নেছারাবাদে গরিবের সোলার প্যানেল জ্বলছে আওয়ামী লীগ, বিএনপির নেতাকর্মীসহ সমাজে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের ঘরে। ক্ষমতাসীন আ.লীগের দায়িত্বশীল নেতারা ও বিএনপি সমর্থিত উপজেলা চেয়ারম্যান মিলেমিশেই নিজ নিজ দলের অনুগত ও পছন্দের কর্মী-সমর্থকসহ অবস্থাপন্ন লোকদের মাঝে ৮০ ভাগেরও বেশি সোলার প্যানেল বিতরণ করেছেন। বাকি একটি অংশ বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে এবং কয়েকটি বাজারের সড়কে স্ট্রিট লাইট হিসেবে বসানো হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে সোলার প্যানেল বিতরণ করায় সরকারের জনকল্যাণমূলক কর্মসূচিকে সাধারণ মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে বলে মনে করেন বিজ্ঞজনেরা। ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে বিতরণের ক্ষেত্রেও দলীয় লোকদের পরিচালিত প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আবার একই ব্যক্তিকে একাধিক সোলার প্যানেল দেয়ার ঘটনাও রয়েছে। এছাড়াও অস্তিত্বহীন দুই-তিনটি অফিসের নামেও সোলার বরাদ্ধ দেয়া হয়। বিদ্যুৎবিহীন পরিবার ও হত দরিদ্রদের বঞ্চিত করে এ উপজেলায় গত চার বছর ধরে একইভাবে সোলার প্যানেল বিতরণ করার অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায়, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী টিআর, কাবিটা ও কাবিখার অনুক‚লে বরাদ্ধকৃত টাকার অর্ধেক পরিমাণ অর্থের সোলার প্যানেল বিতরণ করার নিয়ম রয়েছে। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের দুই কিস্তিতে এ উপজেলায় সোলার প্যানেল বসানোর জন্য বরাদ্দ আসে এক কোটি ৬৯ লাখ ৮৬ হাজার ৪৫৭ টাকা। এর মধ্যে সাধারণ কোটায় উপজেলা পরিষদের অনুক‚লে বরাদ্ধ আসে ৯৫ লাখ ৮৬ হাজার ৪৫৭ টাকা এবং এমপির কোটায় নির্বাচনী এলাকার অংশ হিসেবে বরাদ্দ আসে ৭৪ লাখ টাকা। হিস্যা অনুযায়ী ভাগভাগি শেষে ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদ মিলে মোট ৬২৯টি সোলার প্যানেল বণ্টন করেন। এর মধ্যে থেকে বিভিন্ন সড়কে ৩০টি স্ট্রিট লাইট বসানো হয়। উপজেলা চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাদের নিজ নিজ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও ঘনিষ্ট সমর্থকদের মধ্যে সোলার প্যানেল বণ্টন করেন। বিএনপি সমর্থিত উপজেলা মো. ওয়াহিদুজ্জামান তার ঘনিষ্ঠ সমর্থক প্রভাষক মো. ইমরান, প্রভাষক মো. আতিক, মাধ্যমিক শিক্ষক আমিনুল, মো. মাইনুল, ওমর মাস্টার, স্বপন মাস্টার, সুজন মাস্টার ও অ্যাড. আব্দুল মান্নানসহ প্রায় শতাধিক দলীয় কর্মী, সমর্থক এবং সমাজে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদেরকে সোলার প্যানেল প্রদান করেন। এদিকে এমপির বরাদ্ধ থেকে ৪৬৭টি পরিবার ও প্রতিষ্ঠানকে সোলার প্যানেল প্রদান করা হয়। এমপির প্রতিনিধি হিসেবে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান লাভলু আহমেদ দলীয় তালিকা সমন্বয় করেন। এ তালিকায় দেখা যায় পিরোজপুর জেলা পরিষদ সদস্য সেলিম হাওলাদার, সদর ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি ও কার্গো ব্যবসায়ী আ. কুদ্দুসের পুত্র মো. হাসান, কেবল (ডিস) ব্যবসায়ী মো. হায়দারসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আ.লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে সোলার প্যানেল বিতরণ করা হয়। স্বরূপকাঠি ইউনিয়ন আ.লীগ অফিসের নাম ব্যবহার করে দুইটি স্থানের পরিচয় দিয়ে দুইটি সোলার দেয়া হয়। যদিও ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ.লীগের নেতা আল আমিন পারভেজ জানান তার ইউনিয়নে দলের কোনো অফিস নেই। এছাড়াও পৌর এলাকার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত শাহাদত হোসেনের স্ত্রী রিজিয়া বেগম ও পুত্র মো. হায়দার, উপজেলা পরিষদের নৈশ প্রহরী শামিমসহ অন্তত সাত পরিবার দুইটি করে সোলার পেয়েছে। এদিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার নামে একটি সোলার বরাদ্দ থাকলেও ওই অফিসের কোনো অস্তিত্ব নেই এখানে। গরিবের সোলার নেতাকর্মীদের মাঝে বিতরণ করা যায় কিনা জানতে চাইলে উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ওয়াহিদুজ্জামান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ বিষয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু সাঈদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নীতিমালার বাইরে সোলার প্যানেল বিতরণ করা হয়ে থাকলে তালিকা দেখে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন বাজারের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে স্ট্রিট লাইট বসানোর কারণে সাধারণ মানুষ ভিষণ খুশি হয়েছে। তাই আগামীতে স্ট্রিট লাইট স্থাপনে গুরুত্ব দেয়া হবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন