চলমান বন্যায় ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর ২৯টি স্থানে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে ২০টি স্থানে বড় ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়ে বন্যার পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। আর বাকি ৯ স্থানে বেড়িবাঁধ ভাঙ্গনের পাশাপাশি ফাটলের সৃষ্টি হলেও লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে পারেনি। এদিকে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে বন্যায় ফেনীর এ অঞ্চলে মুহুরী, কহুয়া আর সিলোনিয়া নদীর ভাঙ্গনে বিস্তীর্ণ অঞ্চল পানির নিচে তলিয়ে যায়। লোকালয়ে পানি প্রবেশের ফলে ফসলহানি, বাড়িঘর ভাঙ্গনের মুখে পড়ার পাশাপাশি ভেসে যায় পুকুরের মাছ। এছাড়া ফলফলাদি এবং মৌসুমী ফসলের সীমাহীন ক্ষতি হয়। নদী ভাঙ্গনের এ ধারা চলছে বছরের পর বছর ধরে। গত ১০ বছরে ৩ নদীর ভাঙ্গনে গৃহহীন হয়েছে শত শত মানুষ। বিলীন হয়েছে প্রচুর ঘরবাড়ি আর অপুরনীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে আবাদি ফসল আর ব্যবসা বাণিজ্যের, বন্যার ফলে ভেসে গেছে শত শত পুকুরের মাছ আর নিঃস্ব হয়েছে অনেক মাছচাষী। গত ১০ বছরে স্থানীয় জনগণ এবং সরকারি মিলিয়ে লোকসানের পরিমাণ প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। প্রতি বছর এ ৩ নদীর ভাঙ্গা বাঁধগুলো মেরামতে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে।
এ বাঁেধর ব্যাপারে স্থায়ী কোন সমাধান না হওয়ায় প্রতি বছর নতুন করে বাঁধ নির্মাণ করতে হচ্ছে। চলতি বর্ষা মৌসুমের বন্যায় পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় মুহুরী নদীতে ধনীকুন্ডা ব্রীজের সংলগ্ন শালধর, দূর্গাপুর, পশ্চিম অলকা, উত্তর দৌলতপুরে ৩টি, দক্ষিণ দৌলতপুরে ২টি, কাউতলী, উত্তর বরইয়ায় ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে কহুয়া নদীর বেড়িবাঁধের খোন্দকিয়া, উত্তর বেড়াবাডিয়া, মধ্য বেড়াবাডিয়া, দক্ষিণ বেড়াবাড়িয়া ও জগতপুরে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়। সিলোনিয়া নদীর সুবার বাজার, শালধর বাজার এলাকায় ২ স্থানে গোসাইপুরে ২টা বেড়িবাঁধ ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে । এদিকে ফেনী পাউবো অফিসের সেকশন অফিসার মো. আরিফ জানান, ২০টি বেড়িবাঁধের ভাঙ্গা অংশ সংস্কারে বাঁধ নির্মাণে ২ কোটি ৬ লক্ষ টাকার প্রাক্কলন ব্যয় পাঠানো হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ ২০টি বাঁধের চুড়ান্ত তালিকা করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কহিনুর আলম জানান, ফেনীর মুহুরী, কহুয়া আর সিলোনিয়া নদীর ভাঙ্গনের শিকার ৮টি বেড়িবাঁধ দ্রæত সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাকি বাঁধগুলো নদীর পানি শুকিয়ে গেলে সংস্কার করা হবে।
তিনি আরো জানান, মুহুরী নদী নিয়ে একটি বৃহৎ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর এফসিডিআই পুনর্বাসন প্রকল্প নিয়ে গত ৫ জুলাই ঢাকা মহাপরিচালকের কার্যালয়ে মিটিং করা হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এ নদীটির বিষয়ে একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নেয়া হবে।
এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ফেনীর সামগ্রিক চিত্র বদলে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ফেনীর মতো ৫টি নদী বেষ্টিত আর সাগর বিধৌত জেলা বাংলাদেশের কোথাও নেই উল্লেখ করে নদী কেন্দ্রিক উন্নয়নে এ জেলা আগামী দিনের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে বলে তার প্রত্যাশা।
এদিকে ফেনী সদর আসনের এমপি নিজাম উদ্দীন হাজারী চলমান বন্যায় পরিদর্শনে গিয়ে বলেন, মুহুরী, কহুয়া আর সিলোনিয়া নদীতে স্থায়ী এবং টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে আগামীতে একটি পাইলট প্রকল্পের অধীনে প্রায় ৪শ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দীন আহমেদ চৌধুরী নাসিমসহ পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল হক মাহমুদের সাথে আলোচনা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন