প্রায় চার বছর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বহুল প্রতীক্ষিত দশম সমাবর্তন আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। পরপর দুইবার তারিখ নির্ধারণের পরও অনির্দিষ্ট কারণে সমাবর্তন স্থগিত করলেও এবারের অনুষ্ঠানে প্রধান আকর্ষণ রাষ্ট্রপতি থাকায় সমাবর্তন উপলক্ষে গ্রাজুয়েটসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাড়তি উত্তেজনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। এই দশম সমাবর্তনের বাকি আর মাত্র ৪ দিন। অনুষ্ঠানের সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এবং গ্রাজুয়েটদের বরণ করে নিতে বর্ণিল রূপে সাজতে শুরু করছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
বিভিন্ন ভবন ও এর আশপাশে চলছে পরিচ্ছন্নতা ও শোভাবর্ধনের কাজ। সড়কের পাশের গাছগুলোতে সাদা-লাল রঙয়ের আলোকচ্ছটায় চিরচেনা রূপে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। যা সমাবর্তনের আবেশকে বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ। ফলে সমাবর্তনকে ঘিরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ ক্যাম্পাসের আনাচে-কানাচে যেন উৎসবের আমেজ বইছে। এছাড়া সমাবর্তনকে ঘিরে ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের প্রস্তুতিও চলছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর (শনিবার) দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয় স্টেডিয়ামে দশম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সমাবর্তনে বক্তা থাকবেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও একুশে পদকপ্রাপ্ত অ্যামিরেটাস অধ্যাপক আলমগীর মো. সিরাজউদ্দীন। এছাড়াও বিশেষ অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
এই সমাবর্তনে উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক ও সেলিনা হোসেনকে সম্মানসূচক ডি.লিট ডিগ্রী প্রদান করা হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে। সমাবর্তন অনুষ্ঠান শেষে বিকেল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেখানে গান পরিবেশন করবেন দেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন। সমাবর্তন অনুষ্ঠান শুরুর আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নামে ছাত্রীদের জন্য একটি আবাসিক হলের ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
জানা যায়, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মিজানউদ্দিনের সময়ে দশম সমাবর্তনের নিবন্ধন শুরু হয়। ওই সময়ে মোট পাঁচ হাজার ২৭৫ জন গ্রাজুয়েট নিবন্ধন করেন। এরপর তার মেয়াদ শেষ হলে নতুন উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান আবারও সমাবর্তনের নিবন্ধনের তারিখ ঘোষণা করেন। এতে ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সময়ে স্নাতকোত্তর, এমফিল, পিএইচডি, এমবিবিএস, বিডিএস ডিগ্রি অর্জনকারীদের নিবন্ধনের সুযোগ দেওয়া হয়। সমাবর্তনে অংশ নিতে মোট ছয় হাজার নয়জন গ্রাজুয়েট নিবন্ধন করেন।
সোমবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেডিয়ামে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের মঞ্চ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে ২টি প্রশাসনিক ভবন, শহীদ মিনার চত্বর, সাবাস বাংলাদেশ মাঠ, জুবেরী ভবন, শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র (টিএসসিসি), কেন্দ্রীয় মসজিদ চত্বর, কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তন, ভিসির বাসভবন, শের-ই-বাংলা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলসহ বেশ কয়েকটি ভবন রঙ করা হচ্ছে। একাডেমিক ভবনগুলোর মধ্যে রবীন্দ্র ভবন, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিজ্ঞান ভবন রঙ করার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বাহারি ফুলের গাছ লাগানো হচ্ছে।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডের আশপাশের গাছগুলোতে রঙ করাসহ বেশ কয়েকটি সড়ক সংস্কার ও ঝোপঝাঁড় পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে থেকে শহীদ ড. শামসুজ্জোহা চত্বর পর্যন্ত ফুটপাত ও বাগানে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ চলছে। জুবেরী ভবনের কাছে প্রস্তুত করা হয়েছে অতিথিদের গাড়ি পার্কিং-এর স্থান।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান বলেন, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতির আগমনে উৎসবমুখর পরিবেশ বজায় রাখতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনসহ ক্যাম্পাসের প্রধান প্রধান জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবস্থা করা হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যম্পাসে আইডি কার্ড নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। সমাবর্তন উপলক্ষে ক্যাম্পাসে অবস্থিত ভাসমান দোকানগুলো তুলে দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সমাবর্তন শেষে পুণরায় সেগুলো চালু হবে।'
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন