শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব উদ্বেগজনক

| প্রকাশের সময় : ২০ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

দেশের তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব ২০১০ সালে থেকে ২০১৭ সাল নাগাদ দ্বিগুন হয়ে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৮ শতাংশ। অন্যদিকে উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্ব দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৭ শতাংশ, যা এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় ২৮টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয়। এই উদ্বেগজনক তথ্যচিত্র উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ‘এশিয়া-প্যাসিফিক এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সোস্যাল আউটলুক-২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনে। প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, শিক্ষিতের স্তরক্রম অনুযায়ী বেকারত্বের হার বর্ধমান। শিক্ষার প্রাথমিক স্তর পার হয়নি, এমন মানুষের মধ্যে বেকারত্বের হার ১ দশমিক ৮ শতাংশ। প্রাথমিক স্তর শেষ করাদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। যারা মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষিত, তাদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৮ শতাংশ। আর উচ্চ শিক্ষতদের মধ্যে এ হার ১০ দশমিক ৭ শতাংশ। অর্থাৎ যার শিক্ষা যত বেশী তার বেকারত্বের আশংকাও তত বেশী। অথচ উল্টোটিই হওয়ার কথা। বুঝাই যায়, শিক্ষা বেকারত্ব মোচন বা কর্মসংস্থান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখছে না। বেকারত্বের বোঝা বরঞ্চ বাড়াচ্ছে। দেশ উন্নয়নশীল দেশের পথে বলে সরকারি প্রচারণা আছে। উন্নত দেশের স্বপ্নও দেখানো হচ্ছে। এই প্রচারণা ও স্বপ্ন ছড়ানোর প্রেক্ষিতে বেকারত্বের হার কমার কথা, বাড়ার কথা নয়। যখন বলা হয়, দেশ উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে, তখন সঙ্গতকারণেই আশা করা যায়, কর্মসংস্থানও বাড়ছে। কিন্তু বাস্তবে বাড়ছে না। অর্থনৈতিক উচ্চ প্রবৃদ্ধির সঙ্গে বেকারত্বের এই বর্ধিত হার সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বিশেষজ্ঞরা অনেক আগেই বলেছেন, এ প্রবৃদ্ধি কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি। কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি টেকসই উন্নয়নের অনুকূল নয়।
নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করলে দেখা যায়, সরকারি কর্মসংস্থানের হার এখানে সবচেয়ে কম-মাত্র ৩ দশমিক ২ শতাংশ। এ থেকে স্পষ্টতই বোঝা যায়, বেসরকারি খাতই কর্মসংস্থানের মূল ভরসা। সরকারি খাতে কর্মসংস্থান বাড়ছে না। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি সরকারি বিনিয়োগ হলেও তা কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে পারছে না। বেসরকারি খাত কি পারছে? বেসরকারি খাতে বিনিয়োগপ্রবাহ অত্যন্ত মন্থর। ফলে যথেষ্ট সংখ্যক শিল্প-কারখানা গড়ে উঠছে না। ব্যবসা-বাণিজ্যের বিস্তার ঘটছে না। বিনিয়োগ না হলে, শিল্প ও ব্যবসার প্রসার না হলে কর্মসংস্থান বাড়ার কোনো কারণ নেই। সরকারি খাতে কর্মসংস্থান বাড়ার যতটুকু সুযোগ ও সম্ভবনা আছে, তা যথাযথভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে না। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বহু শূন্যপদে রয়েছে, সেসব শূণ্যপদে লোক নেয়া হচ্ছে না। নতুন নতুন পদ সৃষ্টি করলেও কিছু নিয়োগ হতে পারে। কিন্তু নতুন পদও সৃষ্টি করা হচ্ছে না। সরকারের তরফে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল, দেশের প্রতি বাড়িতে একজন করে বেকারের চাকরির সংস্থান করা হবে। সে প্রতিশ্রুতি কথার কথাই হয়ে আছে। চাকরির বিকল্প হিসাবে আত্মকর্মসংস্থানের কথা বলা হলেও আত্মকর্মসংস্থানের কার্যক্রমও জোরদার করা হয়নি। সেখানে পুঁজি, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সহযোগিতা অনেকটাই উপেক্ষা ও অবহেলার শিকার। শুধু উদ্যম বা ইচ্ছা থাকলেই হয়না, সেই উদ্যমে উদ্যোগে পরিণত করতে পারলেই সুফল আসতে পারে।
শিক্ষাকে এক সময় কর্মসংস্থানের প্রধান উপায় হিসাবে গণ্য করা হতো। সরকারি চাকরিই ছিল শিক্ষিতদের লক্ষ্য। বাস্তবে সরকারের পক্ষে সকল শিক্ষিতের চাকরি দেয়া সম্ভব নয়। বেসরকারি খাত এখন চাকরির জন্য প্রধান অবলম্বন হয়ে দাঁড়ালেও সেখানে তাদের চাকরির সুযোগ খুব একটা বাড়ছেনা। সেখানে বিশেষায়িত শিক্ষা ও উপযুক্ত প্রশিক্ষিত অর্থাৎ দক্ষ লোকের চাকরির যে সুযোগ আছে তাও শিক্ষণ-প্রশিক্ষণের অভাবে অনেকের পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের বাজেট ডকুমেন্টে দেখা যায়, ২ লাখ বিদেশী, যাদের মধ্যে ভারতীয়দের সংখ্যাই বেশি, দেশের মার্কেটিং ও ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে ম্যানেজার, সুপারভাইজারের মতো উচ্চপদে চাকরি করছে এবং প্রতি বছর ৫ বিলিয়ন ডলার নিজ নিজ দেশে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশে শিক্ষিত লোকের অভাব নেই। বিশেষায়িত, কারিগরি ও পেশাভিত্তিক শিক্ষিত এবং দক্ষ লোকের যোগান নিশ্চিত থাকলে এত বিদেশী লোকের চাকরি পাওয়া সম্ভব হতো না। উপযুক্ত শিক্ষণ-প্রশিক্ষণের সঙ্গে দক্ষতার সংযোগ ঘটালে আমরা প্রয়োজনীয় ও কাঙ্খিত লোকবল পেতে পারি। এদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। অন্যদিকে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, যাতে বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মসংস্থান বাড়ে। একই সঙ্গে আত্মকর্মসংস্থানের প্রতি আরো নজর দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিপুল সংখ্যক মানুষকে বেকার রেখে দেশের প্রত্যাশিত উন্নয়ন তরান্বিত করা সম্ভব নয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন