নির্বাচনী আচরণবিধি কেউ মানছে না। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনাও তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। আচরণবিধি অনুযায়ী, ভোটের ২১ দিন আগে কোনো ধরনের প্রচার-প্রচারণা চালানো যাবে না। বাস্তবে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। শোডাউন ও মিছিল চলছে। গাড়ি বহর নিয়েও প্রচারণা চালাতে দেখা যাচ্ছে কাউকে কাউকে। সিলেটের একজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে এমন একটি অভিযোগ উঠেছে। তিনি নৌকার প্রতীকসহ ছবি, তাকে ভোট দেয়ার আহ্বান সম্বলিত পোস্টার গাড়ির সামনে সেঁটে বিরাট এক গাড়ির বহর নিয়ে সিলেটে দুটি মাজার জিয়ারত করেছেন। ওদিকে নির্বাচন কমিশন আচরণবিধি অনুযায়ী রাজধানীসহ সারাদেশে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাঁটানো পোস্টার ব্যানার, বিলবোর্ড ইত্যাদি অপসারণে দু’দফা সময় বেধে দিলেও ওইসব প্রচার-সামগ্রী বেশির ভাগ স্থানে বিরাজমান রয়েছে। প্রথমে ১৪ নভেম্বরের মধ্যে ওগুলো সরিয়ে নেয়ার নির্দেশনা দেয় নির্বাচন কমিশন। পরে সময় ৩ দিন বাড়ানো হয়। ইনকিলাবে প্রকাশিত খবর মোতাবেক, সময়সীমা শেষ হওয়ার পর ওগুলো সরানো হয়নি। নির্বাচন কমিশনের তরফে বলা হয়েছে, সম্ভাব্য কোনো প্রার্থী যদি তার প্রচার উপকরণ অপসারণে ব্যর্থ হন তবে তিনি নির্বাচনী আচরবিধি লংঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন এবং আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তফসিল ঘোষণার পর দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রী ও জমা দেয়ার ক্ষেত্রে বড় দু’দলসহ বিভিন্ন দল মিছিল ও শোভাযাত্রা করে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করেছে। আচরণবিধি ভঙ্গের কাজটি প্রথম করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এরপর করে বিএনপি ও অন্যান্য দল। বড় দু’দলের আচরণবিধি ভঙ্গের কারণে দুটি দু:খজনক ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী দু’জনের সমর্থকদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে এবং তার জেরে দু’জন গাড়ি চাপায় নিহত হয়। পক্ষান্তরে বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে পুলিশ ও বিএনপি কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা এবং দু’পক্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়। পুলিশের যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। এর জেরে মামলা হয়েছে একাধিক এবং তার সূত্রে বহু নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়েছে। গ্রেফতারও করা হয়েছে অনেককে। এই দুটি অনভিপ্রেত ঘটনার জন্য পর্যবেক্ষক মহল নির্বাচন কমিশনের সতর্কতার অভাব এবং একপেশে নীতি ও আচরণকে দায়ী করেছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যখন আচরণবিধি বেতোয়াক্কা করেছে তখন নির্বাচন কমিশন নিরব থেকেছে। অন্যদিকে বিএনপির নেতাকর্মীরা যখন আচরণবিধি ভঙ্গ করেছে তখন তার টনক নড়েছে। আইনশৃংখলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে আচরনবিধি কার্যকর করতে। আইনশৃংখলা বাহিনী নির্দেশ প্রতিপালন করতে গিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে। আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতির নিরিখে সংযম প্রদর্শন না করে মারমুখী আচরণ করেছে। ফলে সংঘর্ষ, মামলা- মোকদ্দমা ও গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে।
নির্বাচনী আচরণবিধি কার্যকর করা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। পাশাপাশি আচরণ বিধি মান্য করা রাজনৈতিক দল ও সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য। নির্বাচনী আচরণবিধি কার্যকর করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করতে হবে। নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত তার নিরপেক্ষতা প্রদর্শন করতে পারেনি। শুরু থেকেই যদি আচরণবিধি কার্যকর করার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হতো তাহলে আচরণবিধি লংঘনের ঘটনা এভাবে ঘটতে পারতো না। আরো নানা ক্ষেত্রে আচরণ বিধি লংঘনের ঘটনা ঘটছে। নির্বাচন কমিশন তা দেখেও দেখছেনা। এখানেও তার নিরপেক্ষতার লংঘনই দৃশ্যমান, প্রতীয়মান হচ্ছে। এখন ভোটের প্রায় দেড়মাস বাকী। নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দের পর নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শুরু হবে। তখন আচরণবিধি লংঘনের আশংকা বাড়বে। নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ করার জন্য নির্বাচনী আচরণবিধি প্রনয়ণ করা হয়েছে। আচরণবিধি লংঘনের ঘটনা যদি আগামীতে বাড়ে সেক্ষেত্রে অপ্রীতিকর ঘটনার সংখ্যাও বাড়বে এবং এতে নির্বাচনের পরিবেশ ব্যহত ও বিঘ্নিত হবে। আশংকার এই প্রেক্ষাপটে আমরা আশা করবো, নির্বাচন কমিশন আচরণবিধি কার্যকর করার ক্ষেত্রে শক্ত ভূমিকা নেবে এবং সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকবে। আমরা এও আশা করবো, রাজনৈতিক দল ও তাদের নেতাকর্মীরা নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘন থেকে সর্বাবস্থায় বিরত থাকবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন