শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

এ জগত-‘আলো আর রূপে’ রহস্যময়

নাজীর আহ্মদ জীবন | প্রকাশের সময় : ১৬ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০১ এএম

মহান স্রস্টা আল্লাহর আরশ্ আজিম (সিংহাসন) বহু বছর পানির উপর ভাসমান ছিল। এরপর তিনি পবিত্র আরশ্ আজিমে সমাসিন হ’ন। তাই তার পবিত্র নূর যা আলো পানিতে প্রবেশ করে যার ফলে আজও পানি থেকে বিদ্যুৎ বা আলো সৃষ্টি হচ্ছে। সমগ্র সৃষ্টিও পানি থেকে। তাই পানির মধ্যে সহজে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। আবার অপবিত্র পানি থেকেই মানুষ সৃষ্টি। বাপ-মা’র মিলনের সময় অপবিত্র পানির মধ্যে আল্লাহ ‘রূহ’ বা আত্মা ফুকে দেন। শিশুকালে ‘আত্মা’ তরল অবস্থায় থাকে। ‘আত্মা’ হল অদৃশ্য আলা বা নূর। যার কোন আকার নেই, গন্ধ নেই। এটা আল্লাহর এক গোপন অদৃশ্য আধ্যাত্মিক শক্তি যা ধরা ছোয়ার বাইরে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, “(হে রাসূল!) এরা আপনার কাছে জানতে চায় ‘আত্ম’ কি জিনিস, আপনি বলে দিন ‘আত্মা’ হচ্ছে সম্পূর্ণরূপে আমার আওতাধীন একটা বিষয়। এ (সৃষ্টির রহস্য) সম্পর্কে তোমাদের খুব কম জ্ঞান দেয়া হয়েছে। (সূরাঃবনী ইসরাইল ৩ঃ৮৫)। আত্মার জগতে জাতি ভেদ-অর্থাৎ-স্ত্রী-পুরুষ বলে কিছু নেই। (ডাইরী ১৩-৩-৮০)।
মানবীয় মৌলিক শক্তি (ারঃধষ ভড়ৎপব) হচ্ছে আল্লাহর এই “রূহ বা আত্মা”। যা মানব সত্তা ও তার অন্তঃকরণের মধ্যখানে অবস্থিত। আত্মার কোন আকার নেই; পানির কোন আকার নেই; আলোর কোন আকার নেই। কিন্তু ‘আত্মা’ পানিতে আকার নেই বাপ-মা’র মাধ্যমে। পানিকে একটা বিশেষ তাপমাত্রায় আনলে আকার নেই, যখন বরফ হয়। আবার বরফ গললে যা তাই হয়। বাড়ীতে বড় লাইট জ্বলে রাস্তারই লাইন হতে। রাস্তার বাতি ও জ্বলছে বাড়ীরটাও জ্বলছে। একই জিনিস কিন্তু অবস্থা ও পাত্রানুযায়ী তার প্রকাশ ও রূপ আলাদা, শক্তি আলাদা।
আবার এক আলো আর এক আলোকে সনাক্ত করতে পারে না। কারণ; এর সূ²তা, শক্তি, গতি অনেক বেশী। যেমন ঃ পৃথিবীর আলো অপেক্ষা আধ্যাত্মিক আলো (আল্লাহ ও রাসূলের)। তাই আধ্যাত্মিক আলো প্রাপ্ত কোন সাধকের ঢ-জধু করা হলে তার ভিতরের এই আলো ধরা পড়েনা। আত্মাকে যে দেহে বা শরীরে দেয়া হয় সেটাই সেভাবে সেট হয়। বাইরে থাকে কেবল খোলস। নারী-পুরুষের একই আত্মা, রূপ ও দেহ আলাদা। আত্মা-পরমাত্মা হতে আগত। তাই বলা হয় আল্লাহ মানুষের মাঝে। পরমাত্মার সাথে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হলে, মানবাত্মা অসাধারণ শক্তি অর্জন করে। কর্মদোষে আত্মা পশু আত্মায় রূপ নেয়। তখন মানব আত্মা পশু আত্মায় পরিণত হয়। রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ আমার (অবাধ্য) উম্মতেরা কেয়ামতের দিন উঠবে বিভিন্ন আকৃতির দলেÑকেহ বানররূপে, কেহ ব্যাঘ্ররূপে, আবার কেহ বা শূকর রূপে”। (দুনিয়াবি জীবনে তাদের আসক্তি (নফস্) অনুসারে)।
একদিন ঈসানবী রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। এমন সময় একটা মানুষের মাথার খুলি তার পায়ে লাগলো। তিনি এভাবে মানুষের খুলির করুণ অবস্থা জানতে চাইলেন। রূহানী শক্তির দ্বারা তিনি উক্ত মানুষের আত্মাকে হাজির করে কথা বললেন। ঈসা (আঃ) এর এই শক্তি বেশী ছিল। যার জন্য তিনি ঈসা রুহুল্লাহ। আদম শফিউল্লাহ থেকে ঈসা (আঃ) হয়ে এটা এসে থাকে। তবে এটা নিয়ন্ত্রণ করেন রাসূল (সাঃ)। রুহু কে উনি জিজ্ঞাসা করেন কতদিন তুমি এ অবস্থায় আছ? বললো, তিনি হাজার বছর। রুহু-ক্রন্দন করতে থাকলো। বললো, আমি দুনিয়াতে জীবিত কালে বহু পাপ করি। তাই মৃত্যুর পর আমার রুহু এরূপ আকৃতি ধারণ করে। আল্লাহ বলেছেন, যদি কোন দিন তোর মাথা জামানার নবীর পায়ের সাথে ঠক্কর খায়, তবে সেদিন যদি তিনি দোয়া করেন তো তুই সেদিন বেহেস্ত বা মুক্তি পাবি। একথা বলে রুহু ক্রন্দন করতে করতে মুক্তির জন্য দোয়া চাইলো। ঈসা, দোয়া করলেন। ফলে উক্ত রুহু মানুষের আকৃতি পেয়ে আলেমে আরওয়ার জগতে উঠে গেল। আমাদের কর্মের ভাল-মন্দ ছাপ আত্মার উপর পরে। কোরআনে আছে সর্ব অঙ্গ স্বাক্ষি দিবে। তাহলো আমাদের আত্মা কর্মের ফলে মানবাত্মা আবার পশু আত্মায় রূপ নিবে। তখন হাতÑমুখÑপা এসব পশুর মতো হবে। তাই ফেরেশ্তা এসে এরূপ দেখে বুঝতে পারবে কে কি করেছে। অর্থাৎ হাতÑমুখÑপাÑবলে দিবে।
হযরত ইব্রাহীম, এ প্রার্থনা করেছেনঃ হে প্রভু! তুমি উত্থান দিবসে আমাকে লাঞ্ছিত করো না।” এই আয়াতের আলোচনায় বোখারী শরীফে হযরত আবু হোরায়রা হতে একটা হাদীস বর্ণিত আছে, যা বিভিন্ন হাদীস এবং তফসীর গ্রন্থ সমূহে বিস্তারিত ভাবে বর্ণিত হয়েছে। হাদীসটির তরজমা এই ঃ
হযরত ইব্রাহীম কেয়ামতের দিবসে তার পিতার অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় এবং কৃষ্ণবর্ণ দেখে বলবেন ঃ “হে খোদা! দুনিয়াতে তুমি আমার দোয়া কবুল করেছো এখন কেয়ামতের দিন, তুমি আমার অবস্থা শোচনীয় করো না। অর্থাৎ আজকে পিতাকে যে অবস্থায় দেখছি তা দুঃখজনক। তখন আল্লাহ বলবেন, “হে ইব্রাহীম; আমি কাফেরদের প্রতি বেহেশত হারাম করে দিয়েছি।” হাদীসটির সারমর্ম হচ্ছে, ইব্রাহীম তার পিতা আযরের দূরবস্থা দেখে তার জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ’তায়ালা আযরকে কেয়ামতের দিন বন্য পশুর অকৃতিতে রূপ দিবেন। যেন দেখে ইব্রাহিম এর ঘৃণার উদ্রেক হয়। (আত্মার অধোগতি এটা)।
আত্মা দৃশ্য জগতের পদার্থ নহে। ইহা পার্থিব জগতে মুসাফির বা প্রবাসী স্বরূপ এসেছে এবং বিশেষ উদ্দেশ্যে মানব শরীরে স্থান নিয়েছে। হৃৎপিন্ড নামে যে মাংস খন্ড আছে, তাহাই আত্মার আসন। আত্মার অস্পষ্ট সংজ্ঞা এই যে; ইহা মানব দেহে ঐশ্বরিক প্রকৃতির বাস্তব অবিনশ্বর বস্তু বিশেষ। আত্মা; দুই-প্রকার ঃ রূহে হায়ওয়ানী বা জীবাত্মা, রূহে ইনসানী বা পরমাত্মা। (দ্রঃ মানুষ ও বিশ্বজনীন ধর্ম-মাওলানা বদিউল আলম)।
ইমাম (রঃ) বলেছিলেন, “মানব দেহে দু’টি জগৎ একটি বাইরের অন্যটি ভিতরের। ভিতরেরটাই মুখ্য। যেটা রাসূলের নূরে (আলো) সৃষ্টি। অন্যটা গৌন্য। লালনের কথায়, খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়। আমাদেরকে সেই ভিতরের জগৎটা দেখতে হবে। তা না হলে সব বৃথা। এই আলোর জগতের সন্ধান পেলে তখন অজানা জগতের রহস্য জানা যায়। চোখের পর্দা সড়ে যায়।” (চলবে)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন