ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আহসান উল্যাহ ওরফে আহসান সাইয়েদের বিরুদ্ধে গুরুতর চারিত্রিক স্খলনের অভিযোগ উঠেছে। ঢাকায় অবস্থিত ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পরিবার চট্টগ্রামের চাঁদগাও আবাসিক এলাকার একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন। ছুটির দিনগুলোতে তিনি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাতায়াত করেন। চাঁদগাও আবাসিক এলাকায় ভিসি আহসান উল্যাহর প্রতিবেশীরা দীর্ঘদিন ধরেই তার বিরুদ্ধে শিশুদের সাথে যৌনাচারের অভিযোগ তুলছেন বলে পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়। দেশের আলেম ওলামা ও মাদরাসা শিক্ষকদের সুদীর্ঘ আন্দোলনের ফসল ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। এফিলিয়েশন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি স্বতন্ত্র আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবী পুরণ করার মধ্য দিয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নি:সন্দেহে একটি গৌরবময় ঐতিহ্যের সাথে যুক্ত হয়েছেন। তবে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাই যথেষ্ট নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যাশিত মান, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সমুহ বাস্তবায়নে সরকারের সংশ্লিষ্টদের যথাযথ ভ‚মিকার কোন বিকল্প নাই। বিশেষত: এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যে ধরনের যাচাই-বাছাই ও সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে তা সঠিকভাবে পালিত হয়নি। এ কারণেই ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভিসির বিরুদ্ধে গুরুতর চারিত্রিক স্খলনের অভিযোগ দেশের ওলামা-মাশায়েখকে বিষ্মিত ও লজ্জিত করেছে।
গত সোমবার একটি পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, শিশু বলাৎকারের অভিযোগে চাঁদগাও আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা একত্রিত হয়ে আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. আহসান উল্যাহর বাসা অবরুদ্ধ করে রাখে এবং পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত একটি ভিডিও ক্লিপিংয়ে দেখা যায়, কিছু উত্তেজিত ব্যক্তি আহসান উল্যাহ ওরফে আহসান সাইয়েদকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করছেন এবং তিনি করজোরে ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। অবশেষে একদিনের মধ্যে বাসা ছেড়ে সপরিবারে অন্যত্র চলে যাওয়ার শর্তে এলাকাবাসির অবরোধ থেকে তিনি রক্ষা পান বলে জানা যায়। ড. আহসান উল্যাহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০১৬ সালে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর পর তাকে প্রধানমন্ত্রীর নাম ব্যবহার করে ক্ষমতা অপব্যবহারকারীদের বিশেষ সুপারিশে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ ছিল। এ ক্ষেত্রে দেশের আলেম সমাজের মতামত বা নিরপেক্ষ যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই কোন অজ্ঞাত কারণে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে শুরুতে জামায়াত কানেক্শনের অভিযোগ ওঠে, কিন্তু পরে তিনি অতি আওয়ামী লীগার রূপ ধারণ করে সরকারকেও প্রতারিত করেন বলে ধারনা করা হয়। অতীতে নিয়োগ বাণিজ্যেরও বহু অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার অবক্ষয় ও মানহীনতার বিষয় নতুন করে ব্যাখ্যাার কোন প্রয়োজন নেই। দেশের প্রায় সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, শিক্ষক ও পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে নানাবিধ অনিয়ম-দুর্নীতি ও অনৈতিক স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি পুরনো ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ও এহেন অভিযোগ থেকে মুক্ত নয়। তবে দেশের আলেম সমাজের দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত বিশেষায়িত উচ্চতর দ্বীনি প্রতিষ্ঠান ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির এমন লাম্পট্য ও চারিত্রিক স্খলনের ঘটনা দেশের আলেম সমাজ, ধর্মপ্রাণ জনগন ও মাদরাসা সংশ্লিষ্ট লাখো মানুষকে ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ করেছে। সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি, আত্মীয়তা, আঞ্চলিকতা, খাতির ইত্যাদি বিবেচনায় ভিসি নিয়োগের কারণেই এমন ব্যক্তিরা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কলঙ্কিত করা হয়েছে।
ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় একটি ধর্মীয় ঐতিহাসিক চেতনার প্রতিক। দেশের লাখো আলেমের ঘাম ঝরানো আন্দোলনের ফসল। বিভিন্ন স্তরের সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী ও ছাত্রদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, দুর্নীতি, অবক্ষয় ও নৈতিক স্খলনের অভিযোগ থাকলেও ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ মেনে নেয়া যায় না। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির নৈতিক স্খলনের ঘটনার তদন্ত ও বিচার হওয়া আবশ্যক। আরবি বিশ্ববিদ্যালয় তো বটেই, দেশের আর কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বা শিক্ষক হিসেবে যেন এমন অসৎ ও চরিত্রহীন ব্যক্তিরা নিয়োগ না পায়, তার জন্য এদের ব্যাকগ্রাউন্ড, রক্তবংশ ও অতীত জীবন বৃত্তান্ত এবং প্রচলিত আইনের পরিবর্তনসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। দেশের আলেম সমাজের প্রত্যাশাকে বাস্তবে রূপায়িত করতে হলে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়কে বহু পথ পাড়ি দিতে হবে। এমন একজন অযোগ্য, দুর্নীতিবাজ, চরিত্রহীন ব্যক্তির অধীনে এমন একটি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলতে পারেনা। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় ভিসির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠার পর তিনি এ পদে থাকার নৈতিক ও আইনগত অধিকার হারিয়েছেন। এমন একটি দায়িত্বশীল ও উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন পদে থেকে শিশু বলাৎকারের অভিযুক্ত হওয়া ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। ন্যুনতম আত্মমর্যাদাবোধ থাকলে তিনি নিজেই স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে প্রতিষ্ঠানকে কলঙ্কের হাত থেকে মুক্তি দিবেন। সেই সাথে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগের ক্ষেত্রে মাদরাসা শিক্ষকদের একক সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনসহ অন্যান্য অংশীজন ও দেশের আলেম সমাজের প্রতিনিধিদের মতামত এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। এমনটাই সংশ্লিষ্ট সকলের প্রত্যাশা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন