মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী বিশ্ব

আসিয়া বিবি খালাসে উত্তাল পাকিস্তান

সেনাপ্রধান-ইমরান খান বৈঠক

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

ব্লাসফেমি বা ধর্মদ্রোহিতার অভিযোগে আসিয়া বিবিকে দেয়া মৃত্যুদন্ড বাতিল করে বুধবার সুপ্রিম কোর্ট বেকসুর খালাস দেয়ায় বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে পাকিস্তান। রাজধানী ইসলামাবাদসহ বিভিন্ন প্রদেশের মহাসড়কগুলোতে গতকাল বৃহস্পতিবারও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রাখে বিক্ষোভকারীরা। এর ফলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সেনাপ্রধানের সাথে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান
গত বুধবার রাতে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে ইমরান খান সবাইকে শান্ত থাকার আহবান জানান। ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এভাবে বিক্ষোভের মাধ্যমে বø্যাকমেইল করলে কোনো সরকার চলতে পারে না। আর এর জন্য দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন আমাদের পাকিস্তানিরা। সাধারণ লোকজন ও গরিবরা।’ তিনি বলেন, ‘আপনারা রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন, আপনারা লোকজনের জীবন-জীবিকা ছিনিয়ে নিচ্ছেন। এটি ইসলামের সেবা নয়, এটি রাষ্ট্রের সঙ্গে শত্রুতা। শুধু রাষ্ট্রবিরোধীরাই এমনভাবে কথা বলে, বিচারকদের হত্যা কর, সেনাবাহিনীর ভেতরে বিদ্রোহ শুরু করে। এরা শুধু তাদের ভোটব্যাংক বাড়ানোর চেষ্টা করছে।’
ইমরান খানের বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন বিরোধী দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) সিনিয়র নেতা খুরশিদ শাহ। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন তা তার বলা উচিত হয়নি।
এর আগে, উত্তেজনাকর পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে বুধবার বৈঠক করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও সেনা প্রধান জেনারেল কমর জাভেদ বাজওয়া। বিভিন্ন শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা দেয়ায় আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ে ওই বৈঠকে বসেন তারা। বৈঠকের বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী টুইটারে লিখেছেন, বৈঠকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ও আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া তারা দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে এক সঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন।
এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বিক্ষোভকারীদের হুঁশিয়ারি করে দিয়ে বলা হয়েছে, রেড জোন খ্যাত এলাকায় তারা প্রবেশ করলে প্রশাসন আইনগত ব্যবস্থা নেবে। এই রেড জোনকে বলা হয় পাকিস্তান প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র। কারণ, এখানেই রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় আইওয়ান ই সদর। এছাড়া এ এলাকায় রয়েছে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন। আছে পাকিস্তানের পার্লামেন্ট, সচিবালয়, সুপ্রিম কোর্ট, কূটনৈতিক পল্লী, ও বিদেশী দূতাবাস।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইসলামাবাদ ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্টেট সতর্ক করে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন তাহরীকে লাব্বাইক ইয়া রাসুলুল্লাহ নামের সংগঠনের নেতা মাওলানা ইনায়েতুল হককে। তাতে বলা হয়েছে, যদি বিক্ষোভকারীরা রেড জোনে প্রবেশ করে তাহলে তার দলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বুধবার আসিয়াকে বেকসুর খালাস দেয়ার পর পাকিস্তানের করাচি, লাহোর, পেশোয়ার, মুলতানসহ সর্বত্র বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। কট্টরপন্থী তাহরীকে লাব্বাইক পার্টির নেতা মুহাম্মদ আফজাল কাদরি সর্বোচ্চ আদালতের তিন বিচারকের ‘মৃত্যুদন্ড প্রাপ্য’ বলে ঘোষণা করেন।
বিক্ষোভের বিষয়ে ইসলামাবাদের ডিসি বলেছেন, আবপাড়া, জিরো পয়েন্ট ও আইজেপি রোডে যে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল তার সমাধান করা হয়েছে। লাহোরে ট্রেন চলাচলের শিডিউলে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, সেখানে বিভিন্ন রুটে বিক্ষোভকারীদের জন্য ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে না। লাহোর থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল এমন বেশ কিছু ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। ইমামিয়া কলোনি পাত্তাক নামক স্থানে রেললাইন বন্ধ করে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। এছাড়া গ্রিন লাইন, খাইবার মেইল এক্সপ্রেস, জাফর এক্সপ্রেস, মুলতান এক্সপ্রেস ও আল্লামা ইকবাল এক্সপ্রেসের যাত্রা বিলম্বিত করা হয়েছে।
আসিয়া শুরু থেকেই নিজেকে নির্দোষ দাবি করে এসেছেন। গত ৮ বছর ধরে তাকে কারাগারে দিন কাটাতে হয়েছে। তাকে চলতি সপ্তাহেই মুক্তি দেয়া হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। মুক্তি পাওয়ার পর তার পরিকল্পনা কী তা জানা যায়নি। তবে তার আইনজীবী সাইফুল মুল্লুক জানিয়েছেন, এ রায়ের পর নিজেকে রক্ষার জন্য তার পশ্চিমা কোনো দেশে চলে যাওয়া উচিত।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে একই পাত্রে পানি খাওয়া নিয়ে তর্কাতর্কির সময় খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী আসিয়া বিবি মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স.) কে নিয়ে কটূক্তি করেছেন বলে দুই মুসলিম নারী অভিযোগ করেছিলেন। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে বিচারিক আদালত তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়। বুধবার সুপ্রিম কোর্ট সেই রায় বাতিল করে আসিয়া বিবিকে বেকসুর খালাস দেয়। রায়ের বিষয়ে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি মিয়া সাকিব নিসার বলেছেন, কারো বিরুদ্ধে যদি কোনো প্রমাণ না থাকে তাহলে কী করে তাকে আমরা শাস্তি দেবো।
এ নিয়ে ডন পত্রিকা একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, ব্লাসফেমি আইনের যাতে অপব্যবহার কমানো যায় তার ব্যবস্থা নেয়া উচিত রাষ্ট্রের। এতে আরো বলা হয়েছে, এই আইনের অপব্যবহার যে শুধু মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় ব্যবহার করা হচ্ছে এমন নয়, এর শিকার হচ্ছেন বিপন্ন সংখ্যালঘুরাও। সূত্র : বিবিসি, ডন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন