ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে কোনো ধরনের শঙ্কা কিংবা নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। তবে সার্বজনীন নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় এনে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এবার শুক্রবার বিসর্জনের দিন হওয়ায় কিছু ক্ষেত্রে বিধিনিষেধও আরোপ করা হয়েছে।
রোববার বেলা ১১টায় শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, দুর্গা উৎসব জাতীয় বড় উৎসবের মধ্যে একটি। এই উৎসবকে ঘিরে সমন্বিত ও সুদৃঢ় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকা মহানগরীতে এবার ২৩৪টি সার্বজনীন দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে বড় মন্দির ৯টি। এগুলো হচ্ছে ঢাকেশ্বরী মন্দির, রামকৃঞ্চ মন্দির, কলাবাগন মন্দির, বনানী মন্দির, সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির, রমনা কালী মন্দির, উত্তরা সার্বজনীন পূজা মণ্ডপ, কৃষিবিদ ইন্সটিটিউট সমাজকল্যাণ সংঘ ও বসুন্ধরা সার্বজনীন পূজা মণ্ডপ। এর বাইরের সব মন্দিরেই কয়েক স্তরের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হবে।’
প্রত্যেকটি মন্দির সিসিটিভি দ্বারা মনিটরিং করা হবে জানিয়ে আসাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘প্রবেশকালে আর্চওয়ের ভেতর দিয়ে ভক্ত ও দর্শকদের প্রবেশ করতে হবে। পোশাকে পুলিশ, নারী পুলিশ ও সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা মোতায়েন থাকবে। স্বেচ্ছাসেবকরা আর্মব্যাচ পরিহিত আলাদা পোশাকে নিয়োজিত থাকবেন। প্রত্যেক দর্শনার্থী ও ভক্তকে নিরাপত্তা বলয়, তল্লাশি ও মেটাল ডিটেকক্টর দিয়ে চেক করার পর প্রবেশ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকেশ্বরীর বাইরের প্রত্যেকটি মন্দিরেই সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে। ফায়ার টেন্ডার থাকবে। অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা থাকবে। পুরো পূজা উৎসব ঘিরে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে অস্থায়ী পুলিশ কন্ট্রোল রুম বসানো হয়েছে। যেখান থেকে সার্বক্ষণিক ডিউটিতে থেকে পূজা কমিটির নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা বিধান করা হবে।’
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘ঢাকার প্রত্যেকটি বড় বড় মন্দির স্পেশাল ব্রাঞ্চ ও ডক স্কোয়াট দ্বারা সুইপিং করা হবে। র্যাব সদস্যরাও কাজ করবেন। কোনো ধরনের ছিনতাই ও ইভটিজিংয়ের ঘটনা যাতে না ঘটে, সেজন্য সব গোয়েন্দা পুলিশ ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা মোতায়েন থাকবেন। হকার বসতে ও ঢুকতে দেয়া হবে না।’
‘দশমীর দিনে শোভাযাত্রা হবে। শোভাযাত্রার রুট হবে ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে বেরিয়ে পলাশীর মোড়, জঘন্নাথ হল, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর, সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, গোলাপ শাহ মাজার হয়ে, বঙ্গবন্ধু স্কয়ার হয়ে, সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্সের সামনে দিয়ে, নবাবপুর সড়ক দিয়ে রায় সাহেব বাজার মোড়, বাহাদুর শাহ পার্ক, জঘন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, পাটুয়াটলি হয়ে ওয়াইজঘাটে গিয়ে শেষ হবে। সেখানে বিসর্জন হবে। শোভাযাত্রা ও বিসর্জন ঘিরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শোভাযাত্রার সামনে-পেছনে-মাঝে পুলিশ মোতায়েন থাকবে’-যোগ করেন ডিএমপি কমিশনার।
আসাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘আমরা পূজা উদযাপন পরিষদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছি। পূজা উৎসবে সব ধরনের পটকা, আতশবাজি, মাদকের ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকবে। নিরাপত্তা সুবিধায় বিজয় শোভাযাত্রায় উচ্চস্বরে বাজনা বন্ধ থাকবে। বিসর্জনের সময় নদীতে নৌ পুলিশ, ডুবুরিরা মোতায়েন থাকবে। সার্চলাইটের মাধ্যমে পর্যাপ্ত লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে।’
এবার বিসর্জনের দিন পড়েছে শুক্রবার। তাই আজানের সময়, নামাজের সময় বাদ্য-বাজনা বন্ধ থাকবে। ওইদিন বেলা ১২টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সকল ধরনের বাদ্য-বাজনা ও পূজার কার্যক্রম স্থগিত থাকবে বলে জানান ডিএমপি কমিশনার। পুরো ঢাকা শহরে নিরাপত্তা চেকপোস্ট থাকবে। এজন্য পূজা মণ্ডপে ছুরি, কাচি, পোটলা, ব্যাকপ্যাক না নিয়ে আসার জন্য তিনি অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, ‘কাউকে এসব নিয়ে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। শোভাযাত্রার সময় শোভাযাত্রার রুটে অবাঞ্চিত লোক, হকারদের বসতে দেয়া হবে না। চলাচলের ক্ষেত্রে সড়কে ডাইভারশন (নিয়ন্ত্রণ) করা হবে।’
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার শাহাবউদ্দিন কোরাইশী, মনিরুল ইসলাম, কৃঞ্চপদ রায়।
Reply Reply All Forward
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন