সমাজের প্রতিবন্ধী লোকজন আমাদের সমাজেরই মানুষ। এরা সবাই আমাদের আপনজন। এদেরকে আমাদের থেকে দূরে ঠেলে দেয়া ঠিক নয়। এদের দূরে না রেখে আমাদের সাথে চলাফেরা ও কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে। এদের এ সুযোগ দিলে আমাদের জাতীয় উন্নয়নে এরা বড় ধরনের অবদান রাখতে পারবে। তাই এদের দূরে না রেখে কাজের জায়গা নিশ্চিত করতে হবে। এদের জন্য পৃথক ক্যাটাগরি করতে হবে। এরা কে কোন কাজ করতে পারবে, তার একটি নির্দিষ্ট তালিকা তৈরি করতে হবে। যাতে কাজের সন্ধানে গিয়ে নিজের যোগ্যতা থাকা সত্তে¡ও ভাইভা বোর্ড থেকে তাদের ফিরে আসতে না হয়। দাতা কোম্পানিগুলো তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয় তারা কাজ করতে পারবে না। অভিযোগ করা খুব সহজ, কিন্তু অভিযোগকে দূরীভূত করা খুব কঠিন। ‘প্রতিবন্ধী’ শব্দটা খুব অপ্রিয়, আভিধানিকভাবে ‘প্রতিবন্ধী’ শব্দটা পরিবর্তনের দাবি উঠেছে। বর্তমানে সময়ে তাদের প্রতিবদ্ধী না বলে, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন জনগোষ্ঠি বলা হয়। এখন সময় পাল্টাচ্ছে। এই জনগোষ্ঠি এরই মধ্যে নিজেদের দক্ষতার প্রমাণ করেছে। যার বড় উদাহরণ বিশেষ অলিম্পিক। সরকার বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন জনগোষ্ঠির জীবনমান উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। শুধু সরকার নয়, এ ব্যাপারে দেশের সর্বস্তরের মানুষকেই কাজ করতে হবে। নিজে সচেতন হতে হবে এবং অন্যকে সচেতন করতে হবে।
সরকার ১০টি লক্ষ্য নির্ধারণ করে প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিবন্ধীবান্ধব উন্নত দেশগুলোর মতো করেই কাজের পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কাজের জায়গায় গিয়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা নানা বাধার সম্মুখীন হয়। ব্রিটিশ আমলে করা কিছু আইনে অনেক অসংগতি রয়েছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্বার্থে এসব আইন সংশোধন করতে হবে। নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট এখনও নবজাতক। সবার সহযোগিতা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে যাচ্ছে।
দেশের ১৬ কোটি মানুষের ৩২ কোটি হাত যদি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দিকে প্রসারিত না হয়, তাহলে প্রতিবন্ধীবান্ধব সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না। নিজ নিজ অবস্থান থেকে সকলকেই এ অবস্থার উন্নয়নে কাজ করতে হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য মানবিক হতে হবে। অন্তরটাকে বৃহৎ করতে হবে। আমরা কেউই স্বাভাবিক নই। শুধু প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চেয়ে একটু চালাক। বিভিন্ন ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে সরকারের দিকনির্দেশনা জরুরি। যেন সব ভবনেই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কথা মাথায় রেখে শৌচাগার নির্মাণ করা হয়।
সরকার আইন করেছে। কিন্তু সরকারকে এই আইনের দেখভাল করা জরুরি। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শুধু চাকরি দিলেই হবে না। তাদের চাকরি করার পরিবেশও তৈরি করে দিতে হবে। সবার আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিবন্ধীবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সবাই যদি নিজ নিজ জায়গা থেকে শুরু করি, তবেই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়ন সম্ভব হবে। ২০২১ সালের মধ্যে সরকারের টার্গেট আইসিটি বিভাগের মাধ্যমে অন্তত তিন হাজার প্রতিবন্ধী ব্যক্তির চাকরি নিশ্চিত করা। তাই তাদের দক্ষ, যোগ্য ও সক্ষম করে তুলতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৫ সালে ৩২ জন প্রতিবন্ধী, ২০১৬ সালে সাতজন, ২০১৭ সালে ১১৫ জন ও ২০১৮ সালে ১৭৬ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে চাকরি দেওয়া হয়েছে।
দুই বছর ধরে একটি ‘অ্যাপ্লিকেশন’ নিয়ে কাজ করছে অটিজম অ্যান্ড এনডিসি। অটিজমের ২৫ শতাংশ শিশু কথা বলতে পারে না। অনেকের কথা বলতে দেরি হয়। অনেক ‘অটিজম’ শিশু তাদের ভেতরের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে না বলে উগ্র আচরণ করে। এদের টেকনোলজি সাপোর্ট দেওয়া হলে দ্রুতই অবস্থার পরিবর্তন হয়। টেকনোলজিক্যাল ব্যবস্থার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করে প্রতিবন্ধী তরুণদেরও বিভিন্ন জায়গায় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব। আমাদের দেশে সব প্রতিবন্ধী শিশু ও ব্যক্তি বিশেষত সুবিধাবঞ্চিত নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল (এনডিডি) প্রতিবন্ধী, অর্থাৎ অটিস্টিক, সেরেব্রাল পালসি, ডাউনস সিনড্রোম ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিশুর জন্য সমান সুযোগ ও অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের জীবনমান পরিবর্তন, অধিকার, নিরাপত্তা, সকল পর্যায়ে অংশগ্রহণ নিশ্চিত এবং সমাজের দায়বদ্ধতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই ২০০৩ সালে সীড যাত্রা শুরু করে। ২০০৪ সাল থেকে এইচএসবিসি সীডের বিভিন্ন কার্যক্রমে সহায়তা প্রদান করে আসছে। বর্তমানে সীড এইচএসবিসির সহায়তায় নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী শিশুদের মূলধারা বিদ্যালয় উপযোগী করে তৈরির পাশাপাশি এ ধরনের কিশোর-যুবকদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান কার্যক্রম বাস্তবায়িত করছে।
বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা অনুযায়ী চাকরি দেওয়া জরুরি।দেশের প্রতিবন্ধী আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার একটি অংশ।তাই দেশের সমস্ত উন্নয়নের ক্ষেত্রে তাদের কাজে লাগাতে হবে। তাদের কাজের মাধ্যমে একদিকে তারা হবে স্বনির্ভর অপরদিকে দেশ এগিয়ে যাবে সামনের দিকে।যদি আমরা সচেতন লোকজন তাদেরকে তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী কাজে লাগাতে না পারি তাহলে তারা হবে আমাদের উপর বোঝা।আর সে বোঝা আমাদের টানতে হবে। তাই সরকারের পাশাপাশি দেশের বিত্তশালী লোকজনদেরকে তাদের সহায়তা করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন