শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

কুড়িগ্রামে ব্রিজের কাজ শেষ না করেই বিল উত্তোলন

শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম | প্রকাশের সময় : ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৯:৪৮ পিএম

কুড়িগ্রামে বেইলি ব্রিজের কাজ শেষ না করেই কাজ সমাপ্ত দেখিয়ে প্রায় দেড় কোটি বিল উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে সড়ক ও জনপদ বিভাগের এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। কর্তৃপক্ষের যোগসাজসে আগাম বিল পাওয়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নাম ঢাকার ‘রানা বিল্ডার্স’। ঠিকাদার ধীরগতি ও নিম্নমানের কাজ করলেও কর্তৃপক্ষ উদাসীন। নির্ধারিত সময়েও ব্রিজের কাজ শেষ না করায় ৭ ইউনিয়নের ৩ লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ এখন চরমে। কর্তৃপক্ষের দাবী অর্থ বছর শেষ হওয়ায় আগাম বিল উত্তোলন করা হলেও পুরো টাকা ঠিকাদারকে দেয়া হয়নি কাজ শেষ না হওয়ায়। ফলে সরকারের কোন ক্ষতি হওয়ার আশংকা নেই।
অভিযোগে জানা যায়, ২০১৭ সালের ভয়াবহ বন্যায় কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার কালিগঞ্জ ইউনিয়নের মন্নেয়ার পাড় নামক স্থানে সড়ক ও জনপদের বিভাগের ১৬০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি ব্রীজ ভেঙ্গে যায়। উপজেলার সাথে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়ে কালিগঞ্জ, ভিতরবন্দ, কচাকাট, নুনখাওয়া, কেদার, নারায়ণপুর এবং মাদারগঞ্জ ইউনিয়নের ৩ লক্ষাধিক মানুষ। ব্রিজ না থাকায় মালামাল পরিবহনে ব্যবসায়ীদের গুণতে হচ্ছে বাড়তি খরচ নৌকা ভাড়া ও কুলি খরচ। যোগাযোগের সাথে দ্রব্যমূল্যেরও দাম বেড়ে গেছে বিচ্ছিন্ন এই জনপদে বসবাসরত মানুষের। স্থানীয় ভাবে ড্রাম দিয়ে ভাসমান সেতু নির্মাণ করে কোনরকমে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে মানুষ। ভাসমান সেতুতে পারাপারের সময় নানা দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয় চলাচলকারীদের। জনসাধারণের দুর্ভোগ কমানোর জন্য কুড়িগ্রাম সড়ক ও জনপদ বিভাগ প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে একটি বেইলি ব্রিজ নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহবান করে। গত অর্থ বছরে ১৬০ ফুট দৈর্ঘ্যের বেইলি ব্রিজ নির্মাণের কাজ পায় ঢাকার রানা বিল্ডার্স নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। রানা বিল্ডার্স কাজ পেলেও সাব ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দেয় কুড়িগ্রামের বেলাল কনস্ট্রাকশনকে। জুন মাসে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও সময় পেরিয়ে গেলেও ব্রিজের এক চতুর্থাংশ কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। অথচ জুন মাসেই কাগজ-কলমে কাজ সমাপ্ত দেখিয়ে কুড়িগ্রাম সড়ক ও জনপদ বিভাগের বিরুদ্ধে বিল পরিশোধ করার অভিযোগ উঠেছে। এতে করে বিল পাওয়ায় বেইলি ব্রিজের কাজের মান ও ধীরগতি নিয়ে অভিযোগ স্থানীয়দের।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, বন্যার সময় ব্রিজটি ভেঙ্গে যাওয়ার পর থেকে এই এলাকার মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দুর্ভোগ কমাতে একটি বেইলি ব্রিজ নির্মাণ শুরু করলেও তা ধীরগতিতে চলছে। ব্রিজ নির্মাণ সংক্রান্ত কোন তথ্য সংম্বলিত সাইনবোর্ড নেই সাইড এলাকায়। ৬০/৭০ ফিট পাইলিং হবার কথা অথচ সেখানে সর্বোচ্চ ৫০ফিট পাইলিংয়ের কাজ হয়েছে। কিছু সিসি ব্লক তৈরি হচ্ছে সেটারও মান নিয়ে সংশয় রয়েছে।
ঠিকাদারের প্রতিনিধি ফখরুল ইসলামের দেখা হলেও তিনি বেইলি ব্রিজের বিষয়ে কোন তথ্য জানাতে অস্বীকৃতি জানান। এক পর্যায় তিনি সংবাদকর্মীদের উপর চড়াও হন। এ সময় স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসতে শুরু করলে অবস্থা বেগতিক দেখে সটকে পড়েন তিনি।
সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-প্রকৌশলী মজনু মিয়া’র কাছে বেইলি ব্রিজের তথ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন ১৬০ ফিট দৈর্ঘ্যের ব্রিজটি নির্মাণাধীন রয়েছে। এখানে ব্রিজের সম্মুখে এক হাজার ২২০টি সিসি ব্লক দেয়া হবে। আরো বিস্তারিত জানতে হলে নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে যোগাযোগের পরামর্শদেন।
সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন সাংবাদিকদের মোবাইলে জানান, বেইলি সংকট থাকায় ব্রিজের কাজে কিছুটা ধীর গতিতে হচ্ছে। তবে দু-একদিনের মধ্যে আসলেই ব্রিজের কাজ সমাপ্ত হবে। আগাম বিল প্রদান সম্পর্কে তিনি বলেন, অর্থ বছর শেষ হবার কারণেই এটা করা হয়েছে। তবে পুরো অর্থ দেয়া হয়নি এখনও ৬০ লাখ টাকা আমাদের কাছে জমা আছে। সরকারি নিয়ম-নীতি মেনে এবং প্রকল্পের কাজ যথা সময়ে শেষ করার লক্ষ্যে এসব করা হয়েছে। এখানে অনিয়ম-দূর্নীতির সুযোগ নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন