বেপরোয়া মনোভাবের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। এর মধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর ইন্ধনে অঘোষিতভাবে পরিবহন ধর্মঘট চলছে। এতে জনগণের দুর্ভোগের কোনো অন্ত নেই। এর মধ্যেই পণ্যমূল্য বাড়তে শুরু করেছে। পরিবহন খাতের বিশৃঙ্খলা নিয়ে বছরের পর বছর ধরে সচেতন মহল আন্দোলন-সংগ্রাম এবং বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন পরামর্শ দিলেও তাতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের কোনো হুশ হয়নি, বরং দিন দিন পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় অসংখ্য মানুষ বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছে। গতকাল একটি দৈনিকে যাত্রী কল্যাণ সমিতির পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বলা হয়েছে, গত সাড়ে তিন বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৫ হাজার ১২০ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছে ৬২ হাজার ৪৮২ জন। প্রতিদিন গড়ে মৃত্যু হয়েছে ২০ জনের। দুর্ঘটনায় বছরে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে ৪০ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ২ থেকে ৩ শতাংশ। এ দুর্ঘটনার জন্য ৩৭ শতাংশ দায়ী চালকের বেপরোয়া মনোভাব। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে, বেপরোয়া চালকদের বিরুদ্ধে শাস্তি নিশ্চিত করাসহ পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য দাবী ও আন্দোলনে ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়নি। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এক্ষেত্রে চরম উপেক্ষা ও উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বিরাজমান অনিয়মের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বরং বেপরোয়া চালকরা প্রশ্রয় পেয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এবার এর বিরুদ্ধে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমেছে। তাদের মূল লক্ষ্য, বেপরোয়া চালকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর শাস্তির বিধান এবং সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। তাদের এ দাবীর পক্ষে বিভিন্ন পেশাজীবী, নাগরিক সমাজ এবং সাধারণ মানুষও একাত্মতা প্রকাশ করেছে। দেখা যাচ্ছে, তাদের এ আন্দোলনের বিপক্ষে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা নিরাপত্তার অজুহাতে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়ে জনগণের ওপর প্রতিশোধ নিতে চাইছে। অথচ শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে এবং তারা কোনো ধরনের বিশঙ্খলা সৃষ্টি করছে না। তারা সঠিকভাবে সড়কে গাড়ি চালানোর ব্যবস্থার পাশাপাশি চালকদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, শিক্ষার্থীদের পক্ষে অনির্দিষ্ট কালের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় এবং এর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে অঘোষিতভাবে পরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেয়ার গণবিরোধী কাজও চলতে দেয়া যায় না। এর একটা বিহিত হওয়া দরকার। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে সংকট আরও গভীর হবে এবং তা হওয়ার আগেই সুষ্ঠু সমাধান করা জরুরী। সরকারের পক্ষ থেকে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে আন্দোলন দমানোর চিন্তাভাবনা সঠিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে না। এতে পরিস্থিতির অবনতি হবে। আমরা মনে করি, এখনই এর একটি সমঝোতামূলক সমাধান হওয়া জরুরী। শিক্ষার্থীদের সাথে সমঝোতার মাধ্যমে বাস্তব পদক্ষেপ নিয়েই এ সমস্যার সুরাহা করতে হবে। যত শিঘ্র সম্ভব তা করতে হবে। সময়ক্ষেপণ পরিস্থিতিকে অনাকাক্সিক্ষত পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে, যা কারো জন্যই মঙ্গলজনক ও কাম্য হবে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন