শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ভুটানের নির্বাচন ও আঞ্চলিক প্রেক্ষাপট

হোসেন মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

ভুটানের প্রথম দফা নির্বাচনে ক্ষমতা থেকে ছিটকে পড়েছে ভারতপন্থী দল পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডিপি)। নির্বাচনে জয়ী হয়েছে নবাগত রাজনৈতিক দল ড্রুক নিয়ামরাপ শোগপা (ডিএনটি)। সরকার বিরোধী ড্রুক ফুয়েনসাম সগপা (ডিপিটি) দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। আর ক্ষমতাসীন দল পিডিপি রয়েছে তৃতীয় স্থানে। এ দলগুলোর মধ্যে পিডিপি ভারতপন্থী দল হিসেবে পরিচিত। এদিকে ভুটানের এ নির্বাচনী ফলাফল দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি বিষয়ে আগ্রহীদের বিস্মিত করেছে। কারণ, এ নির্বাচনে ভুটানের জনগণ সে দেশের ভারতপন্থী দলটিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আর ভারতপন্থী দলকে এ প্রত্যাখ্যান কার্যত দেশটির উপর গত ৬৯ বছর ধরে বিদ্যমান ভারতের সর্বগ্রাসী প্রভাবের বিরুদ্ধে ভুটানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের বিরোধিতার গণতান্ত্রিক প্রকাশ।
ভুটানের সংবিধান মোতাবেক দেশে দু’দফা নির্বাচন পর্ব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। প্রথম দফায় সকল অংশগ্রহণকারী দলকে ভোটাররা ভোট প্রদান করে। এ পর্যায়ে সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত দু’টি দল দ্বিতীয় দফা বা চ‚ড়ান্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। এতে বিজয়ী দলটি সরকার গঠন করে। ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ভুটানের প্রথম দফা নির্বাচনে দেখা যায়, নিবন্ধিত ভোটার সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৩৩ হাজার। তার মধ্যে ভোট দিয়েছেন ২ লাখ ৯১ হাজার ৫৮ জন অর্থাৎ ৬৬.৩ শতাংশ। ডিএনটি মোট ভোটের মধ্যে ৯২ হাজার ৭২২ ভোট (৩১.৫% ভোট) পেয়ে শীর্ষস্থানে রয়েছে। ডিপিটি ৯০ হাজার ২০ ভোট (৩০.৬% ভোট) পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। পিডিপি ৭৯, ৮৮৩ ভোট (২৭.২% ভোট) পেয়ে রয়েছে তৃতীয় স্থানে। এতে দেখা যায়, ভোটদাতাদের ৬১ শতাংশেরও বেশি ভারতকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
এটা স্বীকৃত সত্য যে, ঐতিহাসিকভাবেই ভুটান ভারতনির্ভর। রাজাশাসিত স্বাধীন পর্বতময় দেশ ভুটান কখনো ভারতের অংশ ছিল না। তবে শরীরের লাগোয়া দেশ নেপাল ও ভুটান স্বাধীন দেশ হলেও ভারতের সাথে তাদের সীমান্ত বরাবরই ছিল অবারিত। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই ভারতের মধ্যে আগ্রাসীমনোভাবের প্রকাশ ঘটতে থাকে। তারই পরিণতিতে ১৯৪৯ সালে ভুটানকে ভারতের সাথে এক চুক্তি স্বাক্ষরে কার্যত বাধ্য হতে হয়। এর নাম ছিল বন্ধুত্ব চুক্তি। এ চুক্তিতে ভুটানকে সম্পূর্ণরূপে ভারতনির্ভর করা হয়। চুক্তির প্রধান শর্ত ছিল, নয়াদিল্লীর সাথে শলা-পরামর্শ করে ভুটান তার বৈদেশিক নীতি নির্ধাারণ করবে। আজো সে চুক্তি বহাল আছে। এখানে উল্লেখ করা যায় যে, ২০০৮ সালে ভুটানের রাজা ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ শিথিল করেন। ভুটানে বইতে শুরু করে গণতন্ত্রের সুবাতাস। তা এখনো অব্যাহত রয়েছে। বিগত ১০ বছরে দেশটিতে গণতন্ত্র আরো পরিব্যাপ্ত হয়েছে। যাহোক, ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত দেশটির প্রথম নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে ডিপিটি। প্রধানমন্ত্রী হন জিগমে থিনলে। বলা হয়, তিনি ছিলেন ভারতের আধিপত্য বিরোধী। তাই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরপরই তিনি ভারতের প্রভাব থেকে দেশকে মুক্ত করার চেষ্টা শুরু করেন। উল্লেখ্য যে, ভুটানের ৮০ শতাংশ বাণিজ্যই চলে ভারতের সাথে। অর্থাৎ ভুটানের অর্থনীতি সম্পূর্ণরূপে ভারতনির্ভর। শিক্ষা ও সামরিক ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। এ অবস্থায় থিনলে ভারতের উপর তার দেশের নির্ভরশীলতা হ্রাসের পদক্ষেপ নেন। তাতে শুরু হয় ভারতের মাথাব্যথা। তা আরো গুরুতর হয় যখন থিনলে ২০১২ সালে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ব্রাজিলের রাজধানী রিওডি জেনেরোতে গিয়ে চীনা প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাওয়ের সাথে বৈঠক করেন। ভারতের কাছ থেকে অনুমতি না নিয়ে চীনের সাথে এ বৈঠক করাকে মোটেই ভালোভাবে নেয়নি ভারত। শুরু হয়ে যায় থিনলের বিরুদ্ধে কলকাঠি নাড়া। এর মধ্যে চলে আসে ২০১৩ সালের নির্বাচন। ডিপিটিকে পঁচিয়ে দিতে চ‚ড়ান্ত নির্বাচনের আগে ভুটানে কেরোসিন ও গ্যাস সরবরাহে প্রচন্ড সংকট সৃষ্টি করে ভারত। এ অবস্থায় ভুটানিরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ডিপিটির প্রতি। নির্বাচনে তার ব্যাপক প্রভাব পড়ে। ক্ষমতায় আসে শেরিং তোবগের নেতৃত্বাধীন পিডিপি। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ভারত। সে সময় এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, ভুটানের এ নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে ভারত। তবে এবারের নির্বাচনে ভারতের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কোনো সম্পৃক্ততা দেখা যায়নি। যাহোক, পাঁচ বছর দেশ শাসনকারী দল পিডিপি এবারের নির্বাচনে যেভাবে ধরাশায়ী হয়েছে, তাতে নয়াদিল্লীর নীতি নির্ধারকদের সব হিসাব উল্টেপাল্টে গেছে। এখন চ‚ড়ান্ত নির্বাচনে ডিএনটি বা ডিপিটির মধ্যে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন তাদের কেউই ভারত-অনুগত নয়, বরং তারা সর্বতোভাবে ভারতীয় প্রাধান্যের বিরোধী। ফলে চীনের সাথে দোকলাম সমস্যা বা অনুরূপ আর কোনো সমস্যা সৃষ্টি হলে আগের মতো ভুটানকে ইচ্ছানুরূপ ব্যবহারে ভারতের অবারিত সুবিধা হাতছাড়া হওয়ার আশংকা রয়েছে।
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সাম্প্রতিক কালে নিকট প্রতিবেশীদের অনেকের সাথে ভারতের সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি ঘটেছে। বিশেষ করে ভারতে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে এ সম্পর্কের ক্রমাবনতিই চোখে পড়ে। সার্কভুক্ত প্রতিবেশী ও নিকটতম প্রতিবেশী বেশির ভাগ দেশের সাথে ভারতের সাম্প্রতিক সম্পর্ক থেকে এ অবস্থাটি দৃশ্যমান। সার্ক সদস্য দেশের সংখ্যা ৮। ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলংকা, ভুটান, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তান। দেখা যায়, এসব দেশের মধ্যে ভারতের সাথে সবচেয়ে খারাপ সম্পর্ক ছিল পাকিস্তানের। তবে কয়েকদফা যুদ্ধের পরও সার্কের চেতনায় যূথবদ্ধ হয়েছিল দেশ দুটি। মতপার্থক্য, পারস্পরিক স্বার্থ নিয়ে প্রতিযোগিতার মধ্যেও সম্ভবমত সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করেছে দু’দেশ। সর্বশেষ কংগ্রেস আমল পর্যন্ত এ প্রয়াস চলমান ছিল। কিন্তু বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক পর্যায়ে একঘরে করে ফেলার কঠোর নীতি গ্রহণ করে। এর ফলে বিরাট ধাক্কা খায় সার্ক। সন্ত্রাসবাদে পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার অভিযোগে ২০১৬ সালে পাকিস্তানে অনুষ্ঠেয় সার্ক শীর্ষ বৈঠক বর্জন করে ভারত। অন্যদিকে নিজস্ব কারণ ও যুক্তিতে তাতে সমর্থন দেয় বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও ভুটান। সার্ক সনদ অনুযায়ী কোনো একটি সদস্য দেশ শীর্ষ বৈঠকে অংশগ্রহণ না করলে তা অনুষ্ঠিত হবে না। ভারতের অনাগ্রহে ২০১৭ সালেও সার্ক শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। ২০১৮ সালেও এটি অনুষ্ঠিত হবে কিনা তা নিশ্চিত নয়। এখানে দেখা যায় যে, পাকিস্তান বিরোধিতায় ভারত সাফল্য লাভে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের সাথে ভারতের বন্ধুত্ব সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উপনীত হওয়ার পাশাপশি আফগানিস্তানকে বন্ধুত্বের বন্ধনে বাঁধতে সক্ষম হয়েছে ভারত। এর প্রভাবে ও জঙ্গি তৎপরতা নিয়ে কাবুল ও ইসলামাবাদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। তবে এ সাফল্যের বিপরীতে ভারতের জন্য ভিন্ন স্রোতও প্রবহমান। আফগানিস্তানের সাথে সম্পর্ক নিবিড়ের সর্বাত্মক চেষ্টার মধ্যেই খবর এসেছে যে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) আফগানিস্তান পর্যন্ত সম্প্রসারিত হতে যাচ্ছে। এর অর্থ আফগানিস্তান ব্যাপক চীনা অর্থনৈতিক সাহায্য লাভ করবে। আর তা হলে কাবুল-নয়াদিল্লী সম্পর্কের গভীরতা আরো গভীর হবে, না ক্ষীয়মান হবে তা সময়ই বলতে পারবে।
নেপাল, ভারত ও মালদ্বীপের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন রকম। ইতোমধ্যেই ভারতের পক্ষপুট ছেড়ে চীনের কোলে নিজের আশ্রয়ের ঠিকানা খুঁজে নিয়েছে নেপাল। বেইজিং-কাঠমান্ডু সম্পর্ক আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে গভীর। এ মাসেই ভারতের আয়োজনে বিমসটেক সামরিক মহড়ায় অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানায় নেপাল। তার পরপরই চীনের সাথে সামরিক মহড়ায় যোগ দেয় দেশটি। নেপালের জন্য চীনের ৪টি বন্দর ব্যবহারের সুযোগ উন্মুক্ত করে দিয়েছে চীন। আলোচনা চলছে কাঠমান্ডুর সাথে রেলসংযোগ প্রতিষ্ঠার। চীনের বহুল আলোচিত মহাপরিকল্পনা বেল্ট অ্যান্ড রোডের (বিআরআই) অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়াস চলমান। নেপালের হাল অবস্থা দেখে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম নেপালি প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলিকে চীনপন্থী বলে আখ্যায়িত করেছে। ওদিকে শ্রীলংকায় ব্যাপক আর্থিক বিনিয়োগ করেছে চীন। শ্রীলংকার হাম্বানটোটা বন্দর চীনের কাছে ৯৯ বছরের জন্য লিজ দিয়েছে কলম্বো। এর ফলে ভারত মহাসাগরে আরেকটি নৌঘাঁটি স্থাপনের সুবিধা পেয়েছে চীন। এদিকে ভারতের বহুদিনের মিত্র মালদ্বীপের সাথেও ভারতের সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকেছে। চীন মালদ্বীপে ব্যাপক হারে অর্থনৈতিক বিনিয়োগ করছে। সেখানে থই পাচ্ছে না ভারত। কারণ, এত বিপুল পরিমাণ আর্থিক বিনিয়োগের সাধ্য তার নেই। মালদ্বীপ তার সাহায্যের জন্য কয়েক বছর আগে ভারতের দেয়া দুটি হেলিকপ্টার ফেরত পাঠানোর জন্য চেষ্টা করলেও ভারত তা নিতে চাইছে না। ভারতীয় কর্মীদের মালদ্বীপে কাজের জন্য ভিসা প্রদান নিয়েও চলছে জটিলতা। বস্তুত, বিভিন্ন ঘটনা ও তৎপ্রেক্ষিতে দৃশ্যমান যে, এ তিনটি দেশই সর্বাগ্রধিকার প্রদান করেছে তাদের জাতীয় স্বার্থকে। তাদের অবস্থান থেকে দিবালেকের মতো এটা সুস্পষ্ট যে, ভারতকে তাদের দেয়ার কিছু নেই। তাদের জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে পা ফেলবে না তারা। ভারতের অন্যায় প্রভাবের কাছে নতি স্বীকারের কোনো ইচ্ছাও তাদের নেই।
সর্বশেষ ভুটানের নির্বাচনে প্রথম দফার ফলাফলে ভারতপন্থী দলটিকে প্রত্যাখ্যানের মধ্য দিয়ে সে দেশের জনগণও জানিয়ে দিয়েছে যে, ভারতের প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ তাদের প্রত্যাশিত নয়। ক্ষুদ্র জনসংখ্যার ছোট্ট এ দেশটি গণতান্ত্রিক পন্থায় নিজেদের মনের ইচ্ছা ব্যক্ত করেছে। জানা গেছে, ভারত ভুটানের নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে সরকারি সূত্র থেকে বলা হয়েছে, যে দলই ক্ষমতায় আসুক, ভারত তার সাথে কাজ করবে।
নেপাল, ভারত, ভুটান ও মালদ্বীপের সাথে ভারতের বর্তমান সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অবস্থা বিবেচনা করা যেতে পারে। দু’দেশের সম্পর্ক গত দশ বছর ধরে ক্রমাগত গভীর হয়ে চলেছে। বলা হচ্ছে, দু’দেশের সম্পর্ক সর্বকালের সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছেছে এবং তা আরো উচ্চতায় উপনীত হতে থাকবে। এ বন্ধুত্বের সম্পর্ককে জনগণ ও রাজনীতিকদের সবাই যে স্বাগত জানিয়েছেন, তা নয়। সমালোচকরা বলেন, বন্ধুত্বের স্বাভাবিক নিয়ম হচ্ছে আদান-প্রদান। বন্ধুত্ব কখনো একতরফা হয় না। কিন্তু তাদের ভাষায়, বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব হচ্ছে তাই। বাংলাদেশ বহুদিন ধরে দিয়ে যাচ্ছে এবং দিয়েই যাবে দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ দিতে দিতে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বাকি ছিল ভারতকে চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দেয়া। কদিন আগে (১৭ সেপ্টেম্বর,’১৮) চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ভারতের ব্যবহারের খসড়া চুক্তির অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বাংলাদেশের এই যে সীমাহীন দান, এ দানের বিনিময়ে ভারত কিছুই দিচ্ছে না, বাংলাদেশ চায়ও না। অনেকেরই কথা যে, বাংলাদেশ শুধু আঁচল ভরে বন্ধুত্ব বিলিয়ে চলেছে, কিন্তু বিনিময়ে নারকেলের শাঁসহীন খোলাও তার ভাগ্যে জুটছে না। অবশ্য ভারতের কাছে অপরিসীম কৃতজ্ঞতায় আবদ্ধ এ দেশের বিরাট সংখ্যক মানুষ। তারা সমালোচকদের মনে করিয়ে দেন বাংলাদেশকে ভারতের দানের কথা, বন্ধুত্বের উপহারের কথা যাতে পড়ে কয়েকশ’ কোটি ডলারের ভারতীয় ঋণ (যার শর্ত সম্পূর্ণ ভারতেরই অনুক‚লে বলে বলা হয়) ও ছিটমহল সমস্যা সমাধানের কথা। ভারত গঙ্গার পানি নিয়ে কী করছে, তিস্তার পানি সমস্যা, সীমান্তে বাংলাদেশিদের নির্বিচার ধরে নেয়া ও গুলি করে হত্যা, বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি, আসাম থেকে নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর হমকি ও প্রক্রিয়া, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের পক্ষে ভারতের না থাকা ইত্যাদি নিয়ে তারা কোনো কথা বলেন না।
বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন আসন্ন। জনমনে ইতোমধ্যে যে ধারণাটি প্রচলিত, তা হলো, ভারত যাদের প্রতি অনুকম্পা প্রদর্শন করবে, অন্য কথায় ভারত যাদের চাইবে তারাই বাংলাদেশে বিজয়ী হবে। এর সত্যতা কতটা তা জনগণই জানেন। এও ধারণা করা হয় যে, বাংলাদেশের বড় তিনটি রাজনৈতিক দলের একটি ইতোমধ্যেই ভারতের সার্বিক আনুক‚ল্যপ্রাপ্ত, বাকি দুটি দলও কম-বেশি ভারতের আনুক‚ল্য লাভের জন্য ঘাম ঝরিয়ে চলেছে। তবে ভুটানে ভারতের আনুক‚ল্যপ্রাপ্ত দলটি এবার ক্ষমতায় আসতে পারেনি। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কী ঘটবে, তা শুধু ভবিষ্যতই বলতে পারে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন