সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের নিমগাছী এলাকায় সরকারি সনদ পত্র বিহীন অর্ধশত দাদন ব্যবসায়ীর পাল্লায় পড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে শত শত মানুষ। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে নিমগাছি সমাজ ভিত্তিক মৎস্য প্রকল্পের উদেশ্য।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, উপজেলার সোনাখাড়া ইউনিয়নের পুল্লা গ্রাম দাদনের গ্রাম বলে বেশ খ্যাতি অর্জন করেছে। এছাড়া এ গ্রাম সহ আকড়া, নিমগাছী, গোপালপুর, মেঘুরিয়া, গোতিথা, শ্রীরামপুর, দত্তবাড়ি ও জয়সাগর পাড় এলাকার ৪০ জন দাদন ব্যবসায়ী রয়েছে। এসব দাদন ব্যবসায়ীরা সরকারি সনদ ছাড়াই অতিরিক্ত সুদে, স্ট্যাম্প অথবা ফাঁকা চেকের মাধ্যমে চুটিয়ে দাদন ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। শতকরা ১০ টাকা মাসিক হার সুদে দাদন গ্রহীতাদের ঋন প্রদান করে থাকে। যদি কোন গ্রাহক ৫০ হাজার টাকা দাদন নিয়ে থাকেন তবে ১ মাসে পাঁচ হাজার টাকা সুদ দিতে হয়। যদি গ্রহীতা একমাসের সুদ দিতে ব্যর্থ হয়, তবে তাকে পরর্বতী মাসে সুদ দিতে হয় ৫৫ হাজার টাকার। আসল টাকার সাথে সুদের সুদ নাতিন সুদ টানতে টানতে অসংখ্য মানুষ ভিটেবাড়ী, সহায় সম্পদ হারিয়ে পথে বসেছে আবার কেউ কেউ হয়েছে নিরুদ্দেশ গ্রাম ছাড়া। ঋনের টাকা পরিশোধ কারার পরেও অসাধু দাদন ব্যবসায়ীরা চেক বা স্ট্যাম্প সরলতার সুযোগ নিয়ে ফেরত না দিয়ে নিজ হেফাজতে রেখে ১ বছর, অর্ধবছর পর হাজির হন অনাকাঙ্খিত হিসাব নিকাশ নিয়ে ঋণ গ্রহীতার বাড়িতে। শুরু হয় কান্নার রোল, বিচার শালিশ, মামলা মোকদ্দমা। ইরি বোরো মৌসুমে সার বীজ কীটনাশক সমাজ ভিত্তিক মৎস্য চাষ প্রকল্পে উপকার ভোগী মৎস্য চাষীদের মাছের পোনা, খাদ্য বাকী দেওয়া হয় সুদ প্রদানের শর্তে। মাছ বিক্রির সময় পর্যন্ত চক্রবৃদ্ধি হারে ঋনের বোঝা বাড়তে রাড়তে দেখা যায় মাছ চাষের লভ্যাংশ চলে যাচ্ছে দাদন ব্যবসায়ীদের হাতে। ফলে সমাজ ভিত্তিক মৎস্য চাষ প্রকল্পের উদেশ্য পন্ড হচ্ছে। ঋন গ্রহীতা হঠাৎ মৃত্যুবরণ করলে লাশ জিম্মি করে টাকা আদায়ের ঘটনাও ঘটেছে অহরহ।
দাদন ব্যবসায়ীদের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য ব্যক্তিরা হল, নিমগাছী পুল্লা গ্রামের ভাটার মালিক সাইফুল ইসলাম, একই গ্রামের আব্দুর রহিম, আব্দুল জলিল, বাবলু সরকার, আব্দুল মানিক, ভুট্টু, মোজ্জামেল হক, নিমগাছী ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক আশরাফ আলী, জয় সাগর দক্ষিণপাড়া এলাকার জহির উদ্দিন, গোথিতা গ্রামের দবির উদ্দিন, নিমগাছী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ঝন্টু রায় মাহাতো, মেগুড়িয়ার সুনিল মাহাতো, নিমগাছীর কুরান চন্দ্র পাল, নিমগাছীর মদন মোহন দত্ত, ডোকোরেটর ব্যসায়ী বিরেশ, গোপাল পুরের সোহেল রানা, পুল্লার ভাটা মালিক কায়ুম সরকার, শ্রী রাম পুরের জিল্লুর রহমান, অদু তালুকদার, দত্ত বাড়ীর বাবুল, আল-রজক, নিমগাছীর বরুন সরকার, অসীম পোদ্দার,মানিক পোদ্দার, বাশাইলের আবুল কালাম আজাদ অবসর প্রাপ্ত সৈনিক সহ আরো অর্ধশত দাদন ব্যবসায়ী চুটিয়ে দাদন ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে নিমগাছী অগ্রণী ব্যাংক এর শাখা ব্যবস্থাপক জানান, ফাঁকা চেকের মাধ্যমে ঋণ প্রদান করে টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে দাদন ব্যবসায়ীরা মামলার উদ্দেশ্যে চেক প্রত্যাখানের জন্য ব্যাংকে দাখিল করে থাকে। যে কারণে আমাকে অনাকাঙ্খিত ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়।
সোনাখাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. মোস্তাফা কামাল রিপন জানান, দাদন ব্যবসায়ী ও দাদন গ্রহীতাদের দেন দরবার করতে করতে আমার অবস্থাই খারাপ। তিনি তদন্ত পূর্বক দাদন ব্যসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য জোর দাবি জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন