সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

’৭০-এ ভোলার জলোচ্ছ্রাসে দুর্গতদের কাছে ছুটে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৪ থেকে ১৯৭৩ পর্যন্ত ৭ বার পিরোজপুরে রাজনৈতিক কর্মসূচীতে যোগ দিতে এলেও নিভৃত পল্লী মাটিভাঙ্গার বিশাল জনসভার খবরটি অনেকটাই স্মৃতির আড়ালে চলে গেছে। ১৯৭০ সালের ১৪ নভেম্বর সে সময়ের পিরোজপুর মহাকুমার নাজিরপুর থানার মাটিভাঙ্গা কলেজ মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক বিশাল নির্বাচনী জনসভায় বঙ্গবন্ধু প্রধান অতিথির ভাষণ দিয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর টুঙ্গিপাড়ার বাড়ি থেকে অনতি দূরে মধুমতি নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত এ কলেজের মাঠে সেদিন তিল ধারনের ঠাঁই ছিল না। সে অঞ্চলে তখন রাস্তা ঘাট না থাকলেও পায়ে হেঁটে নৌকায় চড়ে লাখো মানুষ জনসভা স্থলে উপস্থিত হয়েছিল । মাটিভাঙ্গা অঞ্চলের নারীরা ইতিপূর্বে কোন রাজনৈতিক সভায় না গেলেও সেদিন হাজার হাজার নারী তাদের প্রাণপ্রিয় নেতাকে এক নজর দেখার জন্য জনসভা মাঠে উপস্থিত হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু বাড়ি থেকে স্পীড বোটে চড়ে মধুমতি নদী পাড়ি দিয়ে বলেশ্বর নদের তীরের কলেজ ঘাটে নেমে সফর সঙ্গীদের নিয়ে জনসভার মঞ্চে আরোহন করেন। নাজিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুর মোহাম্মদ ফরাজীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ জনসভায় নাজিরপুর-স্বরূপকাঠী-বানারিপাড়া থানা নিয়ে গঠিত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের এ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী শেরে বাংলার পুত্র একে ফয়জুল হক, নাজিরপুর-বানারিপাড়া থানা নির্বাচনী এলাকার প্রাদেশিক পরিষদ প্রার্থী ডাঃ ক্ষীতিশ চন্দ্র মন্ডলকে নিজের প্রতিনিধি হিসেবে জনতার সামনে পরিচয় করিয়ে দেন বঙ্গবন্ধু।
বঙ্গবন্ধু তার ১৫ মিনিটের ভাষণে পাকিস্তানের ২৩ বছরের শোষন বঞ্চনা, নির্যাতন-নিপীড়নের বর্ণনা দিয়ে বাঙালীদের মুক্তির সনদ ৬ দফা দাবি আদায় নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত পরশু ১২ নভেম্বর ভোলসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে লক্ষ লক্ষ নারী-পুরুষ, শিশু প্রাণ হারিয়েছে, সবকিছু লন্ডভন্ড হয়ে গেছে, দুর্গত এলাকায় হাজার হাজার মৃত দেহ নদ-নদী খালে ভাসছে, জীবিতরা অনাহারে ধুকে ধুকে মরলেও এখন পর্যন্ত এক মুঠো ত্রাণের চাল সেখানে সরকার পাঠায়নি।
তিনি এখান থেকেই সরাসরি ভোলা যাবেন এবং আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের নিয়ে দুর্গতদের পাশে দাড়াবেন বলে জানান। সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষে বঙ্গবন্ধু দ্রæত হেঁটে স্পীড বোটে চড়ে ভোলার দুর্গত মানুষদের পাশে দাড়ানোর জন্য যাত্রা করেন।
ডিসেম্বরের ৭ ও ১৭ তারিখে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ ও পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে বরিশাল জেলার সবক’টি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়ী হয়। নাজিরপুর-বানারিপাড়া-স্বরূপকাঠী এলাকাটিতে বামপন্থীদের শক্ত ঘাঁটি থাকলেও বঙ্গবন্ধুর এক ভাষণে সবকিছু তছনছ হয়ে যায়। একে ফয়জুল হক ও ডাঃ ক্ষীতিশ চন্দ্র মন্ডল ন্যাপ প্রার্থী ডাঃ কালিদাশ বৈদ্য এবং আব্দুস সত্তার মিয়ার জামানত বাজেয়াপ্ত করে বিজয়ী হন। সেদিন মঞ্চে উঠে বঙ্গবন্ধুর গলায় গাঁদা ফুলের মালা পরিয়ে দিয়েছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল খালেক সেখের ১৪ বছর বয়সী পুত্র বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক সুপ্রীম কোর্টের প্রখ্যাত আইনজীবী বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ফ্যিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান শ.ম রেজাউল করিম।
সেদিনের স্মৃতি চারণ করে আবেগআপ্লুত কণ্ঠে রেজাউল করিম জানালেন আমার জীবনের সবচেয়ে গর্ব হচ্ছে আমি এক মহা নায়কের গলায় মালা দিতে পেরেছি এবং তিনি আমাকে আদর করেছেন। স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করা মোঃ আবুল বাশার স্মৃতি চারণ করে বললেন, কলেজ মাঠটি কানায় কানায় পূর্ণ হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু চলে যাবার পরও হাজার হাজার মানুষ বাঙালীর এ মুক্তির দূতকে এক নজর দেখে তার নেতৃত্বে শোষন-বঞ্চনার মুক্তির সংগ্রামে শপথ নিতে ছুটে এসেছিল।####

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন