রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

দু’জন ডাক্তারে ধুঁকছে চিকিৎসাসেবা

তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনিময়-অব্যবস্থাপনার অভিযোগ

সাতক্ষীরা থেকে আবদুল ওয়াজেদ কচি | প্রকাশের সময় : ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

সাতক্ষীরার তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের সামনে উপজেলার চরগ্রামের ময়েজ উদ্দিন তার মুমূর্ষু স্ত্রীকে নিয়ে ছুটাছুটি করছেন। চিকিৎসা করানোর জন্য ডাক্তার খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে ডা. রাজীব সরদার এলেন এবং ভালোভাবে না দেখেই তিনি রোগীকে খুলনা অথবা সাতক্ষীরায় নেয়ার পরামর্শ দিলেন। মাছিয়াড়া গ্রামের শহিদুল গাজী তার শিশুকন্যাকে নিয়ে এসেছেন ডাক্তার দেখানোর জন্য। কিন্তু ডাক্তার না পেয়ে তিনি সাতক্ষীরার উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। তালার আটারই গ্রাম থেকে এসেছেন জুলেখা বিবি, তার সন্তানসম্ভবা মেয়েকে নিয়ে, কিন্তু ডাক্তার না থাকায় প্রাইভেট ক্লিনিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। এমন দৃশ্য প্রতিদিনের। এভাবে প্রতিদিন শতাধিক রোগী তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সরকারি চিকিৎসাসেবা না পেয়ে ছুটছেন স্থানীয় প্রাইভেট ক্লিনিক অথবা খুলনা বা সাতক্ষীরার হাসপাতালগুলোতে।
তালা উপজেলার প্রায় চার লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবার জন্য সরকারি এ স্বাস্থ্য কমপ্লে­ক্সে রয়েছেন মাত্র দুইজন ডাক্তার। ফলে প্রতিদিন শত শত রোগী চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। জনবল সঙ্কটে নষ্ট হচ্ছে এক্স-রে, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাম, জেনারেটরসহ কোটি কোটি টাকার অপারেশন থিয়েটারের সরঞ্জাম। অপরদিকে, তালা হাসপাতালে স্থানীয় প্রভাবশালী কতিপয় কর্মচারীর দাপটে অসহায় ডাক্তাররা বেশিদিন টিকতে পারেন না বলেও জানা গেছে। হাসপাতালে ডাক্তার সঙ্কট, ওষুুধ সঙ্কট, নিম্নমানের খাবার পরিবেশন, নোংরা শৌচাগার, খাবার পানির সঙ্কট, লাইট ও ফ্যান নষ্ট ইত্যাদি সমস্যা নিত্যদিনের। এর সাথে যোগ হয়েছে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের নির্ধারিত ফি’র অধিক ভাড়া আদায়ের অভিযোগ। কিলোমিটার প্রতি ১০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা থাকলেও সুযোগ বুজে কিলোমিটারে ২০-২৫ টাকা পর্যন্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে। এ কারণে জটিল রোগী আসলেই প্রাইভেট অ্যামবুলেন্সে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ অথবা সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিতে হয়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, তালা উপজেলা সদরের ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ডাক্তার সঙ্কটের কারণে চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩৪ জন ডাক্তারের পদ থাকলেও আছেন মাত্র তিনজন, তার মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জেলা সদরে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকায় বর্তমানে দুই জন ডাক্তার কোনো রকমে চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাচ্ছেন। হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডে ৩ নম্বর বেডে ভর্তি রোগীর অভিভাবক খালেদা অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালের বাথরুম ব্যবহারে অযোগ্য। সময়মতো কোনো কিছুই পাই না। এখনো (সন্ধ্যা পর্যন্ত) কোনো ডাক্তার আসেনি। তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কুদরত-ই-খুদা জানান, মাত্র দুই জন ডাক্তার দিয়ে একটা হাসপাতাল চালানো কিভাবে সম্ভব। তবে ডাক্তার স্বল্পতার কারণে চিকিৎসাসেবায় কিছুটা বিঘ্ন হলেও, আমরা যথাসাধ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন