বাংলাদেশের মাঝামাঝি দক্ষিণের জেলা নোয়াখালীর দক্ষিণে রয়েছে বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ জলরাশি। এ জেলার দক্ষিণে হাতিয়া-সুবর্ণচরের মাঝখানে বয়ে গেছে মেঘনার মোহনা। এ মোহনার এপার ওপার কখনো ভাঙে আবার কখনো গড়ে। এ ভাঙা গড়ার খেলায় অনেকের স্বপ্ন হয়েছে বিলীন। হারিয়েছে ঘরবাড়ি, বাজার, ঘাট, কালভার্ট, শেল্টার, রাস্তাসহ বহু মূল্যবান সম্পদ।
সুবর্ণচরের খণ্ডিত অংশ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্যে বরাদ্দকৃত গুরত্বপূর্ণ অঞ্চল ‘স্বর্ণদ্বীপ’। দ্বীপটিকে রক্ষায় উত্তর মাথা সমিতির চর থেকে দক্ষিণে মামুর খাল পর্যন্ত প্রায় ১০কি.মি. জায়গায় বাঁধসহ ভাঙন রোধে নেয়া হয় নি কোন পদক্ষেপ। ৯ বছর আগে ‘চর ডেভেলপমেন্ট সেটেলমেন্ট প্রোগ্রাম’ বা সিডিএসপি-৪ নামে এলাকাভিত্তিক একটি উন্নয়নমূলক প্রকল্প নেয়া হয়েছিলো। তবে সে প্রকল্পে নদী ভাঙন রোধে কোন কাজ ছিল না।
সরেজমিনে গিয়ে সিডিএসপি প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার শংকর চন্দ্র সাহা জানান, গত ২০১২-২০১৮ পর্যন্ত জরিপে এ দ্বীপে প্রায় ৭০০০ হেক্টর ভ‚মি নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে। এ ভাঙনের ফলে সুবর্ণচর-হাতিয়া উপজেলাধীন বয়ার চর, নলের চর, নাঙ্গলিয়া, কেরিং চর, মোহাম্মদপুর ও চরক্লার্ক ইউনিয়নে প্রায় ২০০ কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়।
এ ক্ষতির তালিকায় যোগ হয়েছে- সুøইস গেট ৩টি, বেড়িবাঁধ প্রায় ৩৫কি.মি, ক্লোজার ৪টি, পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির ঘর ২টি, সাইক্লোন শেল্টার ৭টি, কাঁচা ও পাকা রাস্তা ৫০কি.মি, কালভার্ট ৯টি, ইউড্রেন ১০টি, উন্নয়নকৃত বাজার ১টি, অন্যান্য বাজার ৫টি, মাটির কিল্লা ৭টি, গভীর নলক‚প ৩১১টি, পিট লেট্রিন ৫০৫০টি, বনায়নকৃত অঞ্চল ৪০০০ হেক্টর, বাঁধ ও রাস্তা বনায়ন ৬৩কিমি, এ ছাড়াও অসংখ্য বসত বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।
দ্রæত নদী ভাঙন রোধে কোন ব্যবস্থা না নেয়া হলে সুবর্ণচর-হাতিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা নদী গর্ভে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
স্থানীয় চরক্লার্ক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এডভোকেট আবুল বাসার ও মোহাম্মদপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, সরকারি অর্থ সহায়তা পেলে এ ভাঙন রোধ করা সম্ভব।তারা বলেন, নদীক‚লে ১০কি.মি পথ জিও ব্যাগ এবং বøক দিয়ে ভেতরে বাঁধ নির্মাণ করলে নদী ভাঙা বন্ধ হয়ে যাবে এবং নদী ক‚লের মনোরম পরিবেশ দেখতে প্রতিদিন শত শত লোকজন এখানে আসা যাওয়া করবে। এলাকা উন্নত হবে এবং পর্যটন এরিয়া হিসেবে দেশের দক্ষিণে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান করে নিবে বলে তারা মনে করেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন জানান, ১২ কি.মি. এলাকা নদী ভাঙন থেকে রক্ষায় ৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সার্ভে এবং সুপারিশের ভিত্তিতে অবিলম্বে ডিপিপি সাবমিট করা হবে।
সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রিন্সিপাল এএইচএম খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালী প্রকল্পটি গ্রহণ করলে, উপজেলার পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন