বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বিশিষ্টজনদের ভাবনায় আজকের সংলাপ

রেজাউর রহমান সোহাগ | প্রকাশের সময় : ১ নভেম্বর, ২০১৮, ৩:০১ পিএম | আপডেট : ৭:৪৮ পিএম, ১ নভেম্বর, ২০১৮

সরকার এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে বহুল প্রত্যাশিত রাজনৈতিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আজ সন্ধ্যা ৭ টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে। দেশের সকল সচেতন মানুষের দৃষ্টি তাই আজ এই সংলাপের দিকে। অতীতের রাজনৈতিক সংলাপগুলো সফল না হওয়ায় স্বভাবতই আজকের এই সংলাপ নিয়েও আশাবাদের পাশাপাশি নিরাশার দোলাচলও কাজ করছে সকলের মনে। দেশের বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও আজকের এই সংলাপ নিয়ে উদগ্রীব রয়েছেন এর ফলাফলের আশায়। এই সংলাপের বিষয়ে আজ সকালে ইনকিলাবের পক্ষ থেকে মতামত ও প্রতিক্রিয়া নেয়া হয়েছে জনগণের কাছে অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য, খ্যাতিমান রাজনৈতিক বিশ্লেষক কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অবঃ) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও খ্যাতিমান রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আবুল কাশেম ফজলুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আসিফ নজরুল এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক ও দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর। সংলাপ নিয়ে ইনকিলাবকে দেয়া তাদের সেই মন্তব্য পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

 

কাদের সিদ্দিকী
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম সংলাপের বিষয়ে দৈনিক ইনকিলাবকে তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘বাংলাদেশের কোন সংলাপই অতীতে সফল হয় নাই। এবারের সংলাপেরও সেরকম সম্ভাবনা আছে। কিন্তু এবারের সংলাপের উদ্যোগটা অভাবনীয়। কারণ রাজনীতির এরমকম বিরূপ পরিস্থিতিতে অতীতে কখনও সংলাপ হয় নাই। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর কন্যা বলেই হয়তো এরকম একটি সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন। কাজেই আশা করা যায় সংলাপে হয়তোবা সুন্দর একটা সমাধান বেরিয়েও আসেতে পারে এবং আমি মনে করি সমাধান হওয়া উচিত। আর যদি কোন কারণে এই সংলাপ ব্যর্থ হয়, তাহলে তার দ্বায়ভার পুরোপুরি সরকারকেই বহন করতে হবে এবং তখন দেশের পরিস্থিতি এমন কঠিন অবস্থায় চলে যেতে পারে যা হয়তো আমরা চিন্তাই করতে পারছি না।’

 

ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেন
খ্যাতিমান রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন সংলাপের ব্যাপারে ইনকিলাবকে বলেন, ‘সংলাপের অতীত তো খুব ভালো না। তবে অতীতের চেয়ে এবারের সংলাপের একটি ব্যতিক্রমী দিক হচ্ছে, অতীতে এই সংলাপ হয়েছে মাঝারি পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে আর এবার হচ্ছে সরাসরি শীর্ষ নেতাদের মধ্যে যারা সিদ্ধান্ত দিয়ে দিতে পারবেন। তাই কিছুটা হলেও এবার আশা করা যায় হয়তো বা ইতিবাচক কিছু হলে হতেও পারে। হয়তো যে দাবিগুলো নিয়ে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে তার সব পূরণ না-ও হতে পারে। কিন্তু দেশের বৃহত্তর স্বার্থে উভয় পক্ষকেই ছাড় দিয়ে হলেও একটা আন্তরিক সমঝোতায় পৌঁছানো প্রয়োজন। অনেক সময় দেখা যায় একটা সংলাপেই সমস্যার সমাধান হয় না। সেই ক্ষেত্রে প্রয়োজনে বার বার সংলাপে বসে হলেও বর্তমান রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান হওয়াটা অত্যন্ত জরুরী বলে আমি মনে করি।’

 

ড. বদিউল আলম মজুমদার
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার সংলাপ নিয়ে তার প্রতিক্রিয়ায় ইনকিলাবকে বলেন, ‘আমরা বহুদিন ধরেই এই সংলাপের কথা বলে আসছিলাম। যদি আজকের এই সংলাপ সফল হয় তাহলে অবশ্যই সেটা হবে রাজনীতির জন্য একটা ইতিবাচক দিক এবং রাজনীতিতে সংলাপের কোন বিকল্প নাই। কাজেই এই সংলাপ নিয়ে আমি আশাবাদী। তবে এই সংলাপের সফলতা পুরোটাই নির্ভর করছে সরকার প্রধান অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক স্বদিচ্ছার উপর। এখানে এক ব্যাক্তির সিদ্ধান্তই সব। অতীতের সংলাপগুলোর অভিজ্ঞতা যেহেতু সুখকর নয় তাই এই সংলাপ নিয়ে জনগণের মনে আশা-নিরাশা দুটোই সমানভাবে আছে। আমি মনে করি সংলাপের এক নম্বর এজেন্ডা এবং সমাধান হওয়া উচিত নির্বাচনকালীন সরকারের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা শতভাগ নিশ্চিত করা এবং জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া। কিন্তু গতকাল পর্যন্তও বিভিন্ন বিষয়ে সরকার এবং নির্বাচন কমিশন যেসব আচরণ করছে তাতে তো সামনে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোন পরিবেশই আমরা দেখছি না। সর্বশেষ এমপি প্রার্থীদের নির্বাচনে অংশ নিতে ট্যাক্স রিটার্ন (আয়কর রিটার্ন) জমা দিতে হবে না বলে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা একেবারেই অন্যায় এবং জনস্বার্থবিরোধী। এছাড়াও সারাদেশে সেভাবে গণহারে বিরোধীমতের নেতাকর্মীদেরকের মিথ্যা ও গায়েবী মামলা দিয়ে গ্রেফতার ও হয়রানি করা হাচ্ছে সেটা তো সরকারের সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে না যাওয়ার সবচাইতে বড় উদাহরণ। এই সব সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে সংলাপের সফলতা নিয়ে যথেষ্ঠ সংশয় থেকেই যাবে।’

 

ড. আবুল কাশেম ফজলুল হক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও খ্যাতিমান রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আবুল কাশেম ফজলুল হক তার প্রতিক্রিয়ায় ইনকিলাবকে বলেন, ‘আমাদের সংলাপের অতীততো শুধুই ব্যর্থতার রেকর্ড। আমাদের সংলাপের সফলতা ব্যর্থতা দুটোই নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর উপর। যদি তিনি চান তাহলে সমস্যার সমাধান হবে আর যদি তিনি না চান তাহলে সমস্যার সমাধান হবে না। আমার মনে হয় না ড. কামাল হোসেন এই সংলাপে তাদের সব দাবির ব্যাপারে শেষ পর্যন্ত অটল থাকতে পারবেন। সংলাপে হয়তো অনেক ব্যাপারেই মত পার্থক্য তৈরি হতে পারে এবং এই রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাটা সহজেই কাটবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে এই সংলাপটাই হয়তো শেষ না। হয়তো নেপত্থ্যে আরও বিভিন্নভাবে কথাবার্তা হতে পারে। তবে আমাদের রাজনীতির মান এতো বেশি নীচে নেমে গেছে যে আমি মনে করি এই মুহূর্তে নির্বাচনের চেয়েও, সংলাপের চেয়েও অনেক বেশি জরুরী রাজনীতির মান উন্নয়নের ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়া।’

 

ড. আসিফ নজরুল
খ্যাতিমান রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল ইনকিলাবকে দেয়া তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘রাজনৈতিক সংলাপ নিয়ে আমাদের যে অভিজ্ঞতা তা খুবই খারাপ। দেখা যায় সংলাপে সব আলোচনাই হয়, সরকারও সব কথা মনোযোগ দিয়েই শোনে কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সেগুলোকে কোন গুরুত্ব দেয়া হয় না এবং সরকারের মনে যা থাকে শেষ পর্যন্ত সরকার তার সেই অবস্থানেই অনঢ় থাকে। আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়েই সংলাপে সরকারের এমন আচরণ দেখেছি। তাই আমি আশা করবো দেশের বৃহত্তর স্বার্থের কথা চিন্তা করে সরকার যেন অন্তত আজকের এই সংলাপে তাদের সেই আগের মনোভাব থেকে সরে আসে। সরকার আন্তরিক থাকলে সংবিধান পরিবর্তন না করেও শুধু সংবিধান যথাযথ ভাবে মেনে চললেই অনেক সমস্যার সমাধান করে ফেলা সম্ভব। সবকিছু তো আর সংবিধান দিয়ে হয় না। সরকার চাইলে তার স্বদিচ্ছা আর নির্বাহী সিদ্ধান্তের মাধ্যমেও অনেক কিছু করতে পারে। যেমন, নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনী মোতায়েন। সেনাবাহিনী মোতায়েন করার সিদ্ধান্তের জন্য তো সংবিধান পরিবর্তনের প্রয়োজন নাই। এটা তো সরকার চাইলেই পারে। সংলাপের মাধ্যমে সরকার যদি তার আন্তরিকতার প্রমাণ দিতে পারে এবং রাজনৈতিক সমঝোতা হয় তাহলে বর্তমান নির্বাচন কমিশনই তখন একটা বার্তা পাবে এবং তারাও তখন নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারবে।’

 

মতিউর রহমান চৌধুরী
বিশিষ্ট সাংবাদিক ও দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী সংলাপ নিয়ে ইনকিলাবকে বলেন, ‘সংলাপে হওয়া তো উচিত অনেক কিছুই কিন্তু আদৌ কতটা হবে সেটা নিয়ে আমি যথেষ্ট সন্দিহান। সবচেয়ে বড় কথা, হঠাৎ করেই এই সংলাপটা হতে চলেছে এবং এটার জন্য তেমন কোন গ্রাউন্ডওয়ার্ক হয় নাই। তবে যদি সংলাপে নাটকীয় কিছু হয়ে যায় তাহলে তো সেটা হবে দেশবাসীর জন্য খুবই বড় সুসংবাদ। আমিও সেটা চাই এবং হলে খুবই খুশি হবো। তবে যে সাত দফা বিরোধীদলের পক্ষ থেকে সরকারকে দেয়া হয়েছে সেগুলোর ব্যাপারে সরকার কতটা ইতিবাচক হবে সেটা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে এবং সেই দৃষ্টিকোণ থেকে এই সংলাপকে নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী হওয়ার মত কিছু আমি এখনও পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছি না। যেমন সাত দফার অন্যতম প্রধান দাবি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি। সংলাপে এই বিষয়টি আলোচনায় উঠলে সরকার পক্ষ হয়তো তখন বলবে বিষয়টি আদালতের এখতিয়ার এবং এ ব্যাপারে আপনারা আদালতের শরণাপন্ন হন। কিন্তু বাস্তবতা তো এখানে আদালতের বাইরে সরকারের ভূমিকাও অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই আমি মনে করি এরকম অনেক ইস্যু নিয়েই সংলাপে জটিলতা তৈরি হতে পারে।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
১ নভেম্বর, ২০১৮, ৬:৫৭ পিএম says : 0
Apnara atodin shonglapay boshar jonno matha khaya falcen, r akhon shurur agai negative vabcen. Actually you are all of "Goll Alu" manay shob torkaritai khatay.
Total Reply(0)
মাওঃমোঃলোকমা হুসাইন ১ নভেম্বর, ২০১৮, ৭:৫১ পিএম says : 0
আমি মনে করি সরকারের স্বদিচ্ছা থাকলেই সংলাপ ফলফ্রুশ হবে..এবং বিরধি দলেরও উচিত কিছু দাবি ছার দিয়ে হলেও সংলাপ সফলের দিকে নিয়ে যাওয়া..
Total Reply(0)
md. jolil ১ নভেম্বর, ২০১৮, ১০:৫৩ পিএম says : 0
সত্তি কথা বলতে সরকারে ভাল উদ্দেশ্য যদি থাকে তাহলে সংলাপ সফল হবে।
Total Reply(0)
Mohammed Kowaj Ali khan ১ নভেম্বর, ২০১৮, ১১:০৯ পিএম says : 0
ওদের লুভ লালসার কারণে ওরা বিনা ভুটে নিরবাচিত। ওরা তো বড় বেহায়া, ওদের সামান্য লজ্জা আর মানবতা বুদ থাকিলে আজই ওরা পদত্যাগ করিবে। কি প্রয়োজন সংলাপের? ভারতীয় রাজাকার ইসলামের দুশমণ জনগণ দেখিতে চায় না। ইনশাআল্লাহ। ******* *****
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন