শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ভারতের একতরফা চাওয়া বন্ধ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

স্থল ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্টের পর এবার বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে নৌ-করিডোর তৈরী করছে ভারত। বাংলাদেশের গণমাধ্যম বা সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না আসলেও ভারতের গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া বন্দর থেকে বাংলাদেশের সুন্দরবন দিয়ে পদ্মা ও ব্রহ্মপুত্র হয়ে ভারতের আসাম ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে এই নৌ করিডোরে পণ্য পরিবহন করা হবে। প্রায় ৯০০ কিলোমিটার নৌ করিডোর নির্মাণে ভারত সরকার ৫ হাজার কোটি রুপি ব্যয় নির্ধারণ করেছে বলে জানা যায়। বাংলাদেশের প্রত্যাশিত পানিচুক্তি, বাণিজ্যবৈষম্য, সীমান্ত নিরাপত্তার মত ইস্যুগুলোর কোন গ্রহণযোগ্য সমাধান না হলেও ট্রানজিট, ট্রানশিপমেন্টের নামে নামমাত্র মাশুলে ভারতকে করিডোর দেয়া হয়েছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদি আন্দোলন দমনে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশ। এসব পেয়ে বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্ব ও সম্পর্কে অনন্য উচ্চতায় পৌছে যাওয়ার কথা বলছেন উভয় দেশের ক্ষমতাসীনরা। শুধুমাত্র ছিটমহল বিনিময়ের পুরনো চুক্তি বাস্তবায়নে ভারতের সাড়া দেয়া ছিল গত ১০ বছরে ভারতের পক্ষ থেকে একমাত্র ইতিবাচক উদ্যোগ। ছিটমহল বিনিময়ের ক্ষেত্রেও ভারতই লাভবান হয়েছে। আনুষ্ঠানিক চুক্তির অনেক আগে থেকেই ভারত বাংলাদেশের বন্দর ও সড়কপথ ব্যবহার করে স্থল ট্রানজিট সুবিধা ভোগ করতে শুরু করেছিল। ট্রানজিট নিয়ে দেশের রাজনৈতিক মহল এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের সংশয় ও বিরোধিতা থাকলেও ট্রানজিটের সমর্থকরা বছরে হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব অর্জনের কথা বলেছিল। ট্রানজিট চালু হওয়ার পর দেখা গেল বাংলাদেশের হাজার হাজার কোটি টাকায় নির্মিত অবকাঠামো ব্যবহার করে ভারত কার্যত বিনামূল্যে ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট তথা করিডোর সুবিধা ভোগ করছে।
দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ৬ দশকের অপেক্ষার পর ভারত বাংলাদেশের স্থল ট্রানজিট পেয়েছে। এ নিয়ে অনেক রাজনৈতিক বিতর্ক এবং নাগরিক সমাজের ব্যাপক প্রতিক্রিয়াও দেখা গেছে। তবে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের নৌ-করিডোর নির্মাণের পরিকল্পনা ভারতীয় পত্রিকা ইকোনমিক টাইমসের অনলাইন এডিশন থেকে জানা গেছে। দেশের গণমাধ্যমে বা জাতীয় সংসদে এ সম্পর্কে কোন আলোচনা শোনা না গেলেও ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর থেকে বোঝা যাচ্ছে, ভেতরে ভেতরে তারা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। নৌ-রুটের পরিকল্পনা ও বাজেট-প্রাক্কলন চুড়ান্ত হয়ে গেলেও এ দেশের মানুষ তা জানতে পারেনি। রাষ্ট্রীয় সংবিধানের স্বীকৃতি অনুসারে প্রজাতন্ত্রের মালিক দেশের জনগণ। আর প্রতিবেশী দেশকে ট্রানজিট-করিডোর দেয়ার মত অতিব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে জনমত ও রাজনৈতিক ঐক্যমত্য অপরিহার্য, সেখানে জনগনকে অন্ধকারে রেখে, সংসদে আলোচনা ও বিতর্ক ছাড়াই ভারতকে নৌ-করিডোর দেয়া হলে তা জাতির জন্য ভিন্ন বার্তা বহন করবে। ভারতকে নৌ-করিডোর দেয়ার বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য জানতে চাওয়া দেশের মানুষের গুরুত্বপূর্ণ অধিকার। কার্যত বিনা মাশুলে ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা ভোগ করছে ভারত। এখন নৌ-করিডোরের সুবিধার কথা বলতে গিয়ে স্বল্প খরচে পণ্য পরিবহনের কথা বলছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। নৌ করিডোরের চুক্তির শর্ত এবং মাশুল কি হবে তা’ও জাতির কাছে স্পষ্ট নয়।
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের রাজনীতিতে এক ধরনের মেরুকরণ চলছে। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরীর ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনদের উদাসীনতা বা অনিচ্ছা স্পষ্ট। আবারো ভারতের সমর্থন নিয়ে আরেকটি একতরফা নির্বাচনের আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। একতরফা নির্বাচনী রোডম্যাপে ভারতীয় সমর্থন অব্যাহত রাখতেই এখন নৌ-করিডোরের সুযোগ দেয়া হচ্ছে বলে সন্দেহ করার অবকাশ রয়েছে। সরকারের এহেন কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে ক্ষমতাপ্রত্যাশি বিরোধিদল বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নিরবতাও বিষ্ময়কর। এমনকি চলমান জাতীয় ঐক্যের নেতৃবৃন্দকেও এ ব্যাপারে মুখ খুলতে দেখা যাচ্ছেনা। তিস্তা চুক্তি ও পানির ন্যায্য হিস্যাসহ বাংলাদেশের অধিকার ও গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ভারতের অনিচ্ছা ও নির্লিপ্ত ভ‚মিকার মধ্যেও তাদেরকে সম্ভাব্য সবকিছু দিয়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তার সাথে আপস করা হচ্ছে কেন? এই প্রশ্নে দেশের কোন রাজনৈতিক শক্তি ও নাগরিক সমাজের নিশ্চুপ থাকার সুযোগ নেই। রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থের প্রশ্নে নিরবতা ও অস্বচ্ছতা কাম্য নয়। একদিকে ভারতের শাসকদল বিজেপি নেতারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি চরম অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করছে, অন্যদিকে বাংলাদেশের শাসকদল দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে রাজনৈতিক স্বার্থে ভারতের সব দাবী পুরণ করে চলেছে। আর ক্ষমতাপ্রত্যাশী প্রধান রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতারা নিরবতা অবলম্বনের মধ্য দিয়ে দেশপ্রেম ও জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে নিজেদের ভ‚মিকাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছেন। নৌ-করিডোরসহ ভারতের সাথে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে দেশের স্বার্থ ক্ষুন্ন হলে দেশের মানুষ তা মেনে নেবে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন