১১ মাসেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের। নিয়ম অনুযায়ী আগামী ১৭ অক্টোবর বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলছে। গত বছরের ১৭ অক্টোবর ৩৯ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে দ্রুত তা পূর্ণাঙ্গ করার নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার উপক্রম হলেও এখন পর্যন্ত গঠিত হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। দীর্ঘ সময় পার হলেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে তেমন কোনো উদ্যোগ না থাকায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা ও চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। ব্যক্তি আধিপত্য ধরে রাখতেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রদানে বিলম্ব করছেন বলে অভিযোগ করেছেন পদপ্রত্যাশীরা। তবে বর্তমান কমিটির নেতৃবৃন্দ বলেছেন, কমিটি গঠনের জন্য বাছাই প্রক্রিয়া প্রায় শেষের দিকে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিটি দেয়া হবে।
এদিকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের উদ্দেশ্যে দীর্ঘ ছয় মাস পরে ২৫ এপ্রিল থেকে ২ মে পর্যন্ত আগ্রহী কর্মীদের জীবনবৃত্তান্ত নেয়া শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। তবে কর্মীদের জীবন বৃত্তান্ত জমা নেয়ার চার মাস অতিবাহিত হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে তা অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পাঠাতে ব্যর্থ হয়েছেন বর্তমান কমিটির নেতারা। এক বছর মেয়াদের কমিটি এখনও পূর্ণাঙ্গ না করায় সাংগঠনিক কাজে চরম সমস্যায় পড়ছে সংগঠনটি। কয়েক বছর বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় কাজ করেও পদ ছাড়াই শূন্য হাতে বিদায় নিতে হচ্ছে মেধাবী কর্মীদের। দলে জায়গা করে নেয়ার সুযোগ মিলছে অনুপ্রবেশকারী এবং অছাত্রদের। এতে চরম ক্ষুব্ধ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ত্যাগী কর্মীরা।
জানা যায়, ২০১২ সালের ৩ অক্টোবর ঘোষিত শরীফ-সিরাজ কমিটির পর জবি ছাত্রলীগের ইতিহাসে ১ম বারের মতো সম্মেলন হয় ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ। অনেক নাটকীয়তার অবসান ঘটিয়ে দীর্ঘ সাত মাস পর ১৭ অক্টোবর তরিকুল ইসলামকে সভাপতি ও শেখ জয়নুল আবেদীন রাসেলকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩৯ সদস্যের কমিটি দেয়া হয়। অর্থাৎ ছয় বছরের বেশি সময় পর কমিটি গঠন করা হয়। একজন শিক্ষার্থী চার বছর মেয়াদি অনার্স ও এক বছর মেয়াদি মাস্টার্স কোর্স করতে পাঁচ বছর ক্যাম্পাসে অবস্থান করেন। ফলে প্রথমবর্ষ থেকে ছাত্রলীগে কাজ করে মাস্টার্স শেষ হওয়ায় পদ ছাড়াই ক্যাম্পাস থেকে বিদায় নিচ্ছেন অসংখ্য যোগ্য ছাত্রলীগ কর্মী। সভাপতি-সম্পাদকের ঘনিষ্ঠ হওয়ার মাধ্যমে এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন ছাত্রত্ব খোয়ানো, বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারীরা।
পদপ্রত্যাশী অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়ার কোন উদ্যোগ নিচ্ছেন না। নিজেদের অস্তিত্ব ধরে রাখতে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী ও বিতর্কিতদের সবসময় পাশে রাখছেন। রাজনীতিতে নতুন মুখ হওয়ায় তাদের কাছে রাজনৈতিক সংস্কৃতি অনেকটাই অজানা। বিভিন্ন কর্মসূচিতে তারা সিনিয়রদের অসম্মান করে চলেছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নতুন কমিটি হওয়ার পর কয়েকটি উপ গ্রুপের অনেক নেতা ক্যাম্পাসে দলগুছানোর প্রচেষ্টা করলেও শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বের হুংকারে নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছেন। অনেকে ক্যাম্পাসের রাজনীতি ছেড়ে মহানগর, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের রাজনীতি বা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সাথে ঘুরছেন।
পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে জায়গা পেতে অনেক জুনিয়র কর্মী নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে ক্যাম্পাসে মারমারির ঘটনা ঘটাচ্ছে। ছাত্রদল তকমা দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধর করে অনেক সময় পুলিশের হাতে তুলে দিচ্ছে। কিন্তু পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা নির্যাতিত শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদল সংশ্লিষ্ঠতা না পাওয়ায় তাদের থানা থেকেই ছেড়ে দিচ্ছেন। এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তরিকুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, কমিটি গঠনের জন্য যাচাই বাছাই প্রক্রিয়া প্রায় শেষের দিকে। সামনে জাতীয় নির্বাচনে জবি ইউনিট যাতে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে সেজন্য নির্বাচনের আগেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়া হবে।ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এবং প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে চূড়ান্ত কমিটি ঘোষণা করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন