শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

বিশ্ব ইজতেমা স্থগিত করা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত

| প্রকাশের সময় : ১৭ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৫ এএম

আগামী জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব ইজতেমা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। সাধারণত জানুয়ারির ১০ থেকে ১৫ তারিখে তাবলীগ জামাতের প্রথম পর্ব এবং এর চার-পাঁচ দিন পর দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। গত বিশ্ব ইজতেমায় ভারতে তাবলীগের মুরুব্বি মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীরা ২০১৯ সালের ১১, ১২ ও ১৩ জানুয়ারি তারিখ নির্ধারণ করেন। অন্যদিকে সাদ বিরোধীরা কওমি আলেমদের নিয়ে জানুয়ারির ১৮, ১৯ ও ২০ তারিখ নির্ধারণ করেন। এ নিয়ে দ্ব›দ্ব তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ফলে জাতীয় নির্বাচন এবং তাবলীগ জামাতের দুই পক্ষের দ্ব›েদ্বর কারণে আগামী ইজতেমা স্থগিত করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাবলীগ জামাতের দুই পক্ষকে নিয়ে বসা বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে কবে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে তা নির্দিষ্ট করা হয়নি। পরে দিন ও তারিখ জানিয়ে দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। ধর্মসচিব মো. আনিসুর রহমান জানান, চলতি বছরের বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে দুই গ্রুপের দ্ব›দ্ব নিরসন ও নির্বাচনী বছর হওয়ায় ইজতেমা নিয়ে করণীয় সম্পর্কে বৈঠক করা হয়। বৈঠকে দ্ব›দ্ব নিরসনে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসার মতামত জানতে সরকার ও দুই গ্রুপের সমন্বয়ে ৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। কিছুদিনের মধ্যেই এ কমিটি ভারত সফরে যাবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, তাবলীগ জামাতের দুই গ্রুপের দ্ব›েদ্বর পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনের কারণে ইজতেমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। ফলে জানুয়ারিতে বিশ্ব ইজতেমা নির্ধারিত সময়ে হবে না।

আমরা মনে করি, বিশ্ব ইজতেমা পিছিয়ে দেয়া বা আপাতত স্থগিত করার সিদ্ধান্ত ইতিবাচক, স্বাভাবিক, সমর্থনযোগ্য এবং সময়োপযোগী। কারণ জাতীয় নির্বাচন সময়ের বিচারে দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন এবং তার পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্বাচনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং শান্ত রাখার কাজে ব্যস্ত থাকতে হবে। এর ফলে ইজতেমায় আগত লাখ লাখ দেশি-বিদেশি মুসল্লীর নিরাপত্তা বিধান সম্ভব হবে না। এছাড়া, যেহেতু গত বছর তাবলীগ জামাতের দুই গ্রুপের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা এবং দ্ব›েদ্বর সৃষ্টি হয়েছিল তা নিরসনও জরুরি। তা নাহলে, পুনরায় দ্ব›দ্ব দেখা দিতে পারে। জাতীয় নির্বাচন এবং তাবলীগ জামাতের দুই গ্রুপের দ্ব›দ্ব নিরসন করে ইজতেমা শুরু করাই শ্রেয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, পবিত্র হজের পরেই বিশ্ব ইজতেমা মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় সমাবেশ হিসেবে পরিগণিত। এক্ষেত্রে যদি দ্ব›দ্ব বিরাজমান থাকে, তবে তা সফলভাবে আয়োজনে যেমন ব্যত্যয় ঘটতে পারে, তেমনি মানুষের ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে ব্যাঘাত সৃষ্টি হতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হোক, তা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। বিষয়টি ধর্মপ্রাণ মুসলমান এবং তাবলীগ জামাত সংশ্লিষ্টদের উপলব্ধি করতে হবে। বলা বাহুল্য, ইসলামের প্রচার, প্রসার এবং হেদায়েতের একটি অন্যতম মাধ্যম তাবলীগ জামাত। এ আয়োজন সারা বছরই দেশের বিভিন্ন এলাকায় হয়ে থাকে। বছরে একবার টঙ্গীতে বৃহৎ পরিসরে এ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সুবিস্তৃত এ আয়োজন থেকে সমবেত লাখ লাখ মুসলমানের মাধ্যমে সারাবিশ্বে ইসলামের শান্তির বাণী এবং ঈমান ও আকিদার বিষয়টি ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানানো হয়। যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশ সফলভাবে এই আয়োজন করে আসছে। এটা দেশের ঐতিহ্য এবং তা ধর্মপ্রাণ মানুষ ধরে রেখেছে। এতে কোনো ধরনের মতদ্বৈততা ও অনৈক্য পরিলক্ষিত হয় না। দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ সব ধরনের ভেদাভেদ ভুলে একনিষ্ঠভাবে একমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সমবেত হয়ে বিশ্ব ইজতেমার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। কাজেই দেশের জরুরি পরিস্থিতিতে এই আয়োজন পিছিয়ে দেয়া নিয়ে কোনো ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি করা অনুচিত এবং শোভনীয় হবে না।
এ কথা অনস্বীকার্য, আল্লাহর দ্বীন প্রচারের জন্যই তাবলীগ জামাতের আয়োজন করা হয়। এই প্রচারের কাজটি সুষ্ঠুভাবে করার জন্য অনুকূল পরিবেশ থাকা জরুরি। কোনো ধরনের মতভেদের সৃষ্টি হলে, তাও পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিরসন করা সমীচিন। এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। পাশাপাশি বিশ্ব ইজতেমা স্থগিত ও পিছিয়ে দেয়া নিয়ে কোনো ধরনের ধুম্রজাল বা অপপ্রচার সঠিক হবে না। এ সংশ্লিষ্ট এবং সাধারণ মুসল্লিসহ সকলকেই এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। তাদেরকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এবং নিজেদের মধ্যকার মতভেদের বিষয়টি আমলে নিতে হবে। তাদের বুঝতে হবে জাতীয় নির্বাচন জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর স্বার্থে তাবলীগ জামাত পিছিয়ে দিলে এমন কোনো বড় ব্যাপার বা ক্ষতি হবে না। দেশ ও জাতির স্বার্থে এ জামাত স্থগিত করার সিদ্ধান্ত সাধুবাদযোগ্য।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
dr.harunurrashid ১৭ নভেম্বর, ২০১৮, ৭:১১ এএম says : 0
just can make new committee without any member of present committee and no participation of them in any events will give us good results .Thank you.
Total Reply(0)
Sakib ২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৬:০২ এএম says : 0
কি হল আমাদের
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন